শাস্তির বিরুদ্ধে লড়াই করবেন গোবিনাথান

আজীবন নিষিদ্ধের শাস্তিতে বিস্মিত মোহামেডানের হকি কোচ ইমান গোবিনাথান। সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে লড়াই করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

আজীবন নিষিদ্ধের শাস্তিতে বিস্মিত মোহামেডানের হকি কোচ ইমান গোবিনাথানফাইল ছবি

গত ১৯ এপ্রিল শেষ হওয়া প্রিমিয়ার হকি লিগে বিভিন্ন নিয়ম ভাঙার অভিযোগে কোচ, ক্লাব, খেলোয়াড়, কর্মকর্তা ও সাবেক খেলোয়াড় মিলিয়ে ৩১ জনকে শাস্তি দিয়েছে বাংলাদেশ হকি ফেডারেশন। বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনেই যা নজিরবিহীন। সবচেয়ে বেশি আলোচনা সংবাদমাধ্যমে হকি ফেডারেশনের সমালোচনার অভিযোগে মোহামেডানের উপদেষ্টা কোচ মালয়েশিয়ার ইমান গোবিনাথানকে বাংলাদেশের হকিতে আজীবন নিষিদ্ধের ঘোষণা নিয়ে।

গোবিনাথান এর আগে বাংলাদেশ হকি দলের কোচেরও দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৫ সালে বিশ্বকাপ লেগ-২ দিয়ে বাংলাদেশের কোচ হিসেবে তাঁর শুরু। ২০১৮ জাকার্তা এশিয়ান গেমস, ২০২১ ঢাকায় এশিয়ান চ্যাম্পিয়নস ট্রফি, পরের বছর জাকার্তায় এশিয়ান হকি ফেডারেশন কাপ (চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ), একই বছরে এশিয়া কাপ এবং এশিয়ান গেমস বাছাইয়ে বাংলাদেশের কোচের পদে ছিলেন গোবিনাথান।

হকি ফেডারেশনের শাস্তির সিদ্ধান্তে বিস্মিত গোবিনাথান মালয়েশিয়া থেকে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি সত্যিই জানি না, কেন তারা আমাকে নিষিদ্ধ করেছে। কোনো অন্যায় করলে আমার সঙ্গে তারা কথা বলতে পারত। কাউকে নিষিদ্ধ করতে চাইলে সেটার একটা প্রক্রিয়া আছে।’

জাতীয় হকি দলের সঙ্গে গোবিনাথান
ফেসবুক

গোবিনাথানের শাস্তির সিদ্ধান্তে বিস্মিত দেশের হকি অঙ্গনও। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কোচ বলেন, ‘জিদান যেভাবে ঢুস মেরেছিল, তাহলে তো তাঁর ফাঁসি হওয়ার কথা! গোবিনাথান এমন কিছু করেননি যে তাঁকে সারা জীবন নিষিদ্ধ করা হবে। তিনি আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করেছেন মাত্র। আর মিডিয়ায় তিনি বাংলাদেশের হকি নিয়ে কী বলেছেন, কিছুই জানি না।’

গোবিনাথানের শাস্তির পক্ষে হকি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মমিনুল হকের যুক্তি, ‘তিনি বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। ফেডারেশনে নাকি প্রতিহিংসামূলক কাজ হয় এবং রাজনীতি আছে (বাংলাদেশ হকি ফেডারশনে যে রাজনীতি আছে, সেটা ফেডারেশনের কর্তারা হামেশাই বলেন)। ম্যাচের সময় মাঠে ঢুকেছেন তিনি, তেড়ে গেছেন। আমার দেশের বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন সংবাদমাধ্যমে। দেশকে ছোট করেছেন।’

আরও পড়ুন

গোবিনাথান কোথায় এসব কথা বলেছেন, জানতে চাইলে মমিনুল হক তিনটি জাতীয় দৈনিকের কথা বলেন, তবে দৈনিকগুলোর নাম বলেননি। নাম জানতে চাইলে তিনি এই প্রতিবেদককে ফেডারেশনের কাছে লিখিত আবেদন করার পরামর্শ দেন।

গোবিনাথান নাকি এ–ও বলেছেন, ফেডারেশন লিগ চালানোর জন্য নিম্নমানের আম্পায়ার না এনে তাঁর সহায়তায় আরও ভালো আম্পায়ার আনতে পারে। এ নিয়ে মমিনুল হক বলেন, ‘আমার দেশের নাগরিক এসব বলতে পারে। একজন বিদেশি বলতে পারে না। সে আমাদের রাষ্ট্রকে ছোট করেছে। একজন বিদেশি এসে আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কেন বলবে?’ জানা গেছে, শাস্তির আগে গোবিনাথানসহ কাউকেই কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়নি হকি ফেডারেশন।

গোবিনাথানের শাস্তির সিদ্ধান্তে বিস্মিত দেশের হকি অঙ্গনও
ফেসবুক

গোবিনাথানকে আজীবন নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি মোহামেডানের ম্যানেজারকে ৪ বছর ও অধিনায়ক রাসেল মাহমুদ জিমিকে ১২ ম্যাচ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। গোবিনাথানের বিরুদ্ধে ফেডারেশনের সিদ্ধান্তকে অন্যায় বলেছেন জিমিও, ‘তাঁর অপরাধ কী, জানি না। তিনি তো মারামারি করেননি! বরং ভদ্রভাবে আম্পায়ারের সঙ্গে কথা বলেছেন।’ বাংলাদেশের হকিতে গোবিনাথানের অবদানের কথা স্মরণ করে হকির এই তারকা বলেন, ‘তিনি চুক্তি ছাড়াও কাজ করেছেন আমাদের সঙ্গে। তাঁর সময়ে আমাদের উন্নতি হয়েছে। তিনি মাঠে কোনো খারাপ আচরণ করেননি। কোচের মাঠে ঢোকার কথা বলা হচ্ছে। তা অনেক কোচই তো মাঠে ঢুকেছেন!’

আরও পড়ুন

বাংলাদেশ হকি ফেডারেশন নিয়ে বিরূপ মন্তব্যের অভিযোগ ঠিক নয় দাবি করে গোবিনাথান বলেন, ‘আমি বিএইচএফ (বাংলাদেশ হকি ফেডারেশন) সম্পর্কে খারাপ কথা বলেছি, আমি তা মনে করি না। আমি বলেছি, বাংলাদেশ হকির উন্নতির জন্য তারা আরও ভালো বিদেশি আম্পায়ার আনতে পারে। তবে বাংলাদেশের আম্পায়ারও ভালো। এটুকুই বলেছি। আমি তো সব সময় বিএইচএফকে সমর্থন করেছি। সব সময় বাংলাদেশ হকির উন্নতি চেয়েছি।’

খেলা চলাকালে মাঠে ঢোকার অভিযোগ প্রসঙ্গে বলেন, ‘দয়া করে সেই ভিডিওটি আবার দেখুন, অন্য দলের ম্যানেজার এবং কোচ, যাঁরা খেলা থামিয়ে মাঠে ছুটে যান। প্রতিটি খেলা বন্ধ করে কোচ বা ম্যানেজাররা মাঠে নামেন, শুধু আমাকে শাস্তি দেবেন কেন?’ শাস্তির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে লড়াই করার কথাও বলেছেন তিনি, ‘বাংলাদেশে ও বিশ্বে সুনাম আছে আমার। অথচ ওরা আমাকে কলঙ্কিত করেছে। আমি আন্তর্জাতিক কোচ, এর বিরুদ্ধে আমি লড়াই করব।’

আরও পড়ুন