টোকিও অলিম্পিক হবে তো?

স্টেডিয়াম প্রস্তুত, কিন্তু অলিম্পিক হবে তো?ছবি: টুইটার

নভেম্বরেই টোকিও ঘুরে গেছেন আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির (আইওসি) প্রধান টমাস বাখ। আইওসি সভাপতি বলেছিলেন, ২০২১–এর ২৩ জুলাই থেকে আগস্টে অলিম্পিক আয়োজন করেই তাঁরা প্রমাণ করতে চান, মানুষ করোনাভাইরাসকে পরাজিত করেছেন। দুই মাসের মধ্যেই সেই আশাবাদকে এখন বাড়াবাড়ি মনে হচ্ছে।

২০২০ অলিম্পিক যে ২০২০ সালে করা সম্ভব হবে না, সেটা গত মার্চেই মেনে নিয়েছিল আয়োজক কমিটি। ধারণা করা হয়েছিল, এক বছর পর সফলভাবেই অলিম্পিক আয়োজন করা যাবে। তত দিনে করোনার টিকা আবিষ্কার হবে এবং দর্শক নিয়েই অলিম্পিক হবে বলে আশা করা হয়েছিল। করোনার বেশ কিছু টিকা চলে এসেছে এরই মধ্যে। কিন্তু অলিম্পিক আয়োজন নিয়ে দুশ্চিন্তা কমেনি এক ফোঁটাও।

জাপানে করোনার নতুন ধরনের সংক্রমণের প্রমাণ মিলেছে। টোকিওতে নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যারও দৈনিক রেকর্ড হয়েছে গতকাল। টোকিও অলিম্পিক আদৌ আয়োজিত হবে কি না, এ প্রশ্ন জেগেছে আবার।

টোকিওর নানা প্রান্তে অলিম্পিকের প্রস্তুতির ছাপ।
ছবি: টুইটার

আধুনিক অলিম্পিকের যুগে টোকিও অলিম্পিক একটি অনাকাঙ্ক্ষিত রেকর্ডই করে বসেছে। এই প্রথম কোনো অলিম্পিক নির্ধারিত সময় থেকে পেছাতে হয়েছে। তবু ২০২১ সালে অলিম্পিক আয়োজন করে একটি বার্তা দিতে চেয়েছিল জাপান। কিন্তু প্রতি পদে করোনার বাধা সে চেষ্টা জলে ভাসাবে বলেই মনে হচ্ছে। আর মাত্র ছয় মাস বাকি, কিন্তু ১৪০ কোটি ডলারে নির্মিত অলিম্পিক স্টেডিয়ামে আদৌ কোনো অ্যাথলেটের এ বছর পা পড়বে, সে আশা ক্ষীণ হয়ে যাচ্ছে দিন দিন।

অন্য অনেক দেশের তুলনায় জাপানে করোনা পরিস্থিতি বেশ ভালো। এখন পর্যন্ত ২ লাখ ৩০ হাজার আক্রান্তের খবর এসেছে। আর মৃতের সংখ্যা ৩ হাজার ৪০০–র একটু বেশি। কিন্তু নতুন বছরের শুরুতেই সংক্রমণ বৃদ্ধি দেশটির কর্মকর্তাদের দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে।

কোভিড-১৯–এর নতুন ধরনের হদিস মেলায় আপাতত দেশটিতে অনাবাসীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে জাপান। এ অবস্থায় ছয় মাস পর ১১ হাজার অ্যাথলেট, অংশগ্রহণকারী দেশের কর্মকর্তা, কোচ, সাংবাদিক ও আনুষঙ্গিক কর্মীদের নিয়ে অলিম্পিক আয়োজন নিয়ে সন্দিহান হয়ে উঠেছেন অনেকেই।

অলিম্পিকের বাস্কেটবলের জন্য এ ভেন্যু বেছে নেওয়া হয়েছে।
ছবি: টুইটার

বুধবার টোকিওর গভর্নর ইউতিকো কোইকে সবাইকে সতর্ক করেছেন এবং বর্ষপূর্তির আয়োজনে বাঁধ দিতে বলেছেন। ‘আনন্দের আগে জীবন’-এর ডাক দিয়ে সবাইকে নববর্ষে ঘরে থাকতে বলেছেন। ২৪ ঘণ্টা পরই কোইকে জানিয়েছেন, টোকিওতে এক দিনে ১ হাজার ৩০০ নতুন রোগী পাওয়া গেছে, যেটা আগের দৈনিক রেকর্ডের প্রায় দেড় গুণ।

টোকিওর স্বাস্থ্যসেবা এমনিতেই সামর্থ্যের শেষ বিন্দু দিয়ে লড়াই করছে। এমন অবস্থায় শহরে অলিম্পিকের জন্য হাজার হাজার অ্যাথলেট ও কর্মকর্তাদের আবির্ভাব শহরের স্বাস্থ্যব্যবস্থা সামলাতে পারবে কি না, সে প্রশ্নও জাগছে। সেই সঙ্গে খরচ বেড়ে যাওয়ার প্রসঙ্গ তো আছেই। ২০১৩ সালে অলিম্পিক আয়োজনের সম্মান বুঝে নেওয়ার সময় আশা করা হয়েছিল, ৭৩০ কোটি ডলার খরচ হবে এর পেছনে।

গত মাসেই নতুন করে ২৮০ কোটি ডলার খরচের হিসাব দিয়েছে অলিম্পিক কমিটি। যার মধ্যে করোনা প্রতিরোধেই ব্যয় করা হয়েছে ৯০ কোটি ডলার। সব মিলিয়ে অলিম্পিকের পেছনে খরচ ১ হাজার ৫৪০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে। এ অর্থ জাপানাবাসীর কর থেকে আদায় করবে সরকার।

একদিকে করোনার ভয় ও অন্যদিকে খরচের ভার নিজেদের কাঁধে পড়ায় অলিম্পিক নিয়ে নেতিবাচক মানসিকতা দেখা দিয়েছে টোকিওবাসীর মধ্যে। গত ডিসেম্বরে এনএইচকে নামক এক সম্প্রচার প্রতিষ্ঠানের এক জরিপে ৬৩ শতাংশ অংশগ্রহণকারী বলেছেন, অলিম্পিক পেছানো হোক কিংবা বাতিলই করা হোক!