এসএসসি পরীক্ষার হল থেকে এসে সোনা জিতলেন লিবিয়া

সকালে নড়াইলে পরীক্ষায় অংশ নিয়ে বিকেলে ঢাকায় এসে সামার অ্যাথলেটিকসে অংশ নিয়েছেন লিবিয়া খাতুনছবি: সংগৃহীত

ট্র্যাকসুট পরে নড়াইলের লক্ষ্মীপাশা উচ্চবিদ্যালয়ে আজ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে ঢুকেছিলেন লিবিয়া খাতুন। এমন পোশাক পরে পরীক্ষার হলে ঢোকায় শিক্ষকেরা বেশ অবাক। পরীক্ষার হলে দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক জানতে চেয়েছিলেন, ‘তোমার কি স্কুলের পোশাক নেই?’ উত্তরে লিবিয়া বলেন, ‘স্যার, ঢাকায় জাতীয় সামার অ্যাথলেটিকস চলছে। আমি সেখানে অংশ নিচ্ছি। গেমস চলার মাঝে বাড়িতে এসে পরীক্ষা দিচ্ছি।’

আজ সকালে মাধ্যমিকের পদার্থ বিজ্ঞান পরীক্ষা শুরু হয় বেলা ১১টায়। সাড়ে ১২টায় পরীক্ষা শেষকরেই নড়াইল থেকে ঢাকাগামী বাসে ওঠেন লোহাগড়া উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্রী লিবিয়া। এরপর বিকেলে পৌঁছে যান বনানী আর্মি স্টেডিয়ামে। অংশ নেন মেয়েদের ৪x১০০ মিটার রিলেতে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর হয়ে জেতেন সোনার পদক।

সামার অ্যাথলেটিকসে রিলেতে সোনা জয়ী লিবিয়া খাতুন
ছবি: সংগৃহীত

সোনার মেয়ে লিবিয়া মাধ্যমিক পরীক্ষার মধ্যেই সামার অ্যাথলেটিকসের অংশ নিচ্ছেন। গতকাল মেয়েদের ৪০০ মিটার হার্ডলসে রেকর্ড গড়ে জিতেছেন সোনা। এই ইভেন্টে তিনি সময় নিয়েছেন ১ মিনিট ০৪.৭০ সেকেন্ড। এরপর আজ রিলেতেও সোনা জিতেছেন।

সোনা জয়ের পর উচ্ছ্বসিত লিবিয়া বলছিলেন, ‘আমি ২২ সেপ্টেম্বর পরীক্ষা দিয়ে ঢাকায় এসেছি। এরপর কাল আবার বাড়ি ফিরে গিয়েছি। এসে সোনা জিতেছি।’ পরীক্ষা শেষে একটু দুশ্চিন্তায় ছিলেন লিবিয়া, ‘পরীক্ষা দিয়েই ঢাকার গাড়িতে উঠেছি। গুলিস্তানে এসে পৌঁছাই সাড়ে ৩টায়। গুলিস্তান থেকে অল্প যানজট পেয়েছিলাম। তখন একটু দুশ্চিন্তা হচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত স্টেডিয়ামে পৌঁছে ভালোভাবেই দৌড়ে অংশ নিই। সোনা জয়ের পর স্বস্তি ফেরে মনে।’

পদ্মা সেতু তৈরি হওয়ার কারণে এভাবে সাহস করে পরীক্ষা দিয়ে ঢাকায় এসে খেলতে পেরেছেন বলে জানালেন লিবিয়া, ‘পদ্মা সেতু না হলে এভাবে গিয়ে পরীক্ষা দেওয়া হতো না। হয়তো আমার খেলাতেও অংশ নেওয়া হতো না। ঝুঁকি নিয়ে হলেও শেষ পর্যন্ত সামার অ্যাথলেটিকসে অংশ নিতে পেরেছি বলে আমি খুশি।’

লিবিয়া চুক্তিভিত্তিক চাকরি করছেন সেনাবাহিনীতে। সেই ২০১৪ সাল থেকে জাতীয় পর্যায়ে অংশ নিচ্ছেন। কিন্তু এবারই প্রথম ব্যক্তিগত সোনার পদক জিতেছেন। লিবিয়ার কোচ আজহারুল ইসলাম এই সাফল্যের পেছনে সেনাবাহিনীর নিয়মিত অনুশীলনের কথা উল্লেখ করেন, ‘সেনাবাহিনীতে সে যোগ দিয়েছে বাংলাদেশ গেমসের আগে। ও সম্ভাবনাময় অ্যাথলেট। ওর পারফরম্যান্স দেখে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়েছি। আশা করি ভবিষ্যতে সে স্থায়ী হয়ে যাবে। গত জানুয়ারি মাসে জাতীয় অ্যাথলেটিকসে ৪x৪০০ মিটারে সোনা জিতেছিল। তখনই আমরা তাকে নতুন ইভেন্টে খেলানোর প্রস্তুতি নিয়েছি। এবার সে রেকর্ড গড়ে সোনা জিতে সেনাবাহিনীর সম্মান বাড়িয়েছে।’