এক বছর পর ঢাকায় মেয়েদের হকি উৎসব

মওলানা হকি স্টেডিয়ামে আজ যেন নারী হকি খেলোয়াড়দের মেলা বসেছিলছবি: শামসুল হক

গত বছরের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের প্রয়াত দুই সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ও শামসুল বারীর নামে মেয়েদের ৫ ম্যাচের প্রীতি হকি সিরিজ হয়েছিল ঢাকায়। ঠিক এক বছর পর স্টিক-বল নিয়ে মাঠে নামার সুযোগ পাচ্ছেন হকির মেয়েরা। ‘ডেভেলপমেন্ট কাপ’ নাম নিয়ে কাল সোমবার মওলানা ভাসানী স্টেডিয়ামে শুরু হচ্ছে মেয়েদের হকি টুর্নামেন্ট।

বিকেএসপি, নড়াইল, যশোর, ঝিনাইদহ, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, পুলিশসহ ১৮টি জেলা ও সংস্থার খেলোয়াড় এসেছেন এই টুর্নামেন্টে। আজ সকালে মওলানা ভাসানী স্টেডিয়ামে কোচ তারিকুজ্জামানের অধীন মেয়েদের ট্রায়াল নিয়ে গড়া হয়েছে চারটি দল। নামও ঠিক হয়ে গেছে চার দলের—বাংলাদেশ হকি ফেডারেশন লাল, নীল, সবুজ ও হলুদ দল।

সারা দেশ থেকে আসা নারী জকি খেলোয়াড়দের ট্রায়াল ছিল আজ
ছবি: শামসুল হক

মেয়েদের উপস্থিতিতে মওলানা ভাসানী স্টেডিয়াম ৯ মাসের নীরবতা কাটিয়ে কিছুটা সরগরম হয়ে উঠেছে। মেয়েদের মধ্যে একটা উৎসবের আমেজ তৈরি হয়েছে। এমনিতে হকি খেলতে আগ্রহী অনেক মেয়েই আছেন দেশে। কিন্তু খেলার সুযোগ একেবারেই সীমিত। নানা সীমাবদ্ধতায় হকি ফেডারেশন পারছে না বেশি বেশি টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে।

অবশেষে এক বছর পর একটা টুর্নামেন্ট পেয়ে মেয়েরা খুশি। অনেকের কাছেই এমন টুর্নামেন্ট খেলার সুযোগ এই প্রথম। এমনকি অনেকে এই প্রথম এসেছেন ঢাকা শহরে। ফলে তাঁদের কাছে টুর্নামেন্ট ‘খেলা এবং ঢাকা দেখা’ দুটিই হবে।

অনুশীলনের ফাঁকে একটু জিরিয়ে নিচ্ছেন নারী হকির ট্রায়াল দিতে আসা গোলকিপাররা
ছবি: শামসুল হক

মওলানা ভাসানী স্টেডিয়ামে ৪ দলে ১৬ জন করে ৬৪ জন মেয়ের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখানে থেকেই তাঁরা ম্যাচ খেলবেন। কাল প্রথম দিনে লাল ও নীল দল মুখোমুখি হবে বেলা সাড়ে তিনটায়। সব দল নিজেদের মধ্যে একবার করে খেলার পর অঘোষিত দুটি সেমিফাইনাল। প্রথম সেমিফাইনালে খেলবে প্রথম ও চতুর্থ দল, দ্বিতীয় সেমিফাইনাল হবে দ্বিতীয় ও তৃতীয় দলের মধ্যে। ২১ সেপ্টেম্বর অঘোষিত ফাইনাল।

এই টুর্নামেন্টের লক্ষ্য শুধু মেয়েদের খেলার সুযোগ তৈরি করে দেওয়াই নয়, এখান থেকে মেয়েদের অনূর্ধ্ব-২১ এশিয়ান হকি ফেডারেশন কাপের জন্য বাংলাদেশ দল গড়া হবে। আগামী মাসে টুর্নামেন্টটি হবে কাজাখস্তানে।

আজ হকি ফেডারেশনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে হকি ফেডারেশনের সহসভাপতি আবদুর রশিদ বলেন, ‘সম্প্রতি এশিয়ান গেমসের বাছাইয়ে সুযোগ থাকলেও আমরা মেয়েদের পাঠাতে পারিনি। কিন্তু সামনে সব টুর্নামেন্টে পাঠাতে চাই। কারণ, মেয়েদের খেলার সুযোগ না দিলে তারা আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। তাদের আগ্রহটা ধরে রাখতেই এমন আয়োজন করা হচ্ছে।’

মওলানা ভাসানী হকি স্টেডিয়ামে নারী হকি খেলোয়াড়েরা
ছবি: শামসুল হক

হকি ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইউসুফ দিলেন একটা সুখবর, হকি ফেডারেশনের সভাপতি বিমানবাহিনীর প্রধান এই টুর্নামেন্ট দেখেই বিমানবাহিনীর জন্য একটা মহিলা দল গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন। কাজেই টুর্নামেন্টটা খেললে চাকরির সুযোগও পেতে পারেন মেয়েরা। ফলে এটাকে কর্মসংস্থানের টুর্নামেন্টেও বলা যায়।

টুর্নামেন্টের পৃষ্ঠপোষক ওয়ালটনের কর্মকর্তা ইকবাল বিন আনোয়ার বলেন, ‘মহিলা হকির সঙ্গে আমরা ছিলাম, আগামী দিনেও থাকব। আমরা আশাবাদী, বাংলাদেশের হকির অবস্থা ভবিষ্যতে আরও ভালো হবে।’