পিয়ানিচের ইটে কোমানের পাটকেল

বার্সেলোনা কোচ রোনাল্ড কোমান।ফাইল ছবি: এএফপি

বার্সেলোনায় এসেছিলেন হাজারো স্বপ্নের মায়াঞ্জন চোখে নিয়ে। বাস্তবতার জমিনে পা পড়তে বেশি সময় লাগেনি বসনিয়ান মিডফিল্ডার মিরালেম পিয়ানিচের। জুভেন্টাস থেকে এই মিডফিল্ডারকে বার্সা যতটা না খেলোয়াড়ি নৈপুণ্যের জন্য দলে এনেছিল, তার চেয়ে ঢের বেশি ছিল  হিসাববিজ্ঞানের নিয়মের সুযোগ নিয়ে উয়েফার আর্থিক সঙ্গতির নীতিকে ফাঁকি দেওয়ার বিষয়টি। যে কারণে বার্সেলোনা কোচ রোনাল্ড কোমানের পছন্দের তালিকায় কখনোই আসতে পারেননি পিয়ানিচ। বেশির ভাগ সময় বার্সার সাইড বেঞ্চ গরম করতে দেখা গেছে এই বসনিয়ান মিডফিল্ডারকে।

বেঞ্চে বসে থাকতে থাকতে ত্যক্ত-বিরক্ত পিয়ানিচ সম্প্রতি বার্সা ছেড়েছেন। ধারে যোগ দিয়েছেন তুরস্কের ক্লাব বেসিকতাসে। বার্সা ছেড়েই তোপ দেগেছিলেন কোমানের উদ্দেশ্যে। জানিয়েছিলেন, বার্সায় নাকি তাঁকে মোটেও সম্মান করেননি কোমান!

মিরালেম পিয়ানিচ। যখন বার্সেলোনায় ছিলেন।
ফাইল ছবি: এএফপি

সাবেক শিষ্যের ইটের জবাবে এবার পাটকেল মেরেছেন কোমান। স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম মুন্দো দেপোর্তিভোকে জানিয়েছেন, বার্সায় যে মানের ফুটবল খেলা হয়, সে মানের জন্য পিয়ানিচ মোটেও সঙ্গতিপূর্ণ ছিলেন না, ‘খেলোয়াড় হিসেবে তাঁর কিছু হতাশা আছে, সেটা আমি বুঝতে পারি। কিন্তু আমরা যেভাবে খেলি, বল পায়ে নিয়ে ও বল ছাড়া আমরা যেভাবে খেলার চেষ্টা করি, সে হিসেবে অন্যান্য মিডফিল্ডারদের চেয়ে সে পিছিয়ে আছে। আর কোনো কারণ নেই। আমি ওকে শুভকামনা জানাই। ওর ব্যাপারটা জটিল ছিল। কিন্তু আমরা ওকে খেলানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু অন্যান্য মিডফিল্ডাররা তাঁর চেয়ে ভালো পারফর্ম করেছে।’

গত মৌসুমে জুভেন্টাস থেকে বার্সায় যোগ দেওয়ার পর পিয়ানিচ সব ধরনের প্রতিযোগিতা মিলিয়ে কাতালানদের হয়ে মাঠে নামেন মাত্র ৩০ ম্যাচে। এর মধ্যে ১৩ ম্যাচে শুরুর একাদশে ছিলেন,এর মধ্যে পুরো ৯০ মিনিট খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন মাত্র ৫ ম্যাচে। অথচ পিয়ানিচ আশা করেছিলেন, কোচ তাঁকে আরও বেশি খেলার সুযোগ দেবেন।

সাবেক শিষ্যকে রীতিমতো ধুয়ে দিয়েছেন কোমান
ছবি: রয়টার্স

আর্থিক দিক দিয়ে বেশ নড়বড়ে অবস্থায় এখন বার্সা। বেতনের বিল কমাতে ‘প্রয়োজনের অতিরিক্ত’ খেলোয়াড়দের বিক্রি করে বা ধারে অন্য ক্লাবে পাঠিয়ে দিচ্ছে তারা। এ তালিকায় প্রথম দিকেই ছিলেন পিয়ানিচ। তুরস্ক যাওয়ার আগেই বার্সার সঙ্গে আগের চুক্তি থেকে বেতন কমিয়ে গিয়েছেন পিয়ানিচ।

স্প্যানিশ দৈনিক মার্কার সঙ্গে সাক্ষাৎকারে পিয়ানিচ আগল খুলে দিয়েছিলেন, ‘হ্যাঁ, কোচ অসম্মান করেছেন। আমি গত বছর যে পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলাম, তাতে মানিয়ে নিতে পারিনি। এমন কিছু তো আমি চাইনি! আমি একজন খেলোয়াড়, ফুটবল খেলতে ভালোবাসি। আর এটাই আমাকে সব সময় আনন্দ দেয়। সব সময়ই বার্সার হয়ে খেলতে চেয়েছি, কিন্তু সবকিছু এত জটিল হয়ে যাবে বুঝিনি।’

বার্সায় এমন মুহূর্ত খুব কম পেয়েছেন পিয়ানিচ।
ফাইল ছবি

কোমানের আচরণ নাকি অবাক করত পিয়ানিচকে, ‘এটা খুবই অবাক করার ব্যাপার ছিল। কে খেলবে, কে খেলবে না, সেটা কোচই ঠিক করেন, কিন্তু সেটা করার অনেক পদ্ধতি তো আছে! আমি এমন একজন ফুটবলার যে সবকিছু মেনে নিতে পারি, কিন্তু (কোচ) সবকিছু সরাসরি বলবেন, এটাই আশা করি। কিন্তু সেখানে এমন হয়েছে, যেন কিছুই হয়নি, যেন আমি ১৫ বছর বয়সের একটা ছেলে।’

তবে কি বার্সায় যোগ দেওয়া মস্ত বড় ভুল ছিল পিয়ানিচের? সেটা অবশ্য কখনোই মনে হয়নি তাঁর, ‘না। কখনোই বার্সায় যোগ দেওয়ার জন্য আক্ষেপে পুড়িনি আমি। জীবনে যা হবে তা হবেই। আমি আমার পুরো জীবনেই এবং ক্যারিয়ারজুড়েই লড়াই করেছি। আমি খুবই উচ্চাভিলাষী, লড়াকু। আমি জুভেন্টাস ও বার্সায় যোগ দেওয়ার মতো পর্যায়ে পৌঁছেছি। আমি জানি যে এই দলে (বার্সা) খেলতে পারি। কিন্তু ওরা আমাকে খেলার, লড়াই করার, দলের একজন হয়ে ওঠার, দলকে সাহায্য করার সে সুযোগটাই দেয়নি।’


কোচের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হয়েছে, বলার অপেক্ষা রাখে না। এখন ধারের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর পিয়ানিচকে কোমান ফেরান কি না, দেখার বিষয়।