৭টি অলিম্পিক দেখা ‘সুপারফ্যান’ ভিভিয়ান

অলিম্পিকের ‘সুপারফ্যান’ ভিভিয়ান রবিনসনরয়টার্স

শরীরজুড়ে বিভিন্ন রকম পিন এবং অলংকার। প্যারিসের রাস্তায় ভিভিয়ান রবিনসনকে আপনার চোখে পড়বেই।

ভিভিয়ানকে অলিম্পিকের ‘সুপারফ্যান’ বলতে পারেন। গত ৪০ বছরে সাতটি অলিম্পিক গেমস দেখেছেন। কিন্তু এবার প্যারিসে আসতে খরচ হয়েছে প্রচুর। বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) জানিয়েছে, খরচের অঙ্কটা ১০ হাজার ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১১ লাখ ৭৪ হাজার টাকা)।

আরও পড়ুন

৬৬ বছর বয়সী ভিভিয়ানের জন্ম যুক্তরাষ্ট্রে। বসবাস করেন লস অ্যাঞ্জেলেসে। প্যারিস অলিম্পিকে যেতে নিজের ক্রেডিট কার্ডে টাকা খরচের সীমানার পুরোটাই তিনি এ কাজে লাগিয়েছেন। এর পাশাপাশি দুটি চাকরিও করেছেন। অলিম্পিকে ৩৮টি ইভেন্টের টিকিট তিনি কিনেছেন। দিনের বেলায় লস অ্যাঞ্জেলেসের ভেনিস সৈকতে চাল দিয়ে বানানো অলংকারে নাম লিখে দিতেন এবং রাতে ব্যাগে মুদিখানার বিভিন্ন পণ্যের বস্তা টানতেন। ভিভিয়ান জানিয়েছেন, প্যারিস অলিম্পিকের খরচ তুলতে তাঁকে দুই বছরের বেশি সময় কাজ করতে হয়েছে।

ভিভিয়ানের ভাষায়, ‘(টাকা) জমানো কঠিন ও বাজেটও বড়। কিন্তু এটা হাজার গুণ বেশি দামি।’

পথচারীরা ছবি তোলেন ভিভিয়ানের সঙ্গে
রয়টার্স

ভিভিয়ানের জন্য অবশ্য প্যারিস অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সুখকর অভিজ্ঞতা হয়নি। ১ হাজার ৬০০ ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১ লাখ ৮৭ হাজার টাকা) খরচ করেছিলেন উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দেখতে। শেষ পর্যন্ত সেটা দেখতে হয়েছে ব্রিজের ওপর দাঁড়িয়ে বড় পর্দায়। ভিভিয়ান এ নিয়ে ক্ষোভ ঝাড়লেও দার্শনিকসুলভ কথাও ঝরেছে কণ্ঠে, ‘এ পরিমাণ অর্থ জমাতে কেমন সময় লাগে, সেটা জানেন? কিন্তু জীবন এমনই, এভাবেই এগিয়ে যায় এবং কিছু হারালে জেতাও যায়।’

আরও পড়ুন

এপির সঙ্গে ভিভিয়ান কথা বলার সময় এক পথচারী তাঁকে পরামর্শ দেন, নিজের খ্যাতিকে কাজে লাগিয়ে তিনি একটি অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন এবং লোকজনের কাছে অর্থ সাহায্য চাইতে পারেন। কিন্তু ভিভিয়ান সম্ভবত অন্য ধাতুতে গড়া মানুষ। সেই পথচারীকে উত্তরে বলেছেন, ‘কোনো অসুবিধা নেই। আমি টাকার ব্যবস্থা করে ফেলব।’

অলিম্পিকের প্রতি ভিভিয়ানের ভালোবাসা জন্ম নিয়েছে তাঁর মায়ের হাত ধরে। ১৯৮৪ লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিকে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর মা অ্যাথলেটদের জন্য অনুবাদকের কাজ করতেন। কাজ শেষে অ্যাথলেটদের দেওয়া পিন ভিভিয়ানের জন্য বাসায় নিয়ে আসতেন তাঁর মা। পিন সংগ্রহের এই শখই ভিভিয়ানকে ১৯৯৬ অলিম্পিকে পৌঁছে দেয়। পিনের বিনিময়ে অ্যাথলেটদের জন্য তিনি চাল দিয়ে বানানো অলংকার তৈরি করতেন। সেই স্মৃতি স্মরণ করে ভিভিয়ান বলেন, ‘সবার কাছ থেকেই পিন পেয়েছি এবং সব অ্যাথলেটের সঙ্গেই দেখা হয়েছে। এখনকার মতো তখন কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থা ছিল না। এখন তো অ্যাথলেটদের ভিলেজের ধারেকাছেও যাওয়া যায় না।’

অলিম্পিক গেমসকে ভালোবাসেন ভিভিয়ান
রয়টার্স

সিডনি ২০০০, এথেন্স ২০০৪, লন্ডন ২০১২ ও রিও ২০১৬ অলিম্পিক দেখেছেন ভিভিয়ান। ২০০৮ বেইজিং অলিম্পিকের ভিসা পেলেও ভ্রমণের অর্থ জোগাড় করতে পারেননি। ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত টোকিও অলিম্পিকেও যেতে পারেননি। টিকিট কিনেছিলেন। কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারির কারণে সর্বশেষ অলিম্পিক দর্শক ছাড়াই অনুষ্ঠিত হয়। ভিভিয়ান অবশ্য টিকিটের টাকা ফেরত পেয়েছিলেন।

আরও পড়ুন

শুরুতে অলিম্পিক দেখতে সাধারণ পোশাকই পরতেন ভিভিয়ান। সময়ের সঙ্গে তা পাল্টেছে। প্যারিস অলিম্পিকের পোশাকে অলংকরণ করতেই তাঁর প্রায় এক বছর সময় লেগেছে। আইফেল টাওয়ার নিয়ে বানানো গয়না ঝুলিয়ে রাখেন হ্যাটে। কানে অলিম্পিক রিং দিয়ে বানানো দুল। শরীরের পোশাকে প্রচুর পিন, পতাকা ও অলংকার। মনোযোগ কাড়তেই এমন পোশাক পরেন তিনি। অনেকেই তাঁর সঙ্গে ছবি তোলেন। ভিভিয়ান হাসিমুখেই আবদার মেটান। তবে এটাও স্বীকার করেছেন, কখনো কখনো ব্যাপারগুলো সীমাও ছাড়িয়ে যায়।

ভিভিয়ানের ভাষায়, ‘উচ্ছ্বসিত হওয়ার মতোই ব্যাপার। আমার জন্য কোথাও যাওয়া কঠিন। কারণ, সবাই আমাকে থামিয়ে ছবি তুলতে চায়। সে জন্য ভেন্যুতে পৌঁছাতেও দেরি হয়। তবে ঠিক আছে, এমন হতেই পারে।’ ভিভিয়ান নিজেকে এ জন্য টম ক্রুজ, লেডি গাগাদের মতো সেলিব্রিটিও ভাবেন মাঝেমধ্যে। এবার জিমন্যাস্টিকসে ক্রুজ, গাগা ও স্নুপ ডগদের দেখেছেন ভিভিয়ান।

ভিভিয়ানের বেশভূষা দেখে আগ্রহ জন্মে পথচারীদের মধ্যে
রয়টার্স

প্যারিস অলিম্পিক শেষেই আবার কাজে ফিরবেন ভিভিয়ান। পরের অলিম্পিকে যে যেতে হবে! অবশ্য ২০২৮ অলিম্পিক হবে ভিভিয়ানেরই শহর লস অ্যাঞ্জেলেসে। তবু খরচ তো আছে। সেসব মেটাতেই ভিভিয়ানকে আবার কাজে নামতে হবে। এই যে অলিম্পিক থেকে অলিম্পিকে পৌঁছে যাচ্ছেন ভিভিয়ান—এই শখ কিংবা ভালোবাসা আর কত দিন মেটাবেন প্রশ্নে ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’–এর প্রতি তাঁর ভালোবাসাটা টের পাওয়া গেল, ‘আমি আমৃত্যু এটা করব। অলিম্পিকে যেতে টাকাপয়সা জমাব।’