চলে গেলেন হকির চেনামুখ শামসুল বারী

পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেছেন হকি ফেডারেশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শামসুল বারী।ফাইল ছবি

বাংলাদেশের হকিতে বড় এক দুঃসংবাদ এল আজ সকালে। পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন সাবেক হকি খেলোয়াড় ও সংগঠক শামসুল বারী। আজ ভোর পাঁচটার দিকে রাজধানীর একটি হাসপাতালে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। আর কদিন পরই ৭৫ বছর বয়সে পা দিতেন। আজ বেলা ১টায় মওলানা ভাসানী হকি স্টেডিয়ামে তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।

১৯৮৪ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত হকি ফেডারেশনের যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন শামসুল বারী। ১৯৮৮ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত দীর্ঘ ১৮-১৯ বছর ছিলেন বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক। ২০২২ সালে এশিয়ান হকি ফেডারেশনের সদস্য হয়েছিলেন। বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের উপমহাসচিব ছিলেন শামসুল বারী। ছিলেন আম্পায়ার, জাজ। খেলতেন রক্ষণে এবং পেনাল্টি কর্নার বিশেষজ্ঞ হিসেবে তাঁর সুনাম ছিল।

সংগঠক জীবনের আগে মাঠ আলো করেন হকি স্টিক হাতে। পূর্ব পাকিস্তান হকি দলের সদস্য শামসুল বারী উঠে আসেন ঢাকার আরমানিটোলা স্কুল থেকে। স্কুলটির হকি ঐতিহ্যের অন্যতম চেনামুখ ছিলেন। ১৯৭২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্লু পান। ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ ক্রীড়া লেখক সমিতি তাঁকে সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার দেয়। ১৯৯৩ সালে পেয়েছেন বাংলাদেশ ক্রীড়া সাংবাদিক সংস্থার দেওয়া সেরা হকি সংগঠকের স্বীকৃতি। ১৯৯৫ সালে একই স্বীকৃতি দেয় বাংলাদেশ ক্রীড়া লেখক সমিতি।

১৯৪৬ সালের ৮ জুলাই রাজশাহীতে তাঁর জন্ম। মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের জার্সিতে ঢাকার হকিতে খেলা শুরু ১৯৬৪ সালে। ১৯৬৫ সালে চলে আসেন পুরান ঢাকার মাহুতটুলী ক্লাবে। ১৯৭০ পর্যন্ত মাহুতটুলীতেই খেলেন। ১৯৭৪ সালে প্রথমবার আয়োজিত ঢাকার প্রথম বিভাগ হকি লিগে চ্যাম্পিয়ন মাহুতটুলী ক্লাবের সদস্য ছিলেন। সে বছরই  চলে যান আবাহনীতে। ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত খেলেন আবাহনীতে।

পূর্ব পাকিস্তান দলে খেলেছেন ১৯৬৮ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত। ১৯৭২ সালে ভারতের নেহরু কাপে খেলা ঢাকা একাদশের সদস্য ছিলেন। অঘোষিত সেই বাংলাদেশ জাতীয় দলের সহকারী অধিনায়ক ছিলেন শামসুল বারী। ১৯৭৪ সালে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে চ্যাম্পিয়ন ঢাকা জেলার হয়ে খেলেন। ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত ঢাকা জেলা দলের জার্সিতে খেলেছেন। জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে এই ৩ বছরই ঢাকা চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল।

তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় ম্যাচ ১৯৭০ সালে। তৎকালীন পাকিস্তান জাতীয় দলের বিপক্ষে পূর্ব পাকিস্তানের হয়ে ঢাকায় প্রীতি ম্যাচে খেলেন। পাকিস্তান তখন বিশ্বসেরা দল। পূর্ব পাকিস্তান দল সে ম্যাচে এক গোলে হেরেছিল।

শামসুল বারীর মৃত্যুতে দেশের হকিতে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। হকি ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, ‘আমরা একজন অভিভাবক হারালাম। দেশের হকি উন্নয়নে তাঁর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।’ শোক প্রকাশের পাশাপাশি হকি ফেডারেশনের সহসভাপতি ইউসুফ আলী ক্ষোভও জানালেন, ‘বারী ভাই অনেক কাজ করেছেন হকির জন্য। কিন্তু জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার পেলেন না। এই দুঃখ নিয়েই তাঁকে চলে যেতে হলো। শামসুল বারী ভাইয়ের মতো হকি-অন্তঃপ্রাণ সংগঠক আর আসবে না। তাঁর মৃত্যু দেশের হকিতে অপূরণীয় এক ক্ষতি।’