ধনুকভাঙা পণে এক মায়ের তির-ধনুকে সাফল্যের গল্প

এক হাতে ছেলে, অন্য হাতে তীর ধনুক... রোকসানার জীবনের দুই দিকছবি: সংগৃহীত

নিশানায় চোখ রেখে বুলস আইয়ে তির ছুড়লেও মনোযোগটা বারবার পেছনে দিতে হচ্ছিল রোকসানা আক্তারকে। শুটিং লাইনের পেছনের ঘাসে তখন ছোটাছুটি করছিল রোকসানার আড়াই বছরের ছেলে মিরাজ ইসলাম।

টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার স্টেডিয়ামে কাল শুরু হওয়া ১৩তম জাতীয় আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপে ছেলেকে কোলে নিয়ে খেলতে এসে আলাদাভাবে আলো কাড়লেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আর্চার রোকসানা। মেয়েদের কম্পাউন্ডের কোয়ালিফিকেশন রাউন্ডে ৬৭৬ স্কোর করে রোকসানা হয়েছেন দ্বিতীয়। ৬৭৮ পয়েন্ট করে কম্পাউন্ডের কোয়ালিফিকেশন রাউন্ডে প্রথম হয়েছেন বাংলাদেশ আনসারের বন্যা আক্তার।

ছেলের জন্মের ছয় মাস পর্যন্ত মাতৃত্বকালীন ছুটিতে ছিলেন রোকসানা। এরপর ফিরতে হয়েছে অনুশীলনে। অপেক্ষায় ছিলেন জাতীয় প্রতিযোগিতায় তির-ধনুক হাতে লড়াইয়ে ফেরার। অবশেষে মাঠে নামতে পেরেই খুশি রোকসানা, ‘যদিও স্কোরটা আগের মতো হয়নি, তারপরও খুশি।’

কাল শুরু হওয়া ১৩তম জাতীয় আর্চারিতে অংশ নেওয়া মেয়ে আর্চাররা
ছবি: সংগৃহীত

ছেলে জন্মের পর খেলায় ফিরতে লড়াই করতে হয়েছে এই আর্চার মাকে। অনুশীলনে এলেও রোকসানার মন পড়ে থাকত বাড়িতে। সেখানে কীভাবে ছেলের সময় কাটছে, ছেলে ঠিক আছে কি না, তা নিয়ে ভাবতেন। তবে মা ও স্বামীর সমর্থনে আবারও খেলায় ফিরতে পেরেছেন রোকসানা। কাল স্টেডিয়ামে বসে বলছিলেন কষ্টের দিনগুলোর কথা, ‘ছেলের জন্মের পর থেকে আম্মুকে কাছে এনে রেখেছিলাম। ছেলে একটু বড় হওয়ার পর আম্মু চলে গেছেন। এখন বাড়িতে ওর বাবা সবকিছু দেখাশোনা করে। আমি ছেলের জন্য খাবার তৈরি করেই মাঠে চলে আসি।’

ছেলেকে ছেড়ে একবার বিশেষ অনুশীলন কোর্স করতে হয়েছিল রোকসানাকে। কোর্স শেষে বাড়িতে ফিরে শোনেন দুঃসংবাদ, ‘চার মাস পর বাড়িতে ফিরে শুনি, ছেলের জ্বর ও গুটিবসন্ত হয়েছিল। আমি দুশ্চিন্তা করব ভেবে কেউ আমাকে জানায়নি। তখন এটা শুনে খুব খারাপ লেগেছিল।’

সোনাজয়ী নাসরিন পুরষ্কার নিচ্ছেন
ছবি: সংগৃহীত

ছেলেকে সামলাচ্ছেন, আবার পারফরম্যান্সও ধরে রেখেছেন রোকসানা। খেলোয়াড় বলেই লড়াইয়ের চ্যালেঞ্জটা নিয়েছেন, ‘আগে স্বাধীনভাবে খেলতাম। কিন্তু এখন দায়িত্ব বেড়ে গেছে। খেলায় সময় দিতে হয়। বাচ্চাকেও সময় দিতে হয়। দুটি মিলিয়ে কঠিন মনে হয় সবকিছু। তবে ঠিকই সামলে নিই।’

এ ক্ষেত্রে সতীর্থরা ও নিজের সংস্থা থেকে যথেষ্ট সহযোগিতা পান রোকসানা, ‘আমার স্যাররাও জানতেন ছেলেটা ছোট। সে ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই অনুশীলন থেকে ছেড়ে দিতেন। তখন মনোবল আরও বেড়ে যেত। অনেক সময় সিনিয়র-জুনিয়র সতীর্থরা ওকে কোলে নিয়ে রাখত। এটা দেখে আনন্দ নিয়ে অনুশীলন করতাম।’

রোকসানার আলো কাড়ার দিনে কোয়ালিফিকেশন রাউন্ডে কোনো অঘটন ঘটেনি। ছেলেদের রিকার্ভে ৬৬৪ স্কোর করে প্রথম হয়েছেন বাংলাদেশ আনসারের রোমান সানা। মেয়েদের রিকার্ভে জাতীয় রেকর্ড গড়ে প্রথম হয়েছেন দিয়া সিদ্দিকী। বিকেএসপির আর্চারের স্কোর ৬৫৩। ছেলেদের কম্পাউন্ড ইভেন্টে ৬৯৪ স্কোর করে প্রথম হয়েছেন বাংলাদেশ পুলিশের আশিকুজ্জামান।