অলিম্পিকের মাঝপথে টোকিওর জরুরি অবস্থা বাড়ানো হলো
অলিম্পিক পুরোদমে চলছে টোকিওতে। সবচেয়ে বড় আকর্ষণ অ্যাথলেটিকস শুরু হচ্ছে। কিন্তু একদিকে অলিম্পিকের আকর্ষণ বাড়ছে, অন্যদিকে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে করোনার সংক্রমণ। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথমবারের মতো জাপানে এক দিনে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়েছে। টোকিও শহরেও আক্রান্তের নতুন রেকর্ড গড়েছে গতকাল। এ অবস্থায় নতুন করে জাপানের চারটি অঞ্চলে জরুরি অবস্থার মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাপান সরকার।
গতকাল প্রথমবারের মতো করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়ানোর পর জাপান সরকারের অনেক শীর্ষ কর্মকর্তা ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সবাইকে সতর্ক করেছেন। তাঁরা বলছেন, সবচেয়ে ভয়ংকর ডেলটা ভেরিয়েন্টের কারণেই এমন হচ্ছে।
বিশ্বের অন্য অনেক দেশের তুলনায় জাপানে করোনার প্রভাব অতটা প্রকট নয়। এখন পর্যন্ত ১৫ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং এখন আর লকডাউন দেওয়া হচ্ছে না। কিন্তু উন্নত বিশ্বের মধ্যে জাপানের টিকাদানের পরিমাণ সবচেয়ে কম। মাত্র ২৫ শতাংশ মানুষ করোনার টিকা নিয়েছেন। এ কারণে নতুন করে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধির খবর দেশটিতে আতঙ্কের জন্ম দিচ্ছে।
বিশেষ করে টোকিওতে নতুন করে আক্রান্তের রেকর্ড সতর্ক করে তুলেছে বিশেষজ্ঞদের। এরই মধ্যে আজ শুক্রবারে অলিম্পিকে নতুন করে ২৭ জনের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবর এসেছে। এটাও এবারের অলিম্পিকের দৈনিক রেকর্ড। এ অবস্থায় দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইওশিদা সুগা জাপানের চারটি অঞ্চল—চিবা, কানাগাওয়া, ওসাকা ও সাইতামায় জরুরি অবস্থা দীর্ঘায়িত করার ঘোষণা দিয়েছেন। এর মধ্যে সাইতামা টোকিওর নিকটবর্তী শহর।
এ সিদ্ধান্তে এটাও নিশ্চিত হলো, টোকিও ও ওকিনাওয়াতে চলা জরুরি অবস্থা আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২২ আগস্ট নয়, ৩১ আগস্ট পর্যন্ত চলবে। যদিও এ নির্দেশনাও করোনার সংক্রমণ কমানোর জন্য যথেষ্ট কি না, এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আজ প্রধানমন্ত্রী সুগা সবাইকে সতর্ক করে দিয়েছেন, ‘চরম সংক্রামক ডেলটা ভেরিয়েন্ট দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। সংক্রমণের হার যদি না কমে, তাহলে গুরুতর অসুস্থ রোগীর সংখ্যা বাড়বে এবং হাসপাতালগুলোর পক্ষে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।’
আজ টোকিওতে নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যা ৩ হাজার ৩০০। সেটা গতকালের তুলনায় কম হলেও এ ধারা চলতে থাকলে স্বাস্থ্যব্যবস্থা ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাবে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। এর আগে জাপানের স্বাস্থ্যমন্ত্রী নরিহিসা তামুরা বলেছেন, ‘আমাদের শক্ত একটা বার্তা দিতে হবে। এ নিয়ে আমরা খুবই চিন্তিত।’
এদিকে অলিম্পিক আয়োজক কমিটি নিজেদের গৃহীত ব্যবস্থা নিয়ে বেশ সন্তুষ্ট। প্রতিদিন ভিলেজে করোনায় আক্রান্তের খবর এলেও সেটা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে বলেই দাবি করা হচ্ছে। বাইরে থেকে আসা ৩৯ হাজার ৮০০ জনের মধ্যে মাত্র ৯৮ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, এ তথ্যকে সাফল্য হিসেবেই দেখছেন তাঁরা। টোকিও মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান হাউরো ওজাকি দাবি করেছেন, সরাসরি না হলেও জাপানের করোনা পরিস্থিতিতে অলিম্পিক প্রভাব রাখছে, ‘যখন এমন এক উৎসব চলছে, তখন মানুষের পক্ষে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন।’