আত্মহত্যা করা মেয়েটির কোচের ৭ বছরের জেল

দক্ষিণ কোরিয়ার অ্যাথলেট চই সুক হেয়ন
ছবি: টুইটার

দক্ষিণ কোরিয়ার এক ট্রায়াথলন কোচকে সাত বছর কারাবাসের রায় দিয়েছেন আদালত। চই সুক-হেয়ন নামের এক নারী অ্যাথলেটকে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগে এ শাস্তি পেলেন তিনি। গত বছরের জুন মাসে আত্মহত্যা করেন চই সুক-হেয়ন।

দক্ষিণ কোরিয়ার ক্রীড়াঙ্গনে সাম্প্রতিক সময়ে ক্রীড়াবিদদের ওপর কোচ ও কর্মকর্তাদের নির্যাতনের খবর সংবাদমাধ্যমে উঠে এসেছে। দেশটির খেলাধুলায় ভীষণ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ পরিবেশে কর্তৃপক্ষের কথায় ওঠাবসা করতে হয় ক্রীড়াবিদদের।

শাস্তি পাওয়া কোচের নাম কিম গাই-বং। তিনি চইয়ের সাবেক অধিনায়ক ও সতীর্থ। দেগুর জেলা আদালত রায়ে কিম গাই-বংকে চইয়ের মৃত্যুর জন্য দোষী সাব্যস্ত করেন। আদালতের পক্ষ থেকে বলা হয়, মেয়েটি সবার ‘ক্ষমাপ্রার্থনা মেনে নিতে পারেননি’।

২০১৫ এশিয়ান ট্রায়াথলনে মেয়েদের জুনিয়র ইভেন্টে ব্রোঞ্জ জিতেছিলেন চই সুক-হেয়ন। ২২ বছর বয়সী এ অ্যাথলেট গত জুনে দলীয় ডরমিটরি ভবন থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করেন। বছরের পর বছর কোচিং স্টাফ এবং আগের ক্লাবের সতীর্থদের শারীরিক ও ভাষাগত অত্যাচার মেয়েটি সহ্য করতে পারেননি।

আত্মহত্যার আগে মাকে পাঠানো সর্বশেষ খুদে বার্তায় মেয়েটি নির্যাতনকারীদের ‘সব পাপ ফাঁস করে দেওয়া’র অনুরোধ করেছিলেন। এই খুদে বার্তা তখন ঝড় তুলেছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

কৌঁসুলিরা এই মামলার শুরুতে কিম গাই-বংয়ের নয় বছর কারাবাসের শাস্তি দাবি করেছিলেন। একই অভিযোগে চইয়ের দলীয় অধিনায়ক জ্যাং উন-জুনকে চার বছর কারাবাসের শাস্তি দিয়েছেন আদালত।

ইয়োনহাপ সংবাদ সংস্থা আদালতকে উদ্ধৃত করে লিখেছে, ‘অভিযুক্ত ব্যক্তি তাঁর ক্ষমতার অপব্যবহার করে চইকে দীর্ঘদিন শারীরিক ও ভাষাগত নির্যাতন করেছেন। এমনকি অভিযুক্তের অনুশোচনা ও ক্ষমাপ্রার্থনাও মেনে নিতে পারেননি মেয়েটি।’

একই মামলায় গত সপ্তাহে শাস্তি পান চই সুক-হেয়নের শারীরিক থেরাপিস্ট। তাঁকে যৌন ও শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগে আট বছর কারাদণ্ডের পাশাপাশি ১০ মিলিয়ন ওন (দক্ষিণ কোরিয়ার মুদ্রা) জরিমানা করেন আদালত।

২০১৬ সালে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে চতুর্থ হন চই সুক-হেয়ন। নিজের প্রতিভার প্রতি সুবিচার করতে পারেননি সে আসরে। দুই বছর আগে একই টুর্নামেন্টে ১৪তম হন তিনি।

চই সুক হেয়ন।
ছবি: টুইটার

গত বছর এক অডিও রেকর্ডিংয়ে চইয়ের ওপর সরাসরি ক্ষোভ প্রকাশ করেন তাঁর কোচ কিম গাই-বং, ‘তোমাকে তিন দিন না খেয়ে থাকতে হবে। যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলে, তা তুমি রাখতে পারোনি।’

দক্ষিণ কোরিয়া খেলাধুলায়, বিশেষ করে অ্যাথলেটিকসে, এ অঞ্চলে শক্তিশালী দেশগুলোর একটি। অলিম্পিকে শীর্ষ পদক বিজয়ীর তালিকায় থাকেন দেশটির অ্যাথলেটরা। কিন্তু সেখানকার খেলাধুলায় কোচরা অপরিসীম ক্ষমতা রাখেন এবং অপব্যবহার করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।