টেন্ডুলকার বাংলায় বললেন ‘কেমন আছ মারিয়া?’

বাংলাদেশের নারী ফুটবলার মারিয়া মান্দাকে টেন্ডুলকার বাংলায় জিজ্ঞেস করলেন, ‘কেমন আছ মারিয়া?’ফাইল ছবি

দুই দশক ধরে ইউনিসেফের শুভেচ্ছাদূত হিসেবে কাজ করছেন শচীন টেন্ডুলকার। ভারতের এই ক্রিকেট কিংবদন্তির খেলা কখনো মাঠে বসে দেখার সুযোগ হয়নি বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের মিডফিল্ডার মারিয়া মান্দার। কিন্তু মেয়েদের অনূর্ধ্ব–১৯ সাফ চ্যাম্পিয়ন দলের অধিনায়ক মারিয়া এবার সরাসরি ভার্চ্যুয়াল আড্ডা দিলেন টেন্ডুলকারের সঙ্গে। সেই সুযোগটা করে দিয়েছে ইউনিসেফ।

জাতিসংঘের জরুরি শিশু তহবিলের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের শুভেচ্ছাদূত হিসেবে এ বছর দুই দশক পূর্ণ হয়েছে টেন্ডুলকারের। ১২ আগস্ট ছিল আন্তর্জাতিক যুব দিবস। আর এই দিনেই ইউনিসেফের প্রতিনিধি হিসেবে টেন্ডুলকার দক্ষিণ এশিয়ার দুজন তরুণ ফুটবলারের সঙ্গে আড্ডা দেন। ভার্চ্যুয়াল এই আড্ডায় মারিয়ার সঙ্গী ছিলেন ভারতীয় ফুটবলার অংশু কশ্যপ।

আড্ডার শুরুতেই সবাই নিজেদের পরিচয় দেন। টেন্ডুলকার প্রথমে বলেন, ‘মাই নেম ইজ শচীন টেন্ডুলকার।’ এরপর ভারতীয় ফুটবলার অংশু হিন্দিতে বলেন, ‘মেরা নাম অংশু কশ্যপ।’ মারিয়া কিন্তু বাংলাতেই কথা বলেন আড্ডার পুরোটা সময়। তিনি শুরুতেই নিজের পরিচয় দিয়ে বলেন, ‘আমার নাম মারিয়া মান্দা।’ এটা শোনার পরই টেন্ডুলকার মারিয়াকে চমকে দিয়ে একগাল হেসে বাংলায় বলেন, ‘কেমন আছ মারিয়া?’ উত্তরে মারিয়া বলেন, ‘আমি ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন?’ উত্তরে টেন্ডুলকার বলেন, ‘ভালো, একদম ভালো আছি। তুমি সত্যিকারের চ্যাম্পিয়ন।’

একজন খেলোয়াড়ের মাঠে সাফল্য পাওয়ার প্রধান শর্তই হলো ফিট থাকা। কীভাবে চাপ কাটিয়ে শারীরিক ও মানসিকভাবে ফিট থাকা যায়, এই আড্ডায় সেটার উপায় বলেছেন টেন্ডুলকার। মারিয়া ও অংশুর উদ্দেশে বলেন, ‘অতীতে তোমাদের সঙ্গে যা ঘটেছে, সেটা ফিরে পাওয়া বা বদলানো সম্ভব নয়। তা ছাড়া সামনে কী হতে যাচ্ছে, সেটাও আমরা জানি না। তবে এই মুহূর্তে যা ঘটছে; মানে যেটাকে আমরা বর্তমান বলে থাকি, এর ওপর জোর দিতে হবে।’

করোনার সময়ে মারিয়া কীভাবে নিজেকে ফিট রেখেছিলেন, সেটা জানতে চান টেন্ডুলকার। আড্ডায় অংশ নেওয়া দুজনের উদ্দেশে এরপর বলেন, ‘করোনার কারণে গত দুই বছরে তোমাদের সামনে অনেক ঝড়ঝাপটা এসেছে। এ সময় সবাইকে অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। ওই সময়ে তোমরা কীভাবে নিজেদের শারীরিক ও মানসিকভাবে ফিট রেখেছ?’

করোনা শুরু হতেই বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনে আবাসিক ক্যাম্প বন্ধ করে মেয়েদের যাঁর যাঁর বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। ওই সময় ময়মনসিংহে চলে যান মারিয়া। টেন্ডুলকারকে সেই সময়ের বর্ণনা দিয়ে মারিয়া বলেন, ‘করোনার সময়ে দেশের অবস্থা খুব একটা ভালো ছিল না। ক্যাম্প বাতিল করে আমাদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তবে নিজেদের ফিট রাখতে ফেডারেশন (বাফুফে) আমাদের অনুশীলন সূচি পাঠায়। সেই সূচি মেনে আমরা অনুশীলন চালিয়ে গেছি। সপ্তাহে এক দিন কোচদের সঙ্গে জুম মিটিং করেছি।’

মারিয়া মান্দা
ফাইল ছবি

নিজেদের চাপমুক্ত রাখতে কী করেছেন সেটাও জানান এই মিডফিল্ডার, ‘আমরা যেভাবে অনুশীলন করতাম, সেটার ভিডিও কোচিং স্টাফকে পাঠাতে হতো। বাকিটা সময় পরিবারের সঙ্গে থেকে মানসিকভাবে চাপমুক্ত থাকতাম।’

সব শোনার পর ফিটনেস ধরে রাখতে মারিয়া ও অংশুকে একটা উপায় শিখিয়ে দেন টেন্ডুলকার, ‘শরীরের ভারসাম্য ঠিক রাখার সঙ্গে খাদ্যাভ্যাসের সম্পর্ক আছে। তোমরা যা ইচ্ছা খেতে পারো, কিন্তু যখন ইচ্ছা তখনই খেতে পারো না। তোমাদের স্বাস্থ্য যদি ভালো না থাকে, তাহলে কোনো কিছু করেই সুখী হতে পারবে না। সে কারণে সুস্থতার মাত্রা সম্পর্কে সব সময় সতর্ক থাকবে।’

বিদায় নেওয়ার আগে টেন্ডুলকার মারিয়া ও অংশু দুজনকেই শুভকামনা জানান। যেকোনো সময় যেকোনো পরামর্শ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন টেন্ডুলকার , ‘আমার সঙ্গে কথা বলায় তোমাদের অনেক ধন্যবাদ। আমি সব সময় তোমাদের সমর্থন দেব। তোমরা ও তোমাদের পরিবারের জন্য রইল শুভকামনা।’