‘অলিম্পিকে সোনা জিতে এক লাখ ডলার পুরস্কার পেয়েছিলাম’

অলিম্পিকে সোনা জিতেছেন লি সিউং-ইয়ুনছবিঃ এএফপি

শৈশবে ফুটবল ছিল তাঁর প্রথম পছন্দ। কিন্তু ঘটনাচক্রে আর্চারিতে জীবন গড়েছেন ২৬ বছর বয়সী লি সিউং-ইয়ুন। ২০১৬ রিও অলিম্পিক গেমসে দক্ষিণ কোরিয়ার রিকার্ভ ইভেন্টের পুরুষ বিভাগের দলগত সোনা জিততে বড় ভূমিকা রাখেন। স্বপ্নের অলিম্পিক সোনা জয়ের আগে তুরস্কে ২০১৩ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে এককে জেতেন সোনা।

ঢাকায় রোববার শুরু হতে যাওয়া ‘তির ২২তম এশিয়ান আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপে’ খেলার আগে বনানী আর্মি স্টেডিয়ামে এসব নিয়েই আজ কথা বলেছেন প্রথম আলোর সঙ্গে।

প্রশ্ন: বিশ্ব আর্চারিতে অপরাজেয় নাম দক্ষিণ কোরিয়া। অলিম্পিকে অন্য সব খেলার চেয়ে আর্চারিতেই বেশি সোনা জেতে আপনার দেশ। এই সাফল্যের পেছনের রহস্য কী?

লি সিউং-ইয়ুন: সত্যি বলতে কী, জাতিগতভাবে তির–ধনুকের সঙ্গে একটা অন্য রকম সম্পর্ক আছে কোরিয়ানদের। এই ধরুন, জাপানিদের সঙ্গে যেমন তরবারির সম্পর্কটা বেশ গভীর। আমাদের দেশে একটা কথা চালু আছে যে কোরিয়ান আর্চারির ট্রেনিং সেন্টারের আলো কখনোই নেভে না। বলা যায় দিন–রাত ২৪ ঘণ্টায় অনুশীলন চলে আমাদের। তা ছাড়া দল গড়ার ব্যাপারে স্বচ্ছ নির্বাচন প্রক্রিয়া মানা হয়। অলিম্পিকের আগে এত বেশি বাছাই প্রতিযোগিতা হয় যে সেটা গুনে শেষ করা যাবে না।

লি সিউং-ইয়ুন
ছবি: শামসুল হক

প্রশ্ন: আপনি কীভাবে আর্চারিতে এলেন? কোরিয়ায় তো ফুটবলই বেশি জনপ্রিয়...

লি: আমার প্রথম পছন্দ ছিল ফুটবল। শৈশবে ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম। কিন্তু ছোটবেলায় বাবা আমাকে যে স্কুলে ভর্তি করে দেন, ওই স্কুলে আর্চারি ছাড়া আর কোনো খেলাধুলা হতো না। বলতে পারেন একরকম বাধ্য হয়েই আর্চারি খেলা শুরু করি। এরপর খেলতে খেলতে এই খেলাটা ভালো লেগে গেল। তা ছাড়া আমার অন্য কোনো খেলা বেছে নেওয়ারও উপায় ছিল না। তাই আর্চারিতেই পুরো মনোযোগ দেওয়া শুরু করি।

প্রশ্ন: আপনার পরিবারের অন্য কেউ কি খেলাধুলা করেন?

লি: না, আমার বাবা কোরিয়ার একটি শহরে ফার্নিচার তৈরি করেন। বাবা চাইতেন যেন আমি খেলায় আসি এবং অবশ্যই অলিম্পিকে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করি। বাবার সেই স্বপ্ন পূরণ করতে পেরে আমি গর্বিত।

অনুশীলনে লি সুন ইয়ুন
ছবি: প্রথম আলো

প্রশ্ন: আপনি বলছিলেন, কোরিয়ায় অলিম্পিকের দলে সুযোগ পাওয়াটা অনেক কঠিন। একটু যদি ব্যাখ্যা করতেন?

লি: আমাদের দেশের আর্চারির র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ খেলোয়াড় থেকে পরের ৫০ জনের পারফরম্যান্স খুবই কাছাকাছি। বলা যায়, একে অন্যের ঘাড়ের ওপর নিশ্বাস ফেলে। প্রতিটি প্রতিযোগিতায় একজন আরেকজনকে তীব্র চ্যালেঞ্জ জানায়। আমাদের জাতীয় দল প্রতিনিয়ত বদল হচ্ছে। কেউই বলতে পারে না যে জাতীয় দলে তার জায়গা পাকা।

প্রশ্ন: কোরিয়ান আর্চারি দলের অনুশীলনের সুযোগ–সুবিধা কেমন?

লি: কোরিয়ার অন্যতম সেরা খেলা আর্চারি। আমাদের আর্চারি অ্যাসোসিয়েশন আধুনিক সব সুযোগ–সুবিধা দিচ্ছে খেলোয়াড়দের। আমি বলতে পারি, অন্যদের চেয়ে অবিশ্বাস্য রকম বেশি সুবিধা পাই আমরা। আর কোরিয়ায় অলিম্পিক সোনা জিতলে একজন খেলোয়াড় এক লাখ মার্কিন ডলার আর্থিক পুরস্কার পায়। এক লাখ ডলার আমিও পেয়েছি। তারপরও আর্চারি নিয়ে আমাদের দেশে খুব বেশি আলোচনা নেই।

তীর-ধনুক হাতে লি
ছবি: প্রথম আলো

প্রশ্ন: এর কারণ কী?

লি:  প্রথমত, টেলিভিশনে আর্চারি খেলা দেখায় না। তা ছাড়া কেউ সেভাবে দেখতেও চায় না। যখন অলিম্পিকে কেউ সোনা জেতে, তখনই তাকে নিয়ে মাতামাতি হয়। শুনে অবাক হবেন, আমাদের দেশে লোকে আর্চারিটা খুব বেশি পছন্দও করে না। কিন্তু তারপরও লোকে এই খেলাটা ভালোবাসে। কারণ, অলিম্পিকে এই খেলা থেকেই আমরা প্রচুর সোনা জিতি। কিন্তু সত্যি বলতে কী, ফুটবল আমাদের দেশে ভীষণ জনপ্রিয়।

প্রশ্ন: বাংলাদেশের আর্চারি সম্পর্কে কোনো ধারণা আছে আপনার?

লি: খুব অল্প সময়ে বাংলাদেশ আর্চারিতে যথেষ্ট উন্নতি করেছে।