ঝুঁকিপূর্ণ ট্র্যাকে এ কেমন অনুশীলন ক্যাম্প অ্যাথলেটিকসে
১৪ জন অ্যাথলেট নিয়ে শুরু হয়েছে অনুশীলন ক্যাম্প। কিন্তু ক্যাম্পের ভেন্যু আর্মি স্টেডিয়ামের ট্র্যাক বেহাল।
ছবির নিচে যদি কোনো বর্ণনা না থাকত আর তাহলে কেউ যদি এটাকে গ্রীষ্মের খরতাপে ফেটে চৌচির ফসলের মাঠ মনে করতেন, তাহলে কি তাঁকে দোষ দেওয়া যেত! ছবির নিচে বর্ণনা পড়ে এতক্ষণে অবশ্য বুঝে গেছেন এটা আসলে ঢাকার আর্মি স্টেডিয়ামের অ্যাথলেটিকস ট্র্যাক।
কোনো অংশ ফেটে চৌচির, কোথাও উঁচু–নিচু, কোথাও আবার জোড়াতালি! আর্মি স্টেডিয়ামের এই ট্র্যাকেই চলছে জাতীয় অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের প্রশিক্ষণ ক্যাম্প। গতকাল এ নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা হয় ৪০০ মিটারে ১০ বার জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হওয়া জহির রায়হানের। কিছুটা অস্বস্তি নিয়ে নৌবাহিনীর এই অ্যাথলেট বললেন, ‘আমি সাউথ এশিয়ানের পাশাপাশি ইনডোরের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। আসলে এমন ট্র্যাকে অনুশীলন করাটা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। তারপরও কিছু সাবধানতা মেনে আমরা প্রশিক্ষণ চালিয়ে যাচ্ছি। এভাবে কত দিন করতে পারব জানি না।’
যদ্দুর দেখলাম, ট্র্যাকের অবস্থা ভালো নয়। আমাদের মতো অ্যাথলেটদের এমন ট্র্যাকে দৌড়ানো খুবই কষ্টকর।
দ্রুততম মানব ইসমাইল হোসেন ট্র্যাকের শোচনীয় অবস্থা নিয়ে শঙ্কিত, ‘যদ্দুর দেখলাম, ট্র্যাকের অবস্থা ভালো নয়। আমাদের মতো অ্যাথলেটদের এমন ট্র্যাকে দৌড়ানো খুবই কষ্টকর।’ ২০০ মিটারে তিনবারের জাতীয় চ্যাম্পিয়ন রাকিবুল হাসানের কণ্ঠেও ট্র্যাক নিয়ে আক্ষেপের সুর, ‘আমি শুরু থেকেই মাঠের সমস্যা নিয়ে কথা বলে আসছি।’ সাউথ এশিয়ান সিনিয়র অ্যাথলেটিকসের জন্য কদিন আগে ক্যাম্পের জন্য মনোনীত হন ১৪ অ্যাথলেট। ৬ মার্চ থেকে এই মাঠে ক্যাম্প শুরুর কথা থাকলেও প্রথম দুই দিন কোনো অ্যাথলেট ক্যাম্পে যোগ দেননি। গতকাল পর্যন্তও সবাই রিপোর্ট করেননি। এর মধ্যে মাঠের দুরবস্থা নিয়ে হতাশ অ্যাথলেটরা।
কদিন আগে জাতীয় স্টেডিয়ামে হওয়া ৪৮তম জাতীয় অ্যাথলেটিকসের ৪০০ মিটার হার্ডলসে ৩২ বছর আগের রেকর্ড ভাঙেন নাজিমুল হোসেন। ক্যাম্পে যোগ দেওয়া সেনাবাহিনীর এই অ্যাথলেটের চোখেও মাঠের খুঁত ধরা পড়েছে, ‘মাঠটা নিয়েই সমস্যা। অনেক দিন ধরে শুনছি এটা ঠিক করবে। এখন আর মেরামত করার সুযোগ নেই। একেবারে নতুন করে ট্র্যাক বসাতে হবে।’ হাই জাম্পের মাহফুজুর রহমানও চিন্তিত, ‘বাকি সব ঠিক আছে। কিন্তু অনুশীলনের জন্য মাঠ একেবারে অপ্রস্তুত।’
স্প্রিন্টের কোচ আবদুল্লাহ হেল-কাফি তো অনুশীলনের জন্য বিকেএসপির কথা জোর দিয়ে বলেছেন। বিকেএসপির সুযোগ–সুবিধাগুলো উল্লেখ করে কাফি বলেন, ‘আমি মনে করি, ক্যাম্পের জন্য বিকেএসপি ভালো। সেখানে ভালো মাঠ, জিমের ব্যবস্থা এমনকি ফিজিওথেরাপির জন্য তাদের ফিজিওথেরাপি বিভাগ আছে।’ এদিক থেকে কিছুটা ব্যতিক্রম হার্ডলসের কোচ ফরিদ খান, ‘ইনজুরি হবে না। আর ইনজুরি ভালো মাঠেও হয়, খারাপ মাঠেও হয়।’
মে মাসের ৩ থেকে ৫ তারিখ ভারতের রাঁচিতে হবে সাউথ এশিয়ান সিনিয়র অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপের চতুর্থ আসর। সেই প্রতিযোগিতার জন্য ক্যাম্পে ডাকা হয় নৌবাহিনীর ইসমাইল হোসেন, রাকিবুল হাসান, জহির রায়হান, মাহফুজুর রহমান, শিরিন আক্তার, সুমাইয়া দেওয়ান ও সোনিয়া আক্তারকে। জায়গা পান সেনাবাহিনীর ৭ অ্যাথলেট—জুবাইল ইসলাম, নাজিমুল হোসেন, মাসুদ রানা, তানভীর ফয়সাল, আল আমিন, মাসুদ রানা জুনিয়র ও রিতু আক্তার।
ট্র্যাকের অবস্থা নিয়ে অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক শাহ আলমের যুক্তি, ‘ট্রেনিংয়ের জন্য অসুবিধা নেই। প্রতিযোগিতার জন্য অসুবিধা হতে পারে।’ বেশি সমস্যা মনে হলে ক্যাম্পের জন্য বিকল্প ভেন্যুর কথা ফেডারেশন ভাববে বলে জানালেন তিনি, ‘মাত্র তো শুরু হলো ক্যাম্প। আমরা আরও কয়েক দিন দেখি, যদি বেশি সমস্যা হয়, অন্য ব্যবস্থা করব।’