অ্যাথলেটিকসে নজর থাকবে যে পাঁচজনের ওপর

হাইজাম্পে এবার সোনা জিততে চান এই কাতারিছবি: রয়টার্স

কার্ল লুইস, ফ্লোরেন্স গ্রিফিথ জয়নার, উসাইন বোল্ট, ক্যাথি ফ্রিম্যানরা অতীতে রাঙিয়েছেন অলিম্পিকের অ্যাথলেটিকস ট্র্যাক। গতিতে অবাক করে দিয়েছেন দুনিয়াকে। তাঁদের ইতিহাস গড়া পারফরম্যান্সের দ্যুতি ভাস্বর করেছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রীড়া আসরকে। তাঁদের নিজেদের জীবনও বদলে গেছে। তাঁরা বদলে দিয়েছেন ক্রীড়া ইতিহাসের দৃশ্যপটও। এবারের টোকিও অলিম্পিক গেমসের অ্যাথলেটিকস ইভেন্ট শুরু হয়েছে আজ থেকে। প্রিয় পাঠক, আসুন একনজরে দেখে নিই, এবারের অলিম্পিকে ‘কার্ল লুইস’, ‘উসাইন বোল্ট’ কিংবা ‘গ্রিফিথ জয়নার’ আর ‘ক্যাথি ফ্রিম্যান’ হওয়ার সম্ভাবনা আছে কাদের!

মুজাজ ঈসা বারশিম (কাতার)–হাই জাম্প

২০১৯ সালে কাতারের দোহায় অনুষ্ঠিত বিশ্ব অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপে হাই জাম্পে জিতে সবাইকে উদ্বেলিত করে তুলেছিলেন মুজাজ ঈসা বারশিম। সুদানি বংশোদ্ভূত এই কাতারি হাই জাম্পারের জন্য অবশ্য অলিম্পিকের পদক নতুন কিছু নয়। ২০১২ সালে লন্ডন অলিম্পিকে ব্রোঞ্জ আর ২০১৬ সালে রিও অলিম্পিকে রুপা জেতা বারশিম কি এবার পারবেন হাই জাম্পে সোনা জিততে? প্রথমে জিতেছেন ব্রোঞ্জ, এরপর রুপা। এবার সোনা জিতলেই তো চক্রটা পূর্ণ হয়।

কাজটা অবশ্য খুব সহজ হবে না ৩০ বছর বয়সী এ অ্যাথলেটের জন্য। চোটে পড়েছিলেন, চোট সারাতে যথেষ্ট সময় নিয়েছেন। কিন্তু অলিম্পিক সোনা বলে কথা—স্বপ্নটা যে তাঁর অনেক দিনেরই। টোকিও অলিম্পিক স্টেডিয়ামের অভিজ্ঞতাটা তিনি আগেভাগেই পেয়েছেন কিছুটা। গত মে মাসে এ স্টেডিয়ামে পরীক্ষামূলক একটা প্রতিযোগিতায় খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। অলিম্পিকে সোনা জয়ের লড়াইয়ে সেটি তাঁর জন্য সুবিধা হতে পারে।

মুজাজ ঈসা বারশিম এবার অলিম্পিকে পদক জয়ের চক্র পূরণ করতে চান
ছবি: রয়টার্স

কারস্টেন ওয়ার্লহোম (নরওয়ে)–৪০০ মিটার হার্ডলস

৪০০ মিটার হার্ডলসে নরওয়ের কারস্টেন ওয়ার্লহোমকে আলাদা করেই নজরে রাখতে হবে। ২০১৯ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে এ ইভেন্টে তাঁকে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের রাই বেনজামিনের সঙ্গে। বয়সে অনেক নবীন বেনজামিন তাঁকে যথেষ্ট চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন। যদিও শেষ পর্যন্ত ওয়ার্লহোমই জিতেছিলেন, কিন্তু লড়াইটা ছিল বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের একটা বড় হাইলাইট।

এবারের অলিম্পিকে ৪০০ মিটার হার্ডলসে বিশ্ব রেকর্ডটা নিয়েই ট্র্যাকে নামবেন তিনি। তিনি ভেঙেছিলেন কেভিন ইয়ংয়ের ২০ বছরের পুরোনো রেকর্ড। গত ১ জুলাই ঘরের মাঠে বিশ্ব রেকর্ড গড়া ওয়ার্লহোম অবশ্য তাতে পুরোপুরি সন্তুষ্ট নন, তিনি চান টোকিও অলিম্পিকে আরও একটি বিশ্ব রেকর্ড, ‘আমি টোকিওতে আরও একটা বিশ্ব রেকর্ড গড়তে চাই।’ সেটি সম্ভব হবে কি না, তা দেখতে কয়েক দিন অপেক্ষা করতেই হচ্ছে।

টোকিওতে আরও একটি বিশ্ব রেকর্ড করতে চান ওয়ার্লহোম
ছবি: রয়টার্স

লেটেসেনবেট গিডে (ইথিওপিয়া)–১০ হাজার মিটার দৌড় (নারী)

১০ হাজার মিটার দৌড়ে ইথিওপিয়ার এই নারী দৌড়বিদ এবার টোকিও অলিম্পিকে নামবেন বড় সাফল্য পেতেই। নেদারল্যান্ডসের সিফান হাসানের সঙ্গে তাঁর ১০ হাজার মিটারের দ্বৈরথটা আলাদা করেই মনোযোগ কাড়বে সবার।

এই সিফান টোকিও অলিম্পিকে একই সঙ্গে ১৫০০ মিটার, ৫০০০ মিটার আর ১০ হাজার মিটার জিতে ‘অবিশ্বাস্য’ এক ট্রেবল অর্জন করতে চান। তবে ১০ হাজার মিটারে তাঁকে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জটা জানাবেন লেটেসেনবেট গিডে, যিনি গত ৮ জুন ২৯ মিনিট ০১.০৩ সেকেন্ড সময় নিয়ে সিফানেরই বিশ্ব রেকর্ড ভেঙেছেন। ৫০০০ মিটার দৌড়েও তিনি বিশ্ব রেকর্ডধারী। টোকিওতে তিনি নিজের রেকর্ডই ভেঙে ফেলতে চান, ‘আমি ২৯ মিনিটের রেকর্ডটি ভেঙে দিতে চাই। আমার মনে হচ্ছে, সেটি আমি পারব।’

১০ হাজার মিটার দৌড়ে সবার নজর থাকে তাঁর ওপর
ফাইল ছবি

ইউলিমার রোজাস (ভেনেজুয়েলা)–ট্রিপল জাম্প (নারী)

ভেনেজুয়েলার মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে পারবেন ইউলিমার রোজাস? এমনিতেই নানা সমস্যায় জর্জরিত ভেনেজুয়েলা। ইউলিমার যদি ট্রিপল জাম্পে অলিম্পিকে সোনা জিততে পারেন, তাহলে সেটি হবে ভেনেজুয়েলার মানুষের জন্য খুব বড় একটা স্বস্তি। অন্যরকম এক পাওয়া।

এমনিতেই ভেনেজুয়েলার অ্যাথলেটিকস ইতিহাসের অংশ রোজাস। তিনি ভেনেজুয়েলার প্রথম বিশ্ব শিরোপাজয়ী অ্যাথলেট। ২০১৬ সালের রিও অলিম্পিকে পাওয়া তাঁর রুপার পদকটিও অলিম্পিকে প্রথম ভেনেজুয়েলান হিসেবে পাওয়া অলিম্পিক পদক ছিল।

ভেনেজুয়েলানদের মুখে হাসি ফোটাতে পারবেন রোজাস?
ফাইল ছবি

গ্যাবি টমাস (যুক্তরাষ্ট্র)–স্প্রিন্ট (নারী)

এ যুগের ফ্লোরেন্স গ্রিফিথ জয়নার গ্যাবি?
ছবি: টুইটার

২৪ বছর বয়সী হার্ভার্ড গ্র্যাজুয়েট গ্যাবি টমাস কি টোকিওতে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ফ্লোরেন্স গ্রিফিথ জয়নার হতে যাচ্ছেন। ১৯৮৮ সিউল অলিম্পিকে গ্রিফিথ জয়নার যেভাবে সারা বিশ্বকে চমকে দিয়েছিলেন, তেমন কিছু করার পুরো সামর্থ্য এই গ্যাবি টমাসের আছে। হার্ভার্ডে থাকতেই তিনি দারুণ এক অ্যাথলেট হিসেবে পরিচিতি পান। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের প্রায় সব রেকর্ডই নিজের করে নিয়েছেন তিনি। এবার ২০০ মিটার স্প্রিন্টে ট্র্যাকে নামবেন। যুক্তরাষ্ট্রের অলিম্পিক ট্রায়ালেই ২১.৬১ সেকেন্ড সময় নিয়ে তিনি রেকর্ড করেছেন। এই টাইমিং ইতিহাসের তৃতীয় সেরা টাইমিং। সর্বকালের সেরা টাইমিংয়ের তালিকায় তিনি ছাড়িয়ে গেছেন কিংবদন্তি গ্রিফিথ জয়নারকেও। অলিম্পিকে বড় লক্ষ্য নিয়েই ট্র্যাকে নামছেন তিনি।