ইসরায়েলি প্রতিপক্ষকে ‘না’ বলা জুডোকা দেশে ফিরে ভাসছেন প্রশংসায়

ফেথি নুরিনছবি: টুইটার

অলিম্পিক শেষে দেশে ফিরেছেন তিনি। ফেরার পর যেভাবে বীরের সম্মান পাচ্ছেন, ঘটনা না জেনে থাকলে কেউ হয়তো ধরে নিতেন, ফেথি নুরিন বুঝি অলিম্পিকে পদকটদক জিতেছেন। কিন্তু তেমন কিছুই নয়, অলিম্পিকে গিয়েও না খেলেই দেশে ফিরেছেন আলজেরিয়ার এই জুডোকা। কিন্তু আলজেরিয়ানদের কাছে তাঁর এই না খেলাই এখন যেন সোনার পদকের চেয়ে বেশি দামি!

কেন? নুরিন না খেলার কারণ যে ইসরায়েলের এক প্রতিপক্ষকে এড়িয়ে যাওয়া! ফিলিস্তিনের ওপর ইসরায়েলের নির্মম অত্যাচার আর নিয়মিত হামলার প্রতিবাদে মুসলিম বিশ্বে প্রতিবাদ হয়, নুরিনও প্রতিবাদ করেছিলেন তাঁর মতো করে। ছেলেদের ৭৩ কেজি শ্রেণিতে প্রথম রাউন্ডে জিতলে দ্বিতীয় রাউন্ডে ইসরায়েলের তোহার বাটবালের মুখোমুখি হওয়া নিশ্চিত ছিল, সে কারণে প্রথম রাউন্ডেই খেলেননি নুরিন।

কিন্তু তাতে মোটেও আফসোস নেই আলজেরিয়ানদের। আরব বিশ্বের প্রশংসাও পাচ্ছেন নুরিন। দেশে ফিরে নুরিন গর্বভরে জানালেন, আলজেরিয়ার প্রেসিডেন্টের কাছ থেকেও প্রশংসা পেয়েছেন তিনি।

আলজেরিয়ান জুডোকা ফেথি নুরিন
ছবি: তেহরান টাইমস টুইটার

অলিম্পিক থেকে না খেলেই দেশে ফেরা নুরিন আলজেরিয়ায় নেমেছেন গত বুধবার রাতে। আলজিয়ের্স বিমানবন্দরে নেমেই গর্বভরে নুরিন জানিয়েছেন নিজের সিদ্ধান্তে তৃপ্তির কথা, ‘আমার কোচ আর আমি মিলে (না খেলার) সিদ্ধান্তটা নিয়েছি এবং এই সিদ্ধান্ত নিয়ে গর্ব হয় আমার। এই সিদ্ধান্ত সবার আগে আমাকে সম্মানিত করছে, আমার পরিবারকে সম্মানিত করছে, আলজেরিয়ার মানুষ আর আলজেরিয়া পুরো দেশটাকে সম্মান এনে দিচ্ছে। কারণ, প্রেসিডেন্ট আবদেলমাদজিদ তেববুন বিশ্বের কাছে আগেই ঘোষণা করে দিয়েছিলেন যে আমরা এই ব্যাপারগুলোকে স্বাভাবিকীকরণের সঙ্গে একমত নই, আমরা ফিলিস্তিনের পক্ষেই আছি।’

ইসরায়েলকে দেশ হিসেবেই স্বীকৃতি দিতে রাজি নন নুরিন। ইসরায়েলকে ‘জিওনিস্ট রাজ্য’ উপাধি দিয়ে নুরিন বললেন, ‘আমার ভালো লাগছে যে ওই জিওনিস্ট রাজ্যটাকে একটু খেপিয়ে দিতে পেরেছি।’ আলজেরিয়ার বাইরে থেকেও প্রশংসাবানে ভেসে যাওয়ার কথাও জানালেন, ‘আরব ও মুসলিম বিশ্ব থেকে প্রশংসা জানানো অনেক ফোন কলও পেয়েছি এ কারণে।’

নুরিনের পর সুদানের জুডোকা মোহামেদ আবদালরাসুলও ইসরায়েলের বাটবালের বিপক্ষে ম্যাচের আগে অলিম্পিক থেকে সরে গেছেন
ছবি: অলিম্পিক ওয়েবসাইট

৭৩ কেজি ওজন শ্রেণির প্রথম রাউন্ডে ২৪ জুলাই সুদানের মোহামেদ আবদালরাসুলের বিপক্ষে খেলার কথা ছিল নুরিনের। সে ম্যাচে জিতলে পরের রাউন্ডে মুখোমুখি হতেন তোহার বাটবালের। কিন্তু আবদালরাসুলের বিপক্ষে ম্যাচের চার দিন আগে নুরিন জানিয়ে দেন, তিনি খেলবেনই না!

কারণ হিসেবে বলেছিলেন, ‘ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়ানো এসব কিছুর (অলিম্পিকে খেলা) চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আর এ সিদ্ধান্তে কোনো নড়চড় হবে না।’

নুরিন সরে যাওয়ায় আবদালরাসুল দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠে যান ঠিকই, কিন্তু তিনিও দ্বিতীয় রাউন্ডে আর ইসরায়েলের বাটবালের মুখোমুখি হননি। তিনি অবশ্য না খেলার কোনো কারণ ব্যাখ্যা করেননি।

দেশে ফেরার পর নিজের সিদ্ধান্তের নেপথ্যের সময়টার ব্যাখ্যায় নুরিন বললেন, ‘যখন দেখলাম ওই জিওনিস্ট রাজ্যের রেসলারের সঙ্গে ড্রতে আমাকে একই সঙ্গে রাখা হয়েছে, থমকে গিয়েছিলাম। এমন কিছু হবে ভাবতেই পারিনি। তবে এটা দেখার পর না খেলার সিদ্ধান্ত নিতে আমার একমুহূর্তের জন্যও সংশয় কাজ করেনি।’

তবে নুরিনের সিদ্ধান্তটা ভালোভাবে নেয়নি আন্তর্জাতিক জুডো ফেডারেশন (আইজেএফ)। অলিম্পিক কর্তৃপক্ষ তো নুরিনকে দেশে পাঠিয়ে দিয়েছেই, আইজেএফ নুরিন আর তাঁর কোচ আম্মার বেনখলেফকে সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করেছে জুডো থেকে। বিবৃতিতে আইজেএফ লিখেছে, নুরিনের সিদ্ধান্ত আইজেএফের দর্শনের সঙ্গে যায় না, যে দর্শন জুডোর ময়দানে কোনো বৈষম্যকে উৎসাহিত করে না।

নুরিনের এমন সিদ্ধান্ত অবশ্য এবারই প্রথম নয়। এই টোকিওতেই ২০১৯ বিশ্ব জুডো চ্যাম্পিয়নশিপে এই বাটবালের বিপক্ষেই ম্যাচ পড়েছিল নুরিনের, সেবারও ম্যাচ না খেলেই টুর্নামেন্ট থেকে সরে যান আলজেরিয়ান এই জুডোকা।