আরও যা খেলতে ভালো লাগে পুতিনের

জর্জ ডব্লু বুশকে নিজের ড্রাইভিং দক্ষতা দেখিয়েছেন পুতিনফাইল ছবি: রয়টার্স

দুষ্টু লোকজন চাইলে বলতেই পারেন, ‘কেন, যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলাটাই তো সবচেয়ে ভালো পারেন পুতিন!’

গত বৃহস্পতিবার ইউক্রেনে সামরিক হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। আনুষ্ঠানিকভাবে কৌশলগত এই হামলার ঘোষণা দিয়ে ইউরোপে বহুদিন পর যুদ্ধের দিন ফিরিয়েছেন ভ্লাদিমির পুতিন। ইউক্রেনকে তিন দিক থেকে আক্রমণ করেছে রাশিয়া। তাঁর এমন আগ্রাসনের মাঝে এত দিন ইউক্রেনকে সাহস জুগিয়ে যাওয়া দেশগুলোর এগিয়ে আসার ইঙ্গিতও খুব একটা মিলছে না। যে ন্যাটোকে ঘিরে এই বিপর্যয়ের সূত্রপাত, তারা আক্ষরিক অর্থেই ডুব মেরেছে। যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলায় বা রণকৌশলে পুতিনকে তাই আপাতত এগিয়ে রাখতে হচ্ছে।

তবে এর বাইরে সত্যিকারের খেলার জগতেও পুতিনের সরব উপস্থিতি। ভ্লাদিমির পুতিনের বয়স ৭০ হতে আর খুব বেশি বাকি নেই। এই বয়সেও রাশিয়ান প্রেসিডেন্টের শারীরিক দক্ষতা মাঝেমধ্যেই সংবাদপত্রের খবর হয়। পুতিনের সুস্বাস্থ্য ও শারীরিক গঠনের পেছনে অবশ্য কোনো রহস্য নেই। খেলাধুলার প্রতি পুতিনের আকর্ষণ তো বেশ আগে থেকেই প্রচারিত।  

২০১৮ বিশ্বকাপ রাশিয়ায় আয়োজন করতে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে পুতিনকে
ফাইল ছবি: রয়টার্স

এক সাক্ষাৎকারে একবার পুতিন বলেছিলেন, দিনে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা খেলে পার করেন। এর মধ্যে ব্যায়াম আছে, সাঁতারও আছে। আর সঙ্গী জুটে গেলে জুডোর প্যাঁচও কষা হয় নিয়মিত। ফুটবল খেলারও নিয়মিত দর্শক তিনি। পছন্দের ফুটবলার খুঁজতে গিয়ে অবশ্য এখনো অতীতেই তাকান। পেলে, লেভ ইয়াসিনের সঙ্গে পুতিনের প্রিয় খেলোয়াড়ের তালিকায় ‘নবীনতম’ সংযোজন ডিয়েগো ম্যারাডোনা। নিজ দেশে বিশ্বকাপ আয়োজনের পেছনে অবশ্য ফুটবলের প্রতি ভালোবাসার চেয়ে নিজের প্রশ্নবোধক কাজগুলোকে বিশ্বের কাছে গ্রহণযোগ্য করে নেওয়াটাই বেশি ভূমিকা রেখেছিল বলে দাবি করা হয়।

সে আলোচনা অনেক বেশি রাজনৈতিক ও বিতর্কিত। এর চেয়ে চলুন কোন কোন ক্রীড়াযজ্ঞে পুতিন নিজেকে ব্যস্ত রাখেন, তার খবর জানা যাক।

জুডোর ম্যাটে পুতিন
ফাইল ছবি: রয়টার্স

জুডো

পুতিনের সবচেয়ে প্রিয় খেলা এটি। ১১ বছর বয়সে জুডোতে নাম লেখান পুতিন। রাশিয়া বিয়ন্ডে তাঁর প্রথম কোচ আনাতোলি রাখলিন বলেছিলেন, ‘যখন সে শুরু করল, ওর কোনো প্রতিভা ছিল না এবং অন্যদের চেয়ে ওকে আলাদা করা যাচ্ছিল না। কিন্তু যত সময় এগিয়েছে সে দুর্দান্ত ফল দেখিয়েছে। ম্যাটে ভ্লাদিমির প্যানথারের মতো, শেষ সেকেন্ড পর্যন্ত লড়ে।’ পিঠের ওপর দিয়ে ও দুই হাত ধরে প্রতিপক্ষকে ছুড়ে মারা জুডোতে পুতিনের ট্রেডমার্ক মুভ ছিল।

২১ বছর বয়সে লেনিনগ্রাদে জুডো চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন পুতিন, পেয়েছিলেন মাস্টার্স র‍্যাঙ্ক। এখনো সুযোগ পেলে জুডোকাদের সঙ্গে ম্যাটে নিজেকে ঝালিয়ে নেন। জুডোর পাশাপাশি কারাতেতেও অংশ নেন পুতিন।

আইস হকি রিংয়ে পুতিন
ফাইল ছবি: রয়টার্স

আইস হকি

জুডোর মতো শৈশবেই প্রেমে পড়েননি, কিন্তু এখন সবচেয়ে বেশি টান এই খেলাতেই অনুভব করেন পুতিন। গত মে মাসে নিজেদের টিকা স্পুতনিক ভির কার্যকারিতা প্রমাণ করতে আইস হকিকেই ব্যবহার করেছিলেন। প্রায় দেড় বছর পর আইস হকির রিংয়ে নেমেছিলেন গত ১০ মে।

অথচ ২০১১ সালের আগেও স্কেটিং করতে জানতেন না রুশ প্রেসিডেন্ট। ২০১১ সালের জানুয়ারিতে তুরস্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের শীতকালীন অলিম্পিকে অ্যাথলেটদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, স্কেটিং শেখার চেষ্টা করবেন। তখন পুতিন বলেছিলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম, এটা একেবারে অসম্ভব। আমি একবার শেখার চেষ্টা করেছিলাম, যখন মার্শাল আর্টস অনুশীলন করতাম।’

বিশ্বকাপ জেতা সাবেক আইস হকি তারকা অ্যালেক্সি কাসাতোনোভ পুতিনের কোচের ভূমিকা নেন। পুতিন বলেছিলেন, ‘আমি ১২ বছরের এক ছেলের সঙ্গে কথা বলেছি, সে ৯ বছর অনুশীলন করেছে। আমি মাত্র দুই মাস ব্যয় করেছি। চেয়ার ধরে স্কেটিং শিখেছি আমি। এর আগে তো কখনো স্কেটিং করিনি, আমি এমনকি স্কেটে দাঁড়াতেও পারতাম না।’

২০১১ সালের এপ্রিলের মধ্যেই আইস হকিও শিখে ফেলেন পুতিন। রাশিয়ান নাইট হকি লিগে নিয়মিত খেলা শুরু করেছেন এরপর। গত বছর সে লিগেই খেলতে নেমে দলের ১৩ গোলের মধ্যে ৯টি করেছিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট।

রেস কারে চালকের আসনে পুতিন
ফাইল ছবি

ড্রাইভিং

নিজে গাড়ি চালিয়ে অতিথিদের এলাকা ঘুরিয়ে দেখানোর শখ আছে পুতিনের। ২০০৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লু বুশকে ১৯৫৬ সালের বিখ্যাত জিএজেড-২১ ভলগায় চড়িয়েছেন। সোচি শীতকালীন অলিম্পিকের সময় অলিম্পিক কমিটির প্রধানকে নিভায় নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন। ২০১০ সালে একবার চার দিনে ২০০০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে রাশিয়ার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে গেছেন সঙ্গে থাকা সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে।

স্পোর্টস কারেও নিজের দক্ষতা দেখিয়েছেন পুতিন। ২০১০ সালে ফর্মুলা ওয়ানের এক গাড়ি চালিয়ে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২৪০ কিলোমিটার গতি তুলেছেন।

বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্দর লুকাশেঙ্কোর সঙ্গে স্কিইং করতে দেখা গেছে পুতিনকে
ফাইল ছবি: এএফপি

মাউন্টেন স্কিইং

রাশিয়ার অলিম্পিক কমিটির সাবেক প্রেসিডেন্ট লিওনিদ ত্যাগাশেভকে ব্যক্তিগত কোচ হিসেবে পেয়েছেন পুতিন। মাউন্টেন স্কিইংয়েও নাকি খুব কম সময়ে বিস্ময়কর সাফল্য দেখিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট। ত্যাগাশেভের চোখে, ‘স্বাভাবিক ট্রেনিং কোর্সের মধ্য দিয়ে যাননি ভ্লাদিমির পুতিন। শুরুতে একই ভুল বারবার করতেন, কিন্তু দুই বছরে তাঁর দক্ষতায় উন্নতি এনেছি। এখন খুব ভালো গতিতে নিচে নামতে পারেন। আমরা রাতে কৃত্রিম আলোয় অনুশীলন করি। সাধারণত মধ্যরাতে শুরু করে রাত ১টা বা ২টায় শেষ করি।’ অপেশাদার স্কিয়ারের চেয়ে নাকি অনেক এগিয়ে পুতিন।

ডাইভ দিয়ে ‘অমূল্য’ নিদর্শন তুলে এনেছেন পুতিন
ফাইল ছবি: রয়টার্স

ডাইভিং

না, অলিম্পিকে যেমন দেখা যায়, বোর্ড থেকে লাফ দিয়ে নানা কসরত দেখানো ডাইভ করেন না পুতিন। রুশ প্রেসিডেন্টের এই ডাইভিং গভীর সমুদ্রে। অক্সিজেন সিলিন্ডার ও গগলস পরে ডাইভ দেন পুতিন। ২০১১ সালে তামান উপসাগরে ডাইভ দিয়ে ‘রাশিয়ান আটলান্টিস’ দেখতে গিয়েছিলেন তিনি। তামান উপদ্বীপে একসময় গড়ে উঠেছিল প্রাচীন গ্রিক শহর ফ্যানাগোরিয়া। পানিতে নিমজ্জিত সে শহরে ধ্বংসস্তূপকেই রাশিয়ান আটলান্টিস ডাকা হয়।

রাষ্ট্রচালনা, প্রতিবেশী দেশগুলোকে ‘সামলে’ রাখার পাশাপাশি পুতিন মাঝেমধ্যেই হাইকিংয়ে যান। এ ছাড়া বক্সিং, সাঁতার, ব্যাডমিন্টন, ঘোড়সওয়ারিতেও বেশ পটু রুশ প্রেসিডেন্ট। তবে মাছ ধরার প্রতি টানটা তাঁর অনেক বেশি। ২০১৩ সালে তুভায় ২১ কেজি ওজনের একটি পাইক মাছ ধরে আলোড়ন তুলেছিলেন পুতিন। তাঁর ভাষায়, ‘এরা এত বুদ্ধিমান ও সতর্ক। খুব দ্রুত কাদার নিচে লুকিয়ে যায়।’ এ কারণে বল্লম ফেলে বড়শি বেছে নিতে হয়েছিল, সেটাও বলেছিলেন।