অনিশ্চিত টোকিও অলিম্পিক

অলিম্পিক আয়োজন নিশ্চিত করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন অলিম্পিক কমিটির প্রধান টমাস বাখ।ছবি: এএফপি

করোনাভাইরাসের আরেকটি ঢেউয়ের শঙ্কা জেগেছে জাপানে। গত কয়েক দিনে সংক্রমণের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাওয়া দুশ্চিন্তায় ফেলছে জাপানের নীতিনির্ধারকদের। টিকার সন্ধান এখন পর্যন্ত মেলেনি, ফলে রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য নেওয়া এত দিনকার সব পদক্ষেপ ও তাতে অর্জিত সব সাফল্য ভেসে যেতে পারে। অন্যদিকে দেশটির ব্যবসা খাত শঙ্কিত দেউলিয়া হওয়া এড়ানোর সামর্থ্য নিয়ে। তবে সবচেয়ে বেশি চিন্তিত মনে হচ্ছে ২০২০ টোকিও অলিম্পিক আয়োজনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব কটি প্রতিষ্ঠানকে।

২০২০ অলিম্পিক এমনিতেই পিছিয়ে গেছে। ২০২১ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে নতুন সময়সূচি নির্ধারিত হয়েছে। তবু অলিম্পিকের ভাগ্য এখনো অনেকটা সুতার ওপর ঝুলছে। আরেকবার পেছালে এবারের অলিম্পিককে সার্বিকভাবেই হয়তো বিদায় জানাতে হবে এবং ইতিহাসের পাতায় ২০২০ টোকিও অলিম্পিক লেখা হয়ে থাকবে ‘হয়েও হলো না’ এমন এক আয়োজন হিসেবে। বাতিল হয়ে গেলে আয়োজনের পেছনে গত সাত বছরে হাজার কোটি ডলারের যে খরচ হয়েছে, তার সবটাই তামাদি খরচের খাতায় লেখা হবে। সার্বিক অলিম্পিক কার্যক্রমের ওপর কতটা সুদূরপ্রসারী প্রভাব এটা ফেলবে, তা এখনো পরিষ্কার নয়। তবে সব পক্ষ সেই সম্ভাবনা এড়িয়ে যাওয়ার যে প্রাণান্তকর চেষ্টা করছে, সেটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল গত সপ্তাহে আইওসি প্রেসিডেন্ট টমাস বাখের টোকিও সফরের সময়।

চার দিনের সফরে টোকিওতে অবস্থানকালে টমাস বাখ অলিম্পিক আয়োজনকে অন্ধকার সুড়ঙ্গপথের শেষে আলোর দেখা পাওয়ার সঙ্গে তুলনা করেছেন। তাঁর ধারণা, অলিম্পিকের সফল আয়োজনকে করোনার ক্ষতিকর প্রভাব কাটিয়ে মানবসমাজের দৃঢ়তার প্রতীক হিসেবে দেখা হবে। তাঁর এই মন্তব্যের সঙ্গে সুর মিলিয়েছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদে সুগার। টোকিও অলিম্পিক আয়োজক কমিটির নেতারাও অলিম্পিকের সফল আয়োজন নিশ্চিত করতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার কথা বলছেন।

কীভাবে সেই চেষ্টা চালানো হবে, তার কিছু সুস্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছেন টোকিও অলিম্পিক আয়োজক কমিটির প্রধান তোশিরো মুতো। তিনি বলেছেন, অলিম্পিক চলাকালে ক্রীড়াবিদ ও দর্শকদের সার্বক্ষণিকভাবে একে অন্যের থেকে অন্তত দুই মিটার দূরত্ব বজায় রাখতে বলা হবে এবং প্রতিযোগীদের থাকার নির্ধারিত স্থান অলিম্পিক ভিলেজে নিয়মিতভাবে করোনা পরীক্ষা চালানো ছাড়াও ক্রীড়াবিদদের সেখানে অবস্থানের সময় কমিয়ে আনা হবে। অর্থাৎ প্রতিযোগিতায় নিজ নিজ বিভাগে অংশগ্রহণ শেষ হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্রীড়াবিদদের বিদায় নিতে বলা হবে এবং একে অন্যের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া বিভিন্ন অনুষ্ঠানও সীমিত গণ্ডিতে আয়োজন করা হবে।

অলিম্পিকের মূল ভেন্যু পরিদর্শন করছেন বাখ।
ছবি: এএফপি

আয়োজকেরা ভাইরাসের বিস্তার প্রতিহত করে নিরাপদ অলিম্পিক আয়োজনের কথা যতই বলে যান না কেন, জাপানের বাস্তব অবস্থা বলছে ভিন্ন কিছু। আর এ কারণেই জাপানের, বিশেষ করে রাজধানী টোকিওর প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ অলিম্পিক অনুষ্ঠিত হওয়ার আশা এখন আর দেখছেন না। তাঁদের ধারণা, ২০২০ টোকিও অলিম্পিক বাতিল হওয়া থামানো আর সম্ভব নয়। ইতিমধ্যে অগ্রিম কেনা টিকিট ফেরত দিচ্ছেন অনেকেই। অলিম্পিক নিয়ে নাগরিকদের মধ্যে দেখা দেওয়া হতাশার প্রতিফলন এটি।
পাঁচ দিন ধরে জাপানে নতুন সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার দৈনিক হিসাব দুই হাজার ছাড়িয়ে গেছে। ফলে কিছুদিন আগে শিথিল করা জনসমাবেশ নিয়ন্ত্রণসংক্রান্ত সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করছে সরকার। ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা শিথিলের সিদ্ধান্তও জাপান সরকার নতুন করে ভেবে দেখছে।

আন্তর্জাতিক পর্যায়ে করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক টিকা আবিষ্কার নিয়ে পরস্পরবিরোধী বিভিন্ন খবর ইঙ্গিত দিচ্ছে, দ্রুত টিকা আসার সম্ভাবনা নেই। ফলে অলিম্পিকে যোগ দিতে আসা সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ক্রীড়াবিদ ও ক্রীড়া কর্মকর্তারা প্রতিষেধক টিকা দিয়ে জাপানে যেতে পারবেন কি না, সেই নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারছে না। ফলে অনেকটা ভাগ্যের হাতে ঝুলে আছে ২০২০ টোকিও অলিম্পিকের ভবিষ্যৎ। এ কারণেই আইওসির তিন দিন ধরে চলা প্রকল্প পর্যালোচনার শেষে গত বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে সমন্বয় কমিশনের সভাপতি জন কোটস বলেছেন, অনেক ক্ষেত্রেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ এখনো সময়োপযোগী বিবেচিত হচ্ছে না।