অলিম্পিকে খেলার অপেক্ষা বাড়ল শুটার রবিউলের

শুটার রবিউল ইসলামসংগৃহীত

আক্ষেপে পুড়ছেন শুটার রবিউল ইসলাম। প্যারিস অলিম্পিকে খেলার সরাসরি যোগ্যতা অর্জনের কাছে গিয়েও যে ফিরে আসতে হয়েছে! মাত্র ০.৩ স্কোরের জন্য যেতে পারলেন না এশিয়ান শুটিং চ্যাম্পিয়নশিপে ১০ মিটার এয়ার রাইফেলের ফাইনালে। ফাইনালে গেলে অলিম্পিকের কোটা প্লেস পাওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল ছিল তাঁর।

প্রতিযোগিতার বাছাইপর্বে দ্বিতীয়, তৃতীয়, ষষ্ঠ ও দশম হওয়া চার শুটারের স্কোর বিবেচ্য হবে না। তাঁরা নিজ দেশের কোটার বাইরে অতিরিক্ত হিসেবে অংশ নিয়েছেন, খেলতে পারেননি ফাইনালেও। ওই চারজনকে বাদ দিয়ে প্রথম আটজন খেলেছেন ফাইনালে। রবিউলের দুর্ভাগ্য, চূড়ান্ত তালিকায় ১৩তম স্থানে থাকা এই শুটার ৬২৮ স্কোর করে শেষ পর্যন্ত হতে পেরেছেন নবম। অষ্টম হওয়া ইন্দোনেশিয়ার শুটার গুস্তাফিয়ান ফাথুরের স্কোর ৬২৮.৩। ফাইনালে চতুর্থ হয়ে কোটা প্লেস পেয়েছেন গুস্তাফিয়ান ফাথুর। রবিউলের আক্ষেপ তাই বেড়ে গেছে অনেক।

বাংলাদেশ শুটিং দলের স্বপ্নই ছিল এবার এশিয়ান শুটিং চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে ১০ মিটার এয়ার রাইফেলে সরাসরি অলিম্পিকের কোটা প্লেস পাওয়া। আগের দুই দিন পিস্তল ও মিশ্র ইভেন্টে বাংলাদেশের শুটারদের অবস্থান ছিল পেছনের দিকে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি পদক এনে দেওয়া শুটিং কয়েক বছর ধরেই ধুঁকছে। একসময় দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে নিয়মিত সোনা জিতলেও সর্বশেষ আসরে সেটিও আসেনি।

এবার এশীয় স্তরে এয়ার রাইফেলে অলিম্পিক কোটা প্লেসের সম্ভাবনা জাগিয়েও হতাশ হতে হয়েছে রবিউলকে। বাছাইয়ের শেষ সিরিজে রবিউল করেন ১০৩, ইন্দোনেশিয়ার শুটার ১০৫.৫। শেষ সিরিজে আরেকটু ভালো করলেই জাকার্তা থেকে হয়তো খুশিমনেই ফিরতেন পাবনার ছেলে। এই প্রতিযোগিতায় রবিউলের সতীর্থ জিদান হোসেন হয়েছেন ১৭তম ও অর্ণব শাহরার ২৮তম। মেয়েদের বিভাগে শায়রা আরেফিন ১৩তম, চৌধুরী জাফিরা ৬২৫.১ স্কোর গড়ে ২২তম ও কামরুননাহার কলি ২৯তম।

আরও পড়ুন

এত দিন ওয়াইল্ড কার্ডের সৌজন্যে (পিছিয়ে পড়া দেশগুলোর খেলোয়াড়দের জন্য বিশেষ সুযোগ) অলিম্পিক গেমসে খেলার সুযোগ পেয়েছেন বাংলাদেশের শুটাররা। ওয়াইল্ড কার্ড নিয়ে ১৯৯২ সালে প্রথমবার বাংলাদেশি কোনো শুটার হিসেবে বার্সেলোনা অলিম্পিকে যান কাজী শাহানা পারভীন। বাংলাদেশের প্রথম নারী অলিম্পিয়ানও তিনিই। সেই থেকে ২০২১ টোকিও অলিম্পিক পর্যন্ত সব অলিম্পিকেই বাংলাদেশের একজন করে শুটার গেছেন ওয়াইল্ড কার্ড নিয়ে। ১৯৯৬ সালে সাইফুল আলম (রিংকি), ২০০০ সালে সাবরিনা সুলতানা, ২০০৪ সালে আসিফ হোসেন, ২০০৮ সালে ইমাম হোসেন, ২০১২ সালে শারমিন আক্তার (রত্না), ২০১৬ ও ২০২১ সালের অলিম্পিকে গেছেন আবদুল্লাহ হেল বাকি।

এশিয়ান শুটিং চ্যাম্পিয়নশিপে ১০ মিনিট এয়ার রাইফেলে দারুণ লড়েও সেরা আটে যেতে পারেননি রবিউল ইসলাম
সংগৃহীত

এবার কোটা প্লেস পাওয়ার সুযোগ এখনো আছে। সেটা না পেলে শেষ ভরসা ওয়াইল্ড কার্ড। ওয়াইল্ড কার্ড চেয়ে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন ছয় খেলোয়াড়ের হয়ে আবেদন করেছে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির কাছে, তাতে আছে দুই শুটার রবিউল ও শায়রা আরেফিনের নামও। সঙ্গে বক্সার সেলিম হোসেন, গলফার সিদ্দিকুর রহমান, জামাল হোসেন ও শুটার হাকিম আহমেদের জন্যও আবেদন করা হয়েছে।

বাংলাদেশের একমাত্র ক্রীড়াবিদ হিসেবে এখন পর্যন্ত আর্চার রোমান সানাই শুধু অলিম্পিকে (২০২১ টোকিও) সরাসরি খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছেন। এর বাইরে গলফার সিদ্দিকুর রহমান ২০১৬ রিও অলিম্পিকে খেলেছেন র‍্যাঙ্কিংয়ে সেরা ৬০-এ থাকায়।

আরও পড়ুন

সরাসরি অলিম্পিকে যাওয়ার একটা সুযোগ হাতছাড়া হওয়ায় আক্ষেপের শেষ নেই রবিউলের। বাংলাদেশ শুটিং দলের সহকারী কোচ গোলাম মহিউদ্দিন জাকার্তা থেকে প্রথম আলোকে সেটাই বলেছেন, ‘রবিউল ফাইনালে গেলে পদক আর কোটা প্লেস—দুটিই প্রায় নিশ্চিত ধরে রেখেছিলাম আমরা। কিন্তু মাত্র ০.৩ পয়েন্টের জন্য ফাইনালে যেতে পারেনি। রবিউল খুব ভেঙে পড়েছে।’

২০১২ অলিম্পিকের আগে শাহরিয়ার চন্দন প্রোন ইভেন্টে কোটা প্লেসের সম্ভাবনা জাগিয়েও পারেননি। সেই উদাহরণ টেনে সাবেক শুটার ও ২০১২ অলিম্পিকে খেলা শারমিন আক্তার তাকাতে চান সামনে, ‘চন্দন, রবিউলরা স্বপ্ন জাগিয়েও পারেনি। এতে বোঝা যাচ্ছে, সরাসরি অলিম্পিকের টিকিট পাওয়ার কাছাকাছি চলে এসেছি আমরা। আরেকটু চেষ্টা করতে হবে। আশা করি সামনে হয়ে যাবে।’

তবে সাবেক শুটার সাইফুল আলম বলেছেন, ‘চার-পাঁচজন শুটার দিয়ে ভালো কিছু আশা করা বাড়াবাড়ি। আরও ভালো মানের শুটার তৈরি করা জরুরি। নইলে অলিম্পিকে সরাসরি খেলার যোগ্যতা অর্জন কঠিন বাংলাদেশের শুটারদের জন্য।’

আরও পড়ুন