কিংবদন্তিদের তালিকায় থম্পসন-হেরা

অলিম্পিক রেকর্ড আজ সোনা জিতেছেন থম্পসন-হেরাছবি: রয়টার্স

আলো এভাবেই কাড়তে হয়!

একটু আগেই পুরো স্টেডিয়াম অন্ধকার হয়ে গিয়েছিল। টোকিও অলিম্পিক তার ছাপ রাখতে গিয়ে ১০০ মিটার ফাইনালের আগে আলো নিভিয়ে দিয়েছিল পুরো স্টেডিয়ামের। শুধু ট্রাকেই খেলা করেছে আলোর রোশনাই। একটু পর সে আলো ছুঁয়ে গেছে সব অ্যাথলেটকে। মেয়েদের ১০০ মিটারের ফাইনালে দৌড়াবেন যাঁরা। সে আলোটা একটু হলেও বেশি ছিল শেলি অ্যান ফ্রেজার-প্রাইসের মুখে।

এতে রাগ হতে পারত এলেইন থম্পসন-হেরার। বর্তমান অলিম্পিক সোনাজয়ী তিনি। ফ্লোরেন্স গ্রিফিথ জয়নারের অবিশ্বাস্য ১০.৬২ সেকেন্ডের সে দৌড়ের পর অলিম্পিক ফাইনালে সেরা টাইমিং তাঁর। তবু আলোচনাটা ফ্রেজার-প্রাইসকে নিয়েই!

এতটাই এগিয়েছিলেন থম্পসন
ছবি: রয়টার্স

সে আলোচনাটা নিজের দিকে টেনে নিতে খুব বেশি সময় নেননি। একেবারে নিখুঁত করে বলতে গেলে ১০.৬১ সেকেন্ড। এটুকুই দরকার হয়েছে থম্পসন-হেরার ১০০ মিটার পার হতে। দৌড় শেষ হওয়ার আগেই বিজয় উল্লাস করেছেন, যেমনটা দেখাতেন উসাইন বোল্ট। বোল্টের মতোই শেষ দিকে এসে আগেই উল্লাস করায় গতি কিছুটা কমে এসেছিল, তবু থম্পসন যখন দাগ পেরোলেন, ইলেকট্রনিক স্কোরবোর্ড সময় দেখাল ১০.৬০ সেকেন্ড। আরও একবার অলিম্পিকের সোনা জিতে নিলেন ২৯ বছর বয়সী এলেইন থম্পসন-হেরা।

১০.৬০ সেকেন্ডের সঙ্গে একটু পরই ০.০১ সেকেন্ড যোগ করা হয়েছে ভুল শুধরে নিয়ে। তাতেও আপত্তি হওয়ার কথা নয় থম্পসনের। মেয়েদের ১০০ মিটারের দুটি রেকর্ড প্রায় অস্পর্শনীয় বলে ভাবা হয়। ১৯৮৮ সালে অলিম্পিকের জন্য বাছাইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরেন্স গ্রিফিথ-জয়নার ১.৪৯ সেকেন্ডে দৌড় শেষ করেছিলেন। সে ফর্ম সিওল অলিম্পিকে টেনে এনে ফাইনালে ১০.৬২ সেকেন্ডে দৌড় শেষ করেছিলেন। এ দুটি রেকর্ড বহু চেষ্টাতেও কেউ ছুতে পারেননি এত দিন।

তাঁরা দুজন
ছবি: রয়টার্স

সে রেকর্ডটা আজ থেকে এলেইন থম্পসনের। বিশ্ব রেকর্ড এখনো নাগালের বাইরে রয়ে গেলেও এখন থেকে অন্তত অলিম্পিকে মেয়েদের ১০০ মিটার বাকি সবার লক্ষ্য হবে থম্পসনের রেকর্ড ভাঙার।

রিও অলিম্পিকেও ফেবারিট শেলি অ্যান ফ্রেজার-প্রাইসকে হারিয়ে সোনা জিতেছিলেন। সাধারণত বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের নিয়েই আগ্রহ থাকে। কিন্তু এবারও আগ্রহটা ছিল ফ্রেজার-প্রাইসকে নিয়ে। ২০০৮ ও ২০১২ অলিম্পিকের সোনাজয়ীর এটাই শেষ অলিম্পিক, এটা একটা কারণ।

দ্বিতীয়ত, এবার দুর্দান্ত ফর্মে ছিলেন ফ্রেজার প্রাইস। গ্রিফিথ জয়নারের পর ইতিহাসের দ্বিতীয় সেরা সময় এ বছরই করেছেন ফ্রেজার। কিংস্টনে ১০.৬৩ সেকেন্ডে দৌড় শেষ করেছিলেন। জ্যামাইকার অলিম্পিক বাছাইয়েও শেরিকা জ্যাকসন (টোকিওর ব্রোঞ্জজয়ী) ও থম্পসনকে হারিয়ে প্রথম হয়েছিলেন।

অবিশ্বাস্য কীর্তির পর থম্পসন
ছবি: রয়টার্স

ওদিকে রিও অলিম্পিকের পর থেকেই নিজের ফর্ম হারিয়ে ফেলেছিলেন থম্পসন। তবে অলিম্পিক যত এগিয়ে এসেছে ততই নিজেকে ফিরে পেয়েছেন। ৬ জুলাই ২০১৭ সালের পর ১০.৭১ সেকেন্ডে দৌড়েছিলেন। গতবার এই সময় দিয়েই অলিম্পিক সোনা জিতেছিলেন। কিন্তু ফ্রেজার-প্রাইসের টাইমিং যে এর চেয়েও ভালো ছিল!

এ কারণে আত্মবিশ্বাসে যে একটু হলেও ঘাটতি ছিল সেটা স্বীকার করেছেন থম্পসন, ‘এত বেশি চোটে পড়েছি আমি। আমি যে ট্র্যাকে ফিরতে পেরেছি তাতেই খুশি। এবং এ বছরই ফিরে শিরোপা ধরে রাখতে পেরেছি। এখন শুধু আরেকটি বাকি (২০০ মিটার)।’

ট্র্যাকেই শুয়ে পড়েছিলেন থম্পসন
ছবি: রয়টার্স

ফাইনালেও এগিয়ে ছিলেন ফ্রেজার। প্রথম পঞ্চাশ মিটারে থম্পসনকে হারিয়ে দেবেন বলেই মনে হচ্ছিল। কিন্তু মূল সময়ে এসে ঠিকই গতি বাড়িয়ে নিয়েছেন থম্পসন।

একপর্যায়ে তাঁর ঘণ্টায় ৩৯ কিলোমিটারের বেশি পার হয়েছে। এ কারণেই কয়েক ধাপ আগ থেকেই সোনা জেতার আনন্দ করতে করতেই দৌড় শেষ করতে পেরেছেন। ওদিকে রিও অলিম্পিকের চেয়ে ভালো দৌড়েও (১০.৭৪ সেকেন্ড) দ্বিতীয় হয়েছেন ফ্রেজার-প্রাইস। ওদিকে জ্যাকসন ১.৭৬ সেকেন্ড নিয়ে হয়েছেন তৃতীয়।

এমন এক জয়ের পর ট্র্যাকেই শুয়ে পড়েছিলেন, কারণ কী করবেন সেটাই বুঝতে পারছিলেন না, ‘আমি শব্দ খুঁজে পাচ্ছিলাম না। এত খুশি ছিলাম যে ভয়ংকর জোরে চিৎকার করেছি।’

ফ্রেজার দেখছেন কীভাবে তাঁকে টপকে সোনা জিতে নিচ্ছেন থম্পসন
ছবি: রয়টার্স

আজকের এক দৌড়ে ছোট্ট এক তালিকায় নাম লিখিয়ে ফেললেন থম্পসন। যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইওমিয়া টাইয়াস (১৯৬৪, ১৯৬৮) ও গাইল ডেভার্স (১৯৯২, ১৯৯৬) মেয়েদের ১০০ মিটারে দুবার অলিম্পিকের সোনা জিতেছিলেন। ২০১২ সালে তাঁদের সঙ্গে নাম লিখিয়েছেন শেলি-অ্যান ফ্রেজার-প্রাইস। এখন থেকে ১০০ মিটার কিংবদন্তিদের তালিকায় থাকবেন থম্পসনও। হাজার হলেও ফ্রেজার-প্রাইসেরও যে তাঁর মতো ১০০ ও ২০০ মিটারের ডাবল জেতার রেকর্ড নেই। সে কীর্তি থম্পসন তো ২০১৬ সালেই করে রেখেছেন!

থম্পসন অবশ্য এ ব্যাপারে এখনো নিশ্চিত নন, ‘আমি এখনো জানি না। আমাকে আগে এটা (জয়ের আনন্দ) হজম করতে দিন।’