প্রতিবেশীর গ্যারাজে পড়ে ছিল অলিম্পিকে জেতা সোনার পদক, এখন নিলামে
ধরুন, অলিম্পিকে সোনার পদক জিতলেন। এখন পদকটি যত্ন করে রাখতে জুতসই একটি জায়গা তো লাগবে। অলিম্পিকে জেতা সোনার পদক তো আর যেনতেন জায়গা ফেলে রাখা যায় না। বিশ্বের অনেক অ্যাথলেটেরই সে জন্য আয়োজনের কমতি থাকে না। কিন্তু জর্জ ফোরম্যান অন্য ধাতে গড়া মানুষ। বক্সিংয়ে প্রয়াত এই কিংবদন্তির মনে হয়েছিল, অলিম্পিকে জেতা সোনার পদক প্রতিবেশীর গ্যারেজে ফেলে রাখা যায়!
অবিশ্বাস্য এ ঘটনাই সামনে এনেছে ইউরোপের কিছু সংবাদমাধ্যম। ১৯৬৮ মেক্সিকো সিটি অলিম্পিকের বক্সিংয়ে হেভিওয়েট ইভেন্টে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের জোনাস সেপুলিসকে হারিয়ে সোনা জেতেন ফোরম্যান। এরপর দীর্ঘ কয়েক দশক এ পদকের কোনো হদিস ছিল না।
স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম ‘মার্কা’ জানিয়েছে, কয়েক বছর আগে পদকটি আবিষ্কার করা হয় ফোরম্যানের প্রতিবেশীর বাসার গ্যারেজে। পদকটি সেখান থেকে গিয়ে পড়েছে নিলামকারী প্রতিষ্ঠান লেল্যান্ড অকশনসের কাছে। যুক্তরাষ্ট্রের এ প্রতিষ্ঠান পদকটি নিলামে তুলেছে। ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে এ নিলাম।
তবে স্পেনের আরেক সংবাদমাধ্যম ‘এএস’ জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে গ্যারাজের মালিক গ্যারাজ পরিস্কার করতে গিয়ে ফোরম্যানের বিভিন্ন জিনিসপত্রের পাশাপাশি অলিম্পিক পদকটিও দেখতে পান।
‘মার্কা’ জানিয়েছে, তিনজন ক্রেতা এরই মধ্যে পদকটি কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ দাম উঠেছে ৩ হাজার ৩২৮ ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৪ লাখ টাকার কিছু বেশি)। লেল্যান্ড অকশনসের আশা, এ দকের দাম আরও বাড়বে।
ফোরম্যান বক্সিং ইতিহাসের কিংবদন্তি। দুবারের হেভিওয়েট বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। ‘বিগ জর্জ’ নামে খ্যাতি পাওয়া সাবেক এই বক্সার ১৯৬৭ থেকে ১৯৯৭ পর্যন্ত রিংয়ে নেমেছেন। ১৯৭৪ সালে কিনশাসায় বিখ্যাত ‘রাম্বল ইন দ্য জাঙ্গল’ ম্যাচে মোহাম্মদ আলীর বিপক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হারেন। ‘দ্য ইন্টারন্যাশনাল বক্সিং রিসার্চ’–এর বিবেচনায় ফোরম্যান সর্বকালের সেরা বক্সারদের তালিকায় অষ্টম। চলতি বছর মার্চে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রের এই ক্রীড়াবিদ। সত্তর দশকে যুক্তরাষ্ট্রের হিউস্টনে বসবাস করতেন ফোরম্যান।
নিলামকারী প্রতিষ্ঠানটির বরাত দিয়ে ‘মার্কা’ ও স্পেনের আরেক সংবাদমাধ্যম ‘এএস’ জানিয়েছে, সত্তর দশকের শেষ দিকে ফোরম্যান নিজের কিছু জিনিসপত্র প্রতিবেশীকে তাঁর বাসায় রাখার অনুরোধ করেছিলেন। সেই প্রতিবেশী আপত্তি করেননি। কয়েক বছর আগে সেই প্রতিবেশী নারীর মেয়ে বাসার গ্যারেজ থেকে ফোরম্যানের রেখে যাওয়া সেসব জিনিসপত্র আবিষ্কার করেন। এর মধ্যে ছিল তাঁর দুটি পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, কিছু ট্রফি ও সোনার সেই পদক।
নিউ জার্সিতে পদকটির প্রদর্শনস্থলে লেল্যান্ড অকশনসের পক্ষ থেকে লেখা হয়, ‘সোনার পদকটি গিল্ট রুপা দিয়ে তৈরি (খাঁটি রুপার ওপর পাতলা সোনার প্রলেপ দেওয়া)। এটি বহু দশক ধরে একটি বাক্সে সংরক্ষিত থাকার কারণে এর অবস্থা নিখুঁত ছিল না। তাই এর আসল রূপ প্রকাশ করতে এটি পরিষ্কার করা হয়েছে। আমরা মনে করি, এটি ১৯৬৮ সালে মেক্সিকো সিটি অলিম্পিক গেমসে জর্জ ফোরম্যানের সোনার পদক হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তবে মূল ফলক বা তার ফটোকপি না থাকলে আমরা এটি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি না।’