পুতিনের ঘুঁটি হতে পারেন গাঁজা নিয়ে ধরা পড়া যুক্তরাষ্ট্রের তারকা

অলিম্পিকে সোনা জিতেছেন গ্রাইনারছবি: ইনস্টাগ্রাম

যুক্তরাষ্ট্রের নারী বাস্কেটবল খেলোয়াড় ব্রিটনি গ্রাইনার রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কূটনৈতিক ঘুঁটি হতে পারেন, এমন শঙ্কা ছড়িয়ে পড়েছে। দুবারের অলিম্পিক সোনাজয়ী এই বাস্কেটবল তারকাকে অন্তত তিন সপ্তাহ আগে মস্কো বিমানবন্দরে আটক করা হয়েছে। দাবি করা হয়েছে, গ্রাইনারের কাছে একটা ই-সিগারেট পাওয়া গেছে, যা গাঁজার তেল দিয়ে ভর্তি ছিল।

গত ৫ ফেব্রুয়ারি উইমেন ন্যাশনাল বাস্কেটবল অ্যাসোসিয়েশনের (ডব্লিউএনবিএ) দল ফিনিক্স মার্কারি সতীর্থদের সঙ্গে তোলা এক ছবি ইনস্টাগ্রামে দেওয়ার পর থেকেই তাঁর কোনো খবর মিলছিল না সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। পরে খবর এসেছে, গ্রাইনার রাশিয়ায় গিয়েছেন। ডব্লিউএনবিএর মৌসুম শেষ হয়ে গেছে। এ সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের নারী তারকারা রাশিয়ায় খেলতে যান। তবে গ্রাইনার ঠিক কবে রাশিয়ায় গিয়েছিলেন, সেটি জানা যায়নি।

গ্রাইনারকে মাদক পাচারের যে অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাতে রাশিয়ায় ১০ বছর পর্যন্ত সাজা মিলতে পারে। ইউক্রেনে হামলা করার কারণে যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার ওপর নানা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের দুশ্চিন্তা, এর জবাবে গ্রাইনারকে ব্যবহার করবে রাশিয়া।

অলিম্পিকের সোনা জিতেছেন গ্রাইনার (বাঁয়ে)
ছবি: ইনস্টাগ্রাম

রাশিয়া ও ইউক্রেন অঞ্চলের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক উপসহকারী প্রতিরক্ষামন্ত্রী এভেলিন ফারকাস ইয়াহু স্পোর্টসকে বলেছেন, ‘আমরা যদি তাঁকে জেল থেকে বের করতে চাই, রাশিয়াও কিছু শর্ত দেবে। বন্দী বিনিময় হওয়ার প্রস্তাব হতে পারে। তারা হুমকি দেওয়ার কাজে ব্যবহার করতে পারে কিংবা আমাদের কিছু করতে বা কিছু না করার জন্য ব্ল্যাকমেল করতে পারে। যেভাবেই হোক, ওরা একে সুবিধা হিসেবে দেখছে।’

ডেইলি মেইলের সঙ্গে কথোপকথনে গ্রাইনারের এজেন্ট লিন্ডসে কোলাসও স্বীকার করে নিয়েছেন তাঁর মক্কেলের বাজে পরিস্থিতির কথা, ‘রাশিয়ার ব্রিটনি গ্রাইনার কী অবস্থায় আছেন, সেটা আমরা ভালোভাবেই জানি এবং তাঁর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে রাশিয়ায় তাঁর আইনজীবী, তাঁর পরিবার, তাঁর দল এবং ডব্লিউএনবিএ ও এনবিএর। আর চলমান আইনি প্রক্রিয়া নিয়ে আমরা বিস্তারিত মন্তব্য করতে পারব না। তবে তাঁকে বাড়িতে ফেরানোর জন্য কাজ করছি আমরা। তাঁর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখাতেই আমাদের পূর্ণ মনোযোগ।’ টেক্সাসের এই বাস্কেটবল খেলোয়াড়ের পাশে দাঁড়িয়েছেন রাজ্যটির রাজনীতিকেরা। কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে কাজ করে গ্রাইনারকে দ্রুত মুক্তি পাওয়ার ব্যাপারে কাজ করছেন তাঁরা।

যুক্তরাষ্ট্রের নারী বাস্কেটবল খেলোয়াড় ব্রিটনি গ্রাইনার
ছবি: ইনস্টাগ্রাম

রাশিয়ান সংবাদমাধ্যম ইন্টারফ্যাক্স জানিয়েছে, গ্রাইনার নিউইয়র্ক থেকে মস্কোর শেরেমেতেভো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামেন। সেখানে মাদক খুঁজে বের করার সময় দক্ষ কুকুর তাঁর ব্যাগের প্রতি আগ্রহ দেখালে কাস্টমস কর্মকর্তা ফ্লুরোস্কোপিক যন্ত্র ব্যবহার করে ব্যাগে থাকা ই-সিগারেট খুঁজে পান। টেলিগ্রামে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, বিমানবন্দরে নামা গ্রাইনারকে দেখে একটি কুকুর তাঁর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এরপর একটি স্ক্যানারে তাঁর ব্যাগ পরীক্ষা করা হয়। একটি এভিন্ডেন্স ব্যাগে জিনিস রাখার দৃশ্যও তাতে দেখা গেছে।

রাশিয়ান কাস্টমস সার্ভিসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘যুক্তরাষ্ট্রের এক নাগরিকের বহন করা হাতব্যাগ পরীক্ষা করে একটি ভেপ (ই-সিগারেট) পাওয়া গেছে, যাতে একটি বিশেষ গন্ধের তরল ছিল। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এই তরল মাদকগুণসম্পন্ন গাঁজার তেল।’

যুক্তরাষ্ট্রের নারী বাস্কেটবল খেলোয়াড় ব্রিটনি গ্রাইনার
ছবি: ইনস্টাগ্রাম

মেয়েদের ইউরো লিগে ইউএমএমসি ইয়েজাতেরিনবার্গের হয়ে খেলতে রাশিয়ায় গিয়েছিলেন গ্রাইনার। ২০১৬ সাল থেকে এ দলে খেলে চারটি শিরোপাও জিতেছেন এই তারকা। এ দলে খেলে প্রতি মৌসুমে ১০ লাখ ডলারের বেশি আয় করেন তিনি। সর্বশেষ ২৯ জানুয়ারি এ দলের হয়ে খেলেছেন গ্রাইনার। এরপর দুই সপ্তাহের বিরতি ছিল লিগে।

সম্ভাব্য সবচেয়ে বাজে সময়ে গ্রেপ্তার হয়েছেন গ্রাইনার। কারণ, ইউক্রেনে হামলার কারণে রাশিয়ার সঙ্গে আর্থিক ও রাজনৈতিকভাবে সম্পর্ক ছিন্ন করছে অধিকাংশ দেশ। রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আকাশপথে চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। গত ১১ ফেব্রুয়ারি জো বাইডেন সরকার যেকোনো সময় হামলা হতে পারে বলে ইউক্রেনে থাকা আমেরিকানদের দেশটি ছাড়ার পরামর্শ দেন।

রাশিয়ায় গ্রাইনারের মতোই ডব্লিউএনবিএ খেলতে যাওয়া অনেক যুক্তরাষ্ট্রের বাস্কেটবল তারকা বাইডেনের সতর্কতার পর তাড়াহুড়ো করে দেশে ফিরেছেন। কিন্তু গ্রাইনার এর আগেই গ্রেপ্তার হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। হেনস্তা হওয়ার ভয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের আগামী কিছুদিন রাশিয়ায় না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এমনকি যাঁরা এখনো সেখানে আছেন, তাঁদেরও রাশিয়া ছাড়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

রাশিয়ায় গাঁজা বহন করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ৬ গ্রাম পর্যন্ত গাঁজা বহনের শাস্তি ১৫ দিনের জেল। আর এর চেয়ে বেশি পরিমাণ গাঁজা নিয়ে ধরা পড়লে কঠোর শাস্তি দেওয়া হতো। গ্রাইনারের কাছে কতটুকু মাদক ছিল, সেটা এখনো জানা যায়নি। ইন্টারফ্যাক্স বলছে, বেশ বড় পরিমাণ মাদক পাওয়া গেছে, যার শাস্তি ৫ থেকে ১০ বছরের জেল। এদিকে ব্যক্তিগত জীবনে সমকামী বলেও গ্রাইনারের জন্য চিন্তা হচ্ছে অনেকের। কারণ, ভ্লাদিমির পুতিন রাশিয়ায় সমকামীবিরোধী কঠোর আইন প্রচলন করেছেন এরই মধ্যে।