জামদানি শাড়ি আর ভালোবাসা নিয়ে ঢাকা ছাড়লেন মার্গারিতা

রিও অলিম্পিকে জেতা সোনার পদক হাতে বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত রুশ জিমন্যাস্ট মার্গারিতা মামুনছবি: ইনস্টাগ্রাম

আজ সকাল ৬টা ৩৫ মিনিটে টার্কিশ এয়ারওয়েজে যখন ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছাড়লেন মার্গারিতা মামুন, নিশ্চয়ই বাংলাদেশের স্মৃতিগুলোই মনে পড়ছিল তাঁর!

পঞ্চম বঙ্গবন্ধু সেন্ট্রাল সাউথ এশিয়ান জিমন্যাস্টিকস চ্যাম্পিয়নশিপের শুভেচ্ছাদূত হয়ে ২৩ অক্টোবর ঢাকায় এসেছিলেন ২০১৬ রিও অলিম্পিকের জিমন্যাস্টিকসে সোনাজয়ী মার্গারিতা মামুন। শিকড়ের টানেই ১৫ বছর পর আবার বাংলাদেশে আসা মার্গারিতার।

বাবা প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল মামুনের বাড়ি রাজশাহীতে। তবে মার্গারিতার জন্ম রাশিয়ায়। সেখানেই বেড়ে ওঠা এবং রাশিয়ার হয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া মার্গারিতার। এবারের ঢাকা সফরে মার্গারিতার সঙ্গে এসেছিলেন মা আনা, স্বামী ২০০৮ বেইজিং অলিম্পিকে সোনাজয়ী সাঁতারু আলেক্সান্ডার সুখোরুকভ ও দুই বছরের ছেলে লেভ।

বাংলাদেশ জিমন্যাস্টিকস ফেডারেশনের শুভেচ্ছা উপহার হাতে মার্গারিতা
ছবি: শামসুল হক

ঢাকা ছাড়ার আগে বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসা ও আতিথেয়তায় মুগ্ধ মার্গারিতা বলছিলেন, ‘রিও অলিম্পিকে সোনা জয়ের পর এটাই ছিল আমার বাংলাদেশে প্রথম সফর। পরিবারের সবার সঙ্গে এভাবে আমার দ্বিতীয় বাড়িতে আসতে পেরে খুবই ভালো লেগেছে। এই দেশের মানুষের ভালোবাসা আর আতিথেয়তায় আমি মুগ্ধ। সময় ও সুযোগ পেলে আবারও আমি বাংলাদেশে আসতে চাই।’

ব্যস্ততার কারণে অবশ্য এবার বাবার বাড়ি রাজশাহীতে যেতে পারেননি মার্গারিতা। কিন্তু রাজশাহী থেকে মার্গারিতার চাচা ও চাচাতো বোনেরা বারবার বাংলাদেশ জিমন্যাস্টিকস ফেডারেশনে টেলিফোন করেছেন। আত্মীয়স্বজন আশায় ছিলেন, অন্তত একবার রাজশাহীতে ঘুরে যাবেন মার্গারিতা।

স্বামী আলেক্সান্ডার সুখোরুকভের সঙ্গে মার্গারিতা
ছবি: প্রথম আলো

বাংলাদেশ জিমন্যাস্টিকস ফেডারেশনের সভাপতি শেখ বশির আহমেদ যাওয়ার আগে মার্গারিতাকে উপহার দিয়েছেন ঢাকাই জামদানি শাড়ি, ক্রেস্ট। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম তাঁকে উপহার দিয়েছেন ঢাকা শহরের একটি প্রতীকী চাবি। বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকেও দেওয়া হয়েছে শুভেচ্ছা স্মারক ও নানা উপহার। এ ছাড়া মার্গারিতা শপিং মলে গিয়ে পছন্দের কেনাকাটা করেছেন ঢাকা ছাড়ার আগে।

আন্তর্জাতিক জিমন্যাস্টিকস প্রতিযোগিতার বর্ণিল আয়োজন দেখে মুগ্ধ মার্গারিতা। বাংলাদেশের জিমন্যাস্টসরা খুব কাছ থেকে দেখেছেন অলিম্পিকের সোনাজয়ী অ্যাথলেটকে। সোনার পদক ছুঁয়ে দেখেছেন জিমন্যাস্টসরা।

অলিম্পিকে মার্গারিতার জেতা সোনার পদক ছুঁয়ে দেখছেন বাংলাদেশের জিমন্যাস্টরা
ছবি: প্রথম আলো

মার্গারিতাকে দেখে অনুপ্রেরণা খুঁজবে বাংলাদেশ—অন্তত এমনটাই মনে করেন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আহমেদুর রহমান, ‘জিমন্যাস্টসরা তাঁর পদকটা ছুঁয়ে দেখেছে। সেটাতে চুমু খেয়েছে অনেকে। ওরা আসলে অনেক রোমাঞ্চিত ছিল মার্গারিতাকে পেয়ে। আমি মনে করি, এটা ওদের আরও ভালো খেলতে, আন্তর্জাতিক মঞ্চে পদক জিততে অনুপ্রাণিত করবে।’

যদিও বাংলাদেশে জিমন্যাস্টিকসে ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা বরাবরই অংশ নেয় কম। আহমেদুর রহমানের আশা, মার্গারিতাকে দেখে এবার মেয়েরাও জিমন্যাস্টিসকে আসতে চাইবে, ‘মার্গারিতাকে দেখে আশা করি বাংলাদেশের অনেক মেয়ে এই খেলায় আসতে আগ্রহ দেখাবে। আমাদের সভাপতি চেষ্টা করছেন জিমন্যাস্টিকস খেলাটা বাংলাদেশে আরও জনপ্রিয় করতে। সেই ধারাবাহিকতার অংশ হিসেবেই মার্গারিতাকে ঢাকায় আনা হয়েছে। ভবিষ্যতে তিনি বাংলাদেশের জিমন্যাস্টিকস নিয়েও কাজ করতে আগ্রহী।’