জো বাইডেনকে সমর্থন দিচ্ছেন যেসব ক্রীড়া তারকারা

জো বাইডেন।ছবি: রয়টার্স

সারা বিশ্বের চোখ এখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিকে। ডোনাল্ড ট্রাম্প, না জো বাইডেন—আগামী চার বছর হোয়াইট হাউসে থাকবেন কে, চূড়ান্ত ফলাফলের প্রতীক্ষায় সবাই। ভোটের হাওয়া ক্রীড়াবিদদের গায়ে লাগবে না, তা কি হয়? তাই এবার বিভিন্নভাবে বিরোধী দল ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী জো বাইডেনকে প্রকাশ্য সমর্থন জানিয়েছেন অনেক ক্রীড়াবিদ। কারা তাঁরা? আসুন, দেখে নেওয়া যাক এমন উল্লেখযোগ্য কয়েকজন ক্রীড়াবিদকে, যাঁরা পালাবদল চান যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে।

মার্টিনা নাভ্রাতিলোভা (টেনিস তারকা)
টেনিসের নিয়মিত খোঁজ রাখুন বা না রাখুন, মার্টিনা নাভ্রাতিলোভাকে চিনবেন না—এমনটা হতে পারে না। আঠারোবার গ্র্যান্ড স্লামজয়ী এই টেনিস তারকা খেলাটার ইতিহাসের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় হিসেবে পরিচিত। টানা ২০০ সপ্তাহ ধরে সিঙ্গেলস বা ডাবলস—উভয় ক্ষেত্রেই শীর্ষস্থানে থাকা একমাত্র টেনিস তারকা নাভ্রাতিলোভা। দ্বৈত টেনিসেও রেকর্ড ৩১ বার গ্র্যান্ড স্লাম জিতেছেন এই তারকা। টুইটারে এই নাভ্রাতিলোভাই সমর্থন জানিয়েছেন জো বাইডেনকে, ‘আমি সর্বান্তঃকরণে জো বাইডেনের সঙ্গে আছি। আসুন, দেশটাকে আবারও আগের অবস্থানে নিয়ে যাই, কমলা বর্ণের মানুষটা সবকিছু ধ্বংস করার আগে দেশটার অবস্থা যেমন ছিল!’

মার্টিনা নাভ্রাতিলোভা।
ছবি: টুইটার

মেগান র‍্যাপিনো (ফুটবল তারকা)
গত বছর বর্ষসেরা নারী ফুটবলার নির্বাচিত হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র নারী ফুটবল দলের এই তারকা র‍্যাপিনো। ফুটবলে তাঁর অর্জন কম ছিল না কখনোই। যুক্তরাষ্ট্রের ২০১৫ ও ২০১৯ বিশ্বকাপজয়ী মেয়েদের দলের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিলেন, সোনা জিতেছেন ২০১২ লন্ডন অলিম্পিকও। তবে মাঠে যতটা, তার চেয়ে বেশি মাঠের বাইরের কর্মকাণ্ডের জন্য মেগান র‍্যাপিনোর নাম বেশি আসে সংবাদের শিরোনামে। কখনো যুক্তরাষ্ট্রের খেলাধুলায় ছেলেদের সমান বেতন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার দাবি তুলেছেন, তো কখনো আওয়াজ তুলেছেন বর্ণবাদ ও লিঙ্গবৈষম্যের বিরুদ্ধে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের অন্যতম প্রধান সমালোচক তিনি। মাঝে একবার জো বাইডেনের রানিংমেটও হতে চেয়েছিলেন এই তারকা। বোঝাই যায়, তাঁর বাইডেন-প্রেম কতটা বেশি!

মেগান র‍্যাপিনো।
ছবি: টুইটার

বিলি জিন কিং (টেনিস তারকা)
নারী টেনিসের আরেক কিংবদন্তি এই বিলি জিন কিং। যুক্তরাষ্ট্রের এই তারকা গোটা ক্যারিয়ারে একক, দ্বৈত ও মিশ্র দ্বৈত মিলিয়ে মোট ৩৯টি গ্র্যান্ড স্লাম জিতেছেন। ১৯৮৭ সালে টেনিসের হল অব ফেমে জায়গা পাওয়া এই তারকা বহুদিন ধরেই কট্টর ডেমোক্র্যাট সমর্থক। এবারও যথারীতি সমর্থন করছেন বাইডেনকে। টুইটারে লিখেছেন, ‘আমি এমন এক যুক্তরাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখি, যেখানে আমি নির্ভেজালভাবে আমার দেশে বাস করতে পারি, ভালোবাসতে পারি। যেখানে প্রত্যেক প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সমান চোখে দেখা হয়।’

গ্যারি কাসপারভ (দাবা তারকা)
রাশিয়ান এই তারকা সাবেক দাবার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। এই গ্র্যান্ডমাস্টার গোটা ক্যারিয়ারে ২৫৫ মাস র‍্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থানে ছিলেন। টানা ১৫টি পেশাদার টুর্নামেন্ট জয়ের রেকর্ডও আছে তাঁর। এই গ্যারি কাসপারভও ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ঠিক সহ্য করতে পারেন না। বাইডেন ও ট্রাম্পকে নিয়ে একবার একটা টুইট করেছিলেন তিনি, ‘বাইডেনকেই এখানে আমার ভালো বলে মনে হয়। আর ট্রাম্পের স্বার্থান্বেষী বকবকের চেয়ে আমার কাছে বাইডেনের কথাবার্তাই ভালো লাগে, অনেকটা উইনস্টন চার্চিল আর ফ্র্যাঙ্কলিন ডি রুজভেল্টের সংমিশ্রণ।’

গ্যারি কাসপারভ।
ছবি: টুইটার

শাকিল ও’নিল (বাস্কেটবল তারকা)
সাবেক কিংবদন্তি এই বাস্কেটবল তারকাও বাইডেন-হ্যারিসের প্রতি সমর্থন জানিয়ে ভার্চ্যুয়াল র‍্যালিতে অংশগ্রহণ করেছেন। জীবনে এইবারই প্রথম ভোট দেওয়া ও’নিল অবশ্য ২০১৬ সালে ট্রাম্পের বিজয়ের পর বলেছিলেন, ‘আমাদের ট্রাম্পকে সুযোগ দেওয়া উচিত।’ হয়তো চার বছর পর নিজেই বুঝেছেন, ট্রাম্পকে সুযোগ দেওয়াটা ঠিক হয়নি!

ডেভ বাতিস্তা (রেসলিং তারকা)
রেসলিং যাঁরা দেখে থাকেন, তাঁদের কাছে বাতিস্তা অতিপরিচিত নাম। সাবেক এই ওয়ার্ল্ড হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন সুযোগ পেলেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রাম্পকে দুকথা শোনাতে ভুল করেন না। বাইডেনের নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে গিয়ে বাতিস্তা বলেছেন, ‘মানুষকে মিথ্যা বলা অনেক সহজ। মানুষকে অপদস্থ করাও অনেক সহজ। এসব করলে কেউ দৃঢ় মানুষ হতে পারে না। নেতা সে-ই, যে কিনা মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারে। দায়িত্ব নিতে জানে। যে এগুলো করতে পারে, সে-ই দৃঢ় মানুষ। আর জো বাইডেন অমনই এক মানুষ।’

ডেভ বাতিস্তা।
ছবি: টুইটার

ম্যাজিক জনসন (সাবেক বাস্কেটবল তারকা)
সাবেক এনবিএ তারকা ম্যাজিক জনসন গত আগস্টেই জো বাইডেন ও কমলা হ্যারিসকে সমর্থন জানিয়েছেন। টুইটারে বাইডেনের প্রতি সমর্থনের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কমলা হ্যারিসকে রানিং মেট হিসেবে নির্বাচন করার জন্য জো বাইডেনকে অভিনন্দন। আমি সব সময় কমলাকে সমর্থন করে গিয়েছি।’

লেব্রন জেমস (বাস্কেটবল তারকা)
বাস্কেটবল কিংবদন্তি লেব্রন জেমস বহুদিন ধরেই জো বাইডেনের সমর্থক। আর এই সমর্থন আরও বেড়েছে ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলনে কাজ করতে গিয়ে। কিছুদিন আগে ভাইসটিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাইডেনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে সদ্য এনবিএ শিরোপাজয়ী লস অ্যাঞ্জেলস লেকার্সের তারকা জেমস জানান, ‘আমরা এমন এক সময়ে আছি, যখন আমাদের একটা পরিবর্তন দরকার। আর এই পরিবর্তনের জন্য নেতৃত্বে বদল দরকার।’

লেব্রন জেমস।
ছবি: টুইটার

মিক ফোলি (রেসলিং তারকা)
রেসলিং কিংবদন্তি মিক ফোলিও বাইডেনের পক্ষে দৃঢ়কণ্ঠে সমর্থন জ্ঞাপন করেছেন। সাবেক ওয়ার্ল্ড হেভিওয়েট ও ট্যাগ টিম চ্যাম্পিয়ন ফোলি পিপল ম্যাগাজিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কিছুদিন আগে জানিয়েছেন, ‘আমার মনে হয় ব্যাপারটা ঠিক ও ভুলের। আমার মনে হয়, গণতন্ত্র আজ হুমকির মুখে। আমি জানি, আমার দেশে অনেক ধরনের মানুষ বাস করেন। কিন্তু চার বছর ধরে আমার মনে হয়েছে আমরা ভয়াবহ ও খারাপ পথ ধরে এগিয়ে চলেছি। আমি শুধু চেয়েছি, ভবিষ্যতে আমার সন্তান ও নাতি-নাতনিরা যেন বুঝতে পারে, আমরা এই অবস্থান পরিবর্তন করার জন্য অন্তত একটু হলেও চেষ্টা করেছিলাম।’

স্টিফেন কারি (বাস্কেটবল তারকা)
বর্তমান সময়ের অন্যতম সেরা এই বাস্কেটবল তারকা কয়েক দিন আগে টুইটারে জানিয়েছেন বাইডেনের প্রতি সমর্থনের কথা, ‘আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি ভোটের দরকার এখন। সবাই শুনুন, ভোট দিন। ভয় পাবেন না, কারণ এটাই ওরা (ট্রাম্প প্রশাসন) চায়। তাঁরা চায় আপনি যেন ঘরে বসে থাকেন, ভোট না দেন, যাতে আপনার কণ্ঠ কেউ না শুনতে পারে। মাস্ক পরে ভোট দিতে আসুন। জো বাইডেনকে ভোট দিন। আপনার ভবিষ্যৎ এর ওপর নির্ভর করছে।’