অলিম্পিকে রোমানেরই যাওয়া উচিত

রোমান সানা।ফাইল ছবি

বাংলাদেশ গেমস শেষে বিশ্রামের সুযোগ পাননি আর্চাররা। জাতীয় আর্চারি দল গড়তে ১৩-১৫ এপ্রিল ট্রায়াল নিয়েছে আর্চারি ফেডারেশন। টঙ্গীর আহসানউল্লাহ মাস্টার স্টেডিয়ামে সেই ট্রায়াল ও প্রাসঙ্গিক আরও বিষয় নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বললেন জাতীয় আর্চারি দলের জার্মানির কোচ মার্টিন ফ্রেডরিক।

প্রশ্ন: আগামী মাসে বিশ্বকাপ ও জুনে অলিম্পিক বাছাইয়ের জন্য তিন দিনের ট্রায়াল কেমন দেখলেন?

মার্টিন ফ্রেডরিক: রোমান সানা রিকার্ভ ব্যক্তিগত বিভাগে প্রথম (১৩৪ পয়েন্ট) হয়েছে। দ্বিতীয় রুবেল (হাকিম আহমেদ) (১১৩ পয়েন্ট)। রুবেল প্রথম দিন ৬৮০ স্কোর করে আমাকে অবাক করেছিল। জুনিয়রে এই স্কোর রেকর্ড। এই ইভেন্টে জাতীয় রেকর্ড রোমানের ৬৮৬। সব মিলিয়ে ট্রায়াল দেখে আমি সন্তুষ্ট।

প্রশ্ন: বাংলাদেশ গেমসে রিকার্ভে রোমান পদকই পাননি। ইভেন্টটিতে সোনা ও রুপা জেতা রামকৃষ্ণ ঘোষ ও তামিমুল ইসলাম এই ট্রায়ালে ভালো করেননি কেন?

ফ্রেডরিক: অনেক কারণ। মূলত, এই ইভেন্টে লড়াইটা অনেক তীব্র হয়েছে। বেশ কয়েকজনের স্কোর কাছাকাছি। এটা উৎসাহব্যঞ্জক। তবে রাম তৃতীয় হয়েছে। আসলে ওদের অনেকেরই ধারাবাহিকতার অভাব।

প্রশ্ন: ধারাবাহিতার এমন অভাব থাকলে বিশ্বকাপ ও অলিম্পিক বাছাইয়ে ভালো করা কি সম্ভব?

ফ্রেডরিক: সম্ভব নয়। আমরা এক বছরের বেশি সময় ধরে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের বাইরে। ফলে, বড় আসরে ভালো করা আরও কঠিন আমাদের জন্য। বিশ্বকাপ ও অলিম্পিক বাছাইয়ে বিশ্বসেরা খেলোয়াড়েরা আসবে। তারপরও টুর্নামেন্ট দুটি থেকে অলিম্পিকের কোটা প্লেস পেতে চাই আমরা।

মার্টিন ফ্রেডরিক
ছবি: প্রথম আলো

প্রশ্ন: কিন্তু টঙ্গীতে যে পরিবেশে আর্চারা খেলছেন, সেটা কি ভালো করার পক্ষে অনুকূল?

ফ্রেডরিক: না, অনুকূল নয়। এখানে প্রচুর ধুলোর সঙ্গে শব্দের সমস্যাও আছে। টানা আট ঘণ্টা অনুশীলনের জন্য খেলোয়াড়দের ভালো ফিটনেসের প্রয়োজন। কিন্তু এই পরিবেশে খেলোয়াড়েরা ২০ মিনিট দৌড়ে বুকে হাত দিয়ে বসে পড়ে। টঙ্গী স্টেডিয়ামে দেখছি, বাংলাদেশ প্রিমিয়ার ফুটবল লিগের খেলা হচ্ছে এবার। আমার মনে হয়, আর্চারির জন্য পরিবেশটা আরও ভালো হওয়া দরকার।

প্রশ্ন: খেলোয়াড়দের মানোন্নয়নে আর কী কী বিষয়ের ওপর জোর দিচ্ছেন?

ফ্রেডরিক: বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের পারিবারিক সমস্যা থাকে। বিশেষ করে মেয়ে আর্চারদের ক্ষেত্রে দেখা যায় পারিবারিক সমস্যার কারণে এক মাস নেই। পারিবারিক সমস্যামুক্ত রাখতে হবে ওদের। তা ছাড়া মনোবিদেরও প্রয়োজন দেখছি।

প্রশ্ন: বাংলাদেশ গেমসে মেয়েদের ব্যক্তিগত কম্পাউন্ডের ফাইনালে খেলেছেন জাতীয় দলের বাইরের দুজন। সব মিলিয়ে গেমসটা কেমন হলো?

ফ্রেডরিক: অনেক খেলোয়াড় গেমসে অংশ নিয়েছে। এটা ভালো দিক। সম্ভাবনাময় নতুন আর্চার পেয়েছি। পোডিয়ামে দাঁড়ানোর জন্য অনেক লড়াই হয়েছে। কে কাকে কোথায় ল্যাং (পা উঁচিয়ে ল্যাং মেরে দেখালেন) মেরে ফেলে দিচ্ছে, বোঝাই যাচ্ছিল না। জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে রামকৃষ্ণ (ঘোষ), অসীম (কুমার) সোনা জিতেছে। জাতীয় দলের বাইরের বেশ কয়েকজন খুব ভালো করেছে। এতে প্রমাণ হচ্ছে, কারও ঘুমিয়ে থাকার সুযোগ নেই। রোমানের মতো খেলোয়াড় ফাইনালে খেলতে পারেনি।

বাংলাদেশের জার্সি গায়ে গলায় সোনার পদক রোমান সানার।
ছবি: বিশ্ব আর্চারি টুইট

প্রশ্ন: বাংলাদেশর আর্চারির ভবিষ্যৎ তাহলে তো ভালোই, কী বলেন?

ফ্রেডরিক: অবশ্যই ভালো। যেমন রিকার্ভে তরুণ আলিফ, কম্পাউন্ডে অসীম কুমার ভালো করেছে। বাংলাদেশ গেমসে ৭০৪ স্কোর করে জাতীয় রেকর্ড গড়ে অসীম সোনা জিতেছে (ট্রায়ালে অবশ ভালো করতে পারেননি)। মেয়েদের ব্যক্তিগত ইভেন্টে ১৬-১৭ বছরের দিয়া সিদ্দিকি ভালো করেছে। ভালো সম্ভাবনা আছে মেয়েদের দলগত কম্পাউন্ডেও। মাতৃত্বকালীন অবস্থা থেকে ফিরে এসেছে রোকসানা আক্তার, রিকার্ভ থেকে কম্পাউন্ডে গিয়ে ভালো করছে শ্যামলী রায়। তানিয়া রিমাও নজর কেড়েছে।

প্রশ্ন: কিন্তু রোমান সানা টানা ৩টি ঘরোয়া টুর্নামেন্টে খারাপ করেছেন। তাঁর জায়গায় অলিম্পিকে অন্য কাউকে পাঠানোর সম্ভাবনা কতটুকু?

ফ্রেডরিক: আমি বলব, অলিম্পিকে রোমানেরই যাওয়া উচিত। ও-ই এখনো দেশের সেরা আর্চার।