উপমহাদেশীয়দের হাত ধরেই ইংল্যান্ডে কাবাডি

নামেই ইংল্যান্ড কাবাডি দল! ইংলিশ শুধু দুই জন। বাকিদের মধ্যে সোমেশ্বর কালিয়া, যুবরাজ পান্ডিয়া, মিলান কমলেশ নাইয়ি, দুই সহোদর কেশব গুপ্ত ও বিনয় গুপ্ত ভারতীয় বংশোদ্ভূত। আছেন একজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতও, যাঁর নাম তাহের কবির, আদি নিবাস সিলেটে। এঁদের নিয়েই দল গড়েছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত কোচ সঞ্জয় প্যাটেল।

ঢাকায় খেলতে আসা ইংল্যান্ড কাবাডি দলছবি: প্রথম আলো

কেশব গুপ্ত পেশায় চিকিৎসক। তাহের কবির ডেন্টিস্ট। সোমেশ্বর কালিয়া ফার্মাসিস্ট। পেশা আলাদা হলেও একটা জায়গায় তাঁদের মধ্যে মিল। তাঁরা সবাই ইংল্যান্ডের হয়ে কাবাডি খেলেন!

ইংল্যান্ডের একটা কাবাডি দল আছে, সেটা অনেকের কাছে বিস্ময়কর লাগতে পারে। ঢাকায় চলমান বঙ্গবন্ধু কাপ আন্তর্জাতিক কাবাডি টুর্নামেন্টে ইংল্যান্ড দলকে খেলতে দেখেও হয়তো অনেকে অবাক হয়েছেন। খেলাপ্রিয় ইংলিশরা ফুটবল-ক্রিকেট-রাগবি-হকি-অ্যাথলেটিকসে পরাশক্তি। ফুটবল ও রাগবিতে তো সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়নই। কাবাডি ঠিক এ খেলাগুলোর মতো বৈশ্বিক নয়, ইংলিশদের সঙ্গে এ খেলাটার পরিচয়ও তাই বেশি দিনের নয়। যেহেতু কাবাডি মূলত উপমহাদেশীয় খেলা, ইংল্যান্ডের কাবাডি দলটাও গড়ে উঠেছে উপমহাদেশীয় বংশোদ্ভূত খেলোয়াড়দের নিয়ে।

‘আমরা যে বাংলাদেশের চেয়ে কতটা পিছিয়ে, তা ওই দিন খেলার পরই বুঝেছি। ওরা প্রতিদিন খেলে, আমরা মাঝেমধ্যে খেলি।’
তাহের কবির

সেই অর্থে এটা নামেই ইংল্যান্ড কাবাডি দল! এ দলের ক্রিস্টোফার ওয়েলিংটন ও থমাস ডাউট্রেই শুধু ইংলিশ। বাকিদের মধ্যে সোমেশ্বর কালিয়া, যুবরাজ পান্ডিয়া, মিলান কমলেশ নাইয়ি, দুই সহোদর কেশব গুপ্ত ও বিনয় গুপ্ত ভারতীয় বংশোদ্ভূত। আছেন একজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতও, যাঁর নাম তাহের কবির, আদি নিবাস সিলেটে। এঁদের নিয়েই দল গড়েছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত কোচ সঞ্জয় প্যাটেল।

খেলোয়াড়দের বেশির ভাগই পড়াশোনা করছেন লন্ডনের ইমপেরিয়াল কলেজ, কিংস কলেজ, লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস, বার্মিংহাম ইউনিভার্সিটি, ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটিতে। পাশাপাশি খণ্ডকালীন পেশায়ও ব্যস্ত কেউ কেউ। খেলোয়াড়েরা বিভিন্ন জায়গায় ছড়ানো–ছিটানো থাকায় একসঙ্গে অনুশীলনও হয় খুব কম।

২০০৩ সালে গঠিত হয়েছে ইংল্যান্ড কাবাডি অ্যাসোসিয়েশন। এরপর ২০০৪ সালে মুম্বাইয়ে প্রথমবার ১৪ দেশের কাবাডি বিশ্বকাপে অংশ নেয় ইংল্যান্ড। সর্বশেষ ২০১৬ সালে আহমেদাবাদ বিশ্বকাপেও খেলেছেন ইংলিশরা। বিশ্ব র‍্যাঙ্কিংয়ে বর্তমানে ইংল্যান্ডের অবস্থান ১৫তম।

ইংল্যান্ডের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্র কাবাডিতে আগ্রহী হলেও ক্যাম্পাসে নেই অনুশীলনের সুবিধা। কোচ সঞ্জয় প্যাটেল গতকাল পল্টন কাবাডি স্টেডিয়ামে দাঁড়িয়ে দুঃখের সঙ্গে বলছিলেন, ‘লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের ৯ হেক্টর জমির ওপর খেলাধুলার জায়গা গড়ে তোলা হয়েছে। এ ক্যাম্পাসে ৭টি ফুটবল মাঠ, ২টি রাগবি মাঠ, ২টি ক্রিকেট পিচ ও ১টি টেনিসের ঘাসের কোর্ট আছে। ওই ক্যাম্পাসের বেজমেন্টে একটা ছোট ব্যাডমিন্টন কোর্ট আছে, সেখানেই ম্যাট বিছিয়ে চলে কাবাডি দলের অনুশীলন। কখনো জুডো ম্যাটে খালি পায়েও অনুশীলন করে খেলোয়াড়েরা।’

সঞ্জয়ের বাবা ষাটের দশকে ইংল্যান্ডে পাড়ি জমান। সেখানেই জন্ম সঞ্জয়ের। আর ভারতীয়দের তো কাবাডির প্রতি একটা আলাদা টান আছেই। লন্ডনের ইমপেরিয়াল কলেজের হয়ে তিন বছর কাবাডি খেলেছেন সঞ্জয়। ইংল্যান্ড জাতীয় দলে খেলেছেন দুই বছর। পরে হয়েছেন ইংল্যান্ড জাতীয় দলের কোচ। ভালোবাসা থেকেই নিজেদের ঐতিহ্যবাহী খেলাটা ইংল্যান্ডে ছড়িয়ে দিতে কাজ করছেন সঞ্জয়, ‘এই ছেলেরা আগে কখনো কাবাডি খেলেনি। বিশ্ববিদ্যালয় টুর্নামেন্টে প্রথম খেলেছে। কাবাডির প্রতি ওদের আগ্রহ অনেক। জাতীয় দলে খেলার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনুমতিও নিয়েছে ওরা। এদের নিয়ে ইংল্যান্ডে কাবাডি আরও জনপ্রিয় করতে চাই।’

সর্বশেষ ২০১৬ সালে আহমেদাবাদ বিশ্বকাপেও খেলেছেন ইংলিশরা। বিশ্ব র‍্যাঙ্কিংয়ে বর্তমানে ইংল্যান্ডের অবস্থান ১৫তম।

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তাহের কবিরের বাবা জাহাঙ্গীর কবির ও মা সালেহা খান জীবিকার টানে সিলেটের বিয়ানিবাজার থেকে নব্বইয়ের দশকে ইংল্যান্ডে পাড়ি জমান। সেখানেই জন্ম তাহেরের। বাংলাদেশে খেলতে এসে রোমাঞ্চিত তাহের, ‘মা-বাবাকে বলতেই অনুমতি দিয়েছেন। সিলেটে নানা-নানি আছেন। ওঁদের সঙ্গে কথা বলেছি। বাবা-মায়ের দেশে আসতে পেরে খুব ভালো লাগছে।’

পরশু বাংলাদেশের কাছে ইংল্যান্ডের হারের পর নিজেদের সামর্থ্য বুঝে গেছেন তাহের, ‘আমরা যে বাংলাদেশের চেয়ে কতটা পিছিয়ে, তা ওই দিন খেলার পরই বুঝেছি। ওরা প্রতিদিন খেলে, আমরা মাঝেমধ্যে খেলি।’

তবে আনন্দ পেলে একসময় ইংলিশরাও ফুটবল-ক্রিকেটের মতো কাবাডিতে মজবেন, এমন আশা ভারতীয় বংশোদ্ভূত সোমেশ্বরের, ‘ইংল্যান্ডে প্রচুর খেলা। কিন্তু পশ্চিমা বিশ্বে নতুন কিছু পরিচয় করিয়ে দেওয়াটা আমাদের জন্য সহজ। ইংলিশরাও নতুন জিনিস শেখার ব্যাপারে কৌতূহলী।’