‘ব্ল্যাক মাম্বা’র মৃত্যু থেকে সুনের মুক্তি

ইতিহাসের পাতায় ২০২০ সাল চিহ্নিত হয়ে থাকবে করোনার বছর হিসেবে। তার মধ্যেও নতুন স্বাভাবিকতায় মাঠে খেলা ছিল। ছিল মাঠ ও মাঠের বাইরে আনন্দ–বেদনার কাব্য। সেসব নিয়েই ফিরে দেখা ২০২০

লস অ্যাঞ্জেলেসে রাস্তার পাশে দেয়ালচিত্রে বাস্কেটবল কিংবদন্তি কোবি ব্রায়ান্ট ও তাঁর ছোট্ট মেয়ে। দুঃস্বপ্নের এক হেলিকপ্টার দুর্ঘটনা অকালেই কেড়ে নিয়েছে দুজনকে
ছবি: এএফপি

বছর যায়, বছর আসে, কিন্তু আর কোনো বছর কি এতটা দীর্ঘ লেগেছে? কুড়ি-কুড়ি যেন বিষের বাঁশি। করোনা-গরল উগরে দেওয়া এ বছরে ক্রীড়াঙ্গনেও থামেনি মৃত্যুর মিছিল।

থামেনি? বছর শেষ হতে এখনো যেহেতু দু-তিন দিন বাকি, তাই নিশ্চয়তা দেওয়ার সাহস দেখাবে কে! সেদিনও এমন শীতে কোবি ব্রায়ান্টের মৃত্যুর খবর অনেকে বিশ্বাস করেননি। সবে ২৬ জানুয়ারি, নতুন বছরে আমেজ কাটেনি। করোনাও সেভাবে ডালপালা মেলেনি। এর মধ্যে মাঝরাতে খবর এল, লস অ্যাঞ্জেলেসে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় কোবি ব্রায়ান্ট চলে গেছেন! ‘ব্ল্যাক মাম্বা’ খ্যাত তুমুল জনপ্রিয় এই বাস্কেটবল কিংবদন্তির ফুটফুটে মেয়েটাও বেঁচে নেই।

তখন কে জানত, এ বছর ক্রীড়াঙ্গনেও সবচেয়ে আলোচিত শব্দগুলো হবে ‘মৃত্যু’, ‘স্থগিত’ ও ‘বাতিল’। সাফল্য, শিরোপা, অবসর—এসব কথা পারতপক্ষে ঠোঁটে উঠবে না। করোনায় বাতিল হয় উইম্বলডন, বোস্টন ম্যারাথন ১২৪ বছরের ইতিহাসে বাতিল হয়েছে এবারই প্রথম, তেমনি নিউইয়র্ক, প্যারিস, শিকাগো ও বার্লিন ম্যারাথনও বাঁচেনি এ ভাইরাসের গ্রাস থেকে। যেখানে অলিম্পিকই পেছাতে হয়েছে, এসব তো সে তুলনায় নস্যি!

হ্যাঁ, টোকিও অলিম্পিক হওয়ার কথা ছিল এ বছর। কিন্তু করোনার কারণে সেটা পিছিয়ে আগামী বছর নেওয়া হয়। এভাবে পেছানো হয়েছে এনবিএ, এমএলবি (বেসবল), এনএইচএল (হকি), ফ্রেঞ্চ ওপেন (টেনিস), এটিপি (টেনিস), মাস্টার্স (গলফ), ইউরোপিয়ান ট্যুর (গলফ), ফর্মুলা ওয়ান (অটো রেসিং) ও ট্যুর ডি ফ্রান্স।

তবু খেলার মাঠ কিংবা কোর্ট একেবারে ফাঁকা থাকেনি। কথায় আছে ‘দ্য শো মাস্ট গো অন’। এ কথা মেনে কোর্টে গড়ায় ইউএস ওপেন। সেখানে অফিশিয়ালের গায়ে বল মেরে প্রতিযোগিতা থেকে বাদ পড়েন টেনিসের ‘বিগ থ্রি’র একজন—নোভাক জোকোভিচ। সেই টুর্নামেন্ট জিতে টেনিসে নতুনের গান শোনান ডমিনিক থিম। এ বছরই মারিয়া শারাপোভা তুলে রাখেন র‍্যাকেট। অবসর!

কিংবদন্তি বাবার পথে হেঁটে এ বছর ফর্মুলা টু জেতেন মিক শুমাখার। তাঁর বাবার নামটা না বললেও চলে। লুইস হ্যামিল্টন মিকের বাবার নামটা আরও জোরেশোরে তুলে ধরেছেন এ বছর। যুগ্মভাবে সর্বোচ্চ সাতবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ের রেকর্ড গড়ে মাইকেল শুমাখারকে ছুঁয়ে ইতিহাস গড়েছেন কিংবদন্তি। আর গ্রাঁ প্রিঁ জয়ে তো এ বছর শুমাখারকেও ছাড়িয়ে গেছেন হ্যামিল্টন।

ফর্মুলা ওয়ানে যেমন হ্যামিল্টন, বাস্কেটবলে তেমনি লেব্রন জেমস। এ বছর এনবিএ ফাইনালে চতুর্থবারের মতো এমভিপি (মোস্ট ভ্যালুয়েবল প্লেয়ার) হন জেমস। এনবিএর ইতিহাসে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে আলাদা তিনটি দলের হয়ে এমভিপি হওয়ার রেকর্ড গড়েন জেমস (মায়ামি হিট, লস অ্যাঞ্জেলেস লেকার্স ও ক্লিভল্যান্ড ক্যাভেলিয়ার্স)।

জেমসের এ সাফল্যের বছরে ব্যতিক্রমী অর্জনে সবাইকে চমকে দেন মাইক টাইসন। মুষ্টিযুদ্ধে একসময়ের এই অবিসংবাদিত কিংবদন্তি গত মাসে ফিরে আসেন রিংয়ে। ৫৪ বছর বয়সী টাইসন আরেক চ্যাম্পিয়ন রয় জোনস জুনিয়রের বিপক্ষে রিংয়ে যেন অন্য মানুষ হয়ে নেমেছিলেন। ১৫ বছর পর রিংয়ে ফেরার আবেগ সামলাতে না পেরে তাঁর চোখ ভিজেছিল জলে। ৫১ বছর বয়সী জোনসের বিপক্ষে তাঁর ড্র মনে রাখবেন অনেকে।

আরেক কিংবদন্তি মুষ্টিযোদ্ধা টাইসন ফিউরি অবসর ভেঙে ফিরে আসেন এ বছর। কারণ হিসেবে বলেন, তাঁর ‘আর কিছুই করার নেই।’ ৪০ বছর বয়স পর্যন্ত লড়াই করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন প্রথম মুষ্টিযোদ্ধা হিসেবে ডব্লুবিএ, আইবিএফ, ডব্লুবিসি, ডব্লুবিও এবং রিং ম্যাগাজিন শিরোপাজয়ী এ কিংবদন্তি।

সাঁতারে কিছুদিন আগে দারুণ সুখবর পান চীনের বিশ্ব রেকর্ডধারী সাঁতারু সুন-ইয়াং। ফ্রিস্টাইলে তর্কযোগ্যভাবে সর্বকালের সেরা এই সাঁতারুর ডোপ নেওয়ার অভিযোগে ৮ বছরের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের রায় দেন সুইস আদালত। বিষয়টি তারা খেলাধুলার সর্বোচ্চ আদালত কোর্ট অব আরবিট্রেশন ফর স্পোর্টসে পুনরায় স্থানন্তর করে। এর মধ্য দিয়ে টোকিও অলিম্পিকে প্রতিদ্বন্দ্বিতার দ্বার খুলে যেতে পারে সুনের।