বাংলাদেশের টেনিসের ‘সুস্মিতা সেন’

টেনিসে মেয়েদের জাতীয় চ্যাম্পিয়নস সুস্মিতা সেন।ছবি: প্রথম আলো

ঝালকাঠি শহরের মাছের আড়তের কর্মচারী অমল চন্দ্র সেনের স্বপ্ন ছিল আকাশছোঁয়া। একমাত্র মেয়ে সুস্মিতা সেন পড়াশুনা শেষে ভালো একটা চাকরি পাবে, সেটাই চাওয়া ছিল তাঁর। কিন্তু পড়ার টেবিলের চেয়ে যে সুস্মিতাকে বেশি টানে বাড়ির পাশের টেনিস কোর্ট! সময় পেলেই হাতে উঠে যায় র‌্যাকেট আর বল।

ছয় বছর ধরে নিয়মিত টেনিস খেলছেন সুস্মিতা। জাতীয় প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন তিনবার। অবশেষে সপ্তম আসরে এসে প্রথমবারের মতো হয়েছেন জাতীয় টেনিসে মেয়েদের এককে চ্যাম্পিয়ন। কাল ঢাকা ক্লাবে হওয়া মুজিব বর্ষ জাতীয় টেনিসের ফাইনালে সুস্মিতা ৬-৪,৬-৪ গেমে হারান ঈশিতা আফরোজকে। আর পুরুষ এককে চ্যাম্পিয়ন অমল রায় ফাইনালে ৬-২,৬-২ গেমে হারান দীপু লালকে।

স্কুলে পড়ার সময় ব্যাডমিন্টন খেলতেন সুস্মিতা। স্থানীয় টেনিস কোচ জাহাঙ্গীর আলম তাঁকে টেনিসের কোর্টে নিয়ে আসেন। সুস্মিতার ব্যাডমিন্টনের র্যালি, মুভমেন্ট আর স্ট্যামিনা দেখেই জাহাঙ্গীর তাঁকে টেনিস খেলার পরামর্শ দেন। ঝালকাঠিতে জাহাঙ্গীরের একটি টেনিস একাডেমি আছে। সেখানেই অন্যান্য খেলোয়াড়ের সঙ্গে নিয়মিত অনুশীলন করেন সুস্মিতা। প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর যেন বিস্ময়ের ঘোর কাটছিল না ঝালকাঠি মহিলা কলেজের এই ছাত্রীর, ‘করোনার কারণে সেভাবে অনুশীলন করতে পারিনি। তাই এবার কেমন খেলব, সেটা নিয়ে চিন্তায় ছিলাম। শেষ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন হতে পেরে খুব ভালো লাগছে। আমার এই সাফল্যের সব কৃতিত্ব কোচ জাহাঙ্গীর স্যারের।’

সুস্মিতার স্বপ্নটা অনেক বড়।
ছবি: প্রথম আলো

বিভিন্ন বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্টে ভালো করার সুবাদে গত তিন বছর জাতীয় দলের নিয়মিত মুখ সুস্মিতা। খেলেছেন শ্রীলঙ্কায় জুনিয়র ফেড কাপ, মালয়েশিয়া ফেড কাপ ও নেপালে দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে। সুস্মিতার সাফল্য দেখে ঝালকাঠি শহরের অনেক মেয়েই ইদানীং টেনিসে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। টেনিসের মতো ব্যয়বহুল খেলার সরঞ্জাম জোগাড় করা সুস্মিতার জন্য একটু কঠিন হয়ে যায়। একটা ভালো মানের র্যাকেটের দাম ২০ হাজার টাকা, এক জোড়া কেডসের দাম ৭ হাজার টাকা। বাবার পক্ষে এসব কিনে দেওয়া সম্ভব হয় না। তবে কোচ জাহাঙ্গীর আলম সুস্মিতার খেলার জন্য সব রকম সহযোগিতা করেন, ‘ওর খেলাধুলার জন্য যা লাগে সেসব আমিই জোগাড় করি। শ্রীলঙ্কা থেকে খেলে আসার পর ওকে ঝালকাঠির ডিসি (জেলা প্রশাসক) ২৫ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। সেটা দিয়ে র‌্যাকেট, ব্যাগ ও বল কিনে দিয়েছিলাম। অন্যান্য সরঞ্জামও কিনে দেওয়ার চেষ্টা করি।’

পুরুষ এককে বরাবরের মতোই চেনামুখ অমল। এবারও ব্যতিক্রম হয়নি। আবারও চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় উচ্ছ্বসিত অমল বলছিলেন, ‘আমি এখনো ভালো খেলছি বলেই নতুন কেউ চ্যাম্পিয়ন হতে পারছে না। তবে আমি চাই ফেডারেশন যেন নিয়মিত টুর্নামেন্টের আয়োজন করে। নতুন খেলোয়াড় তৈরির উদ্যোগ নেয়।’