মনোবিদের শরণে বাকি–শাকিলরা

নিশানা ভেদের খেলা শুটিং। অখণ্ড মনোযোগ বড় প্রয়োজন। অথচ পদক জেতার লড়াইয়ে নেমে চাপের মুখে ভেঙে পড়েন আবদুল্লাহ হেল বাকি, শাকিল আহমেদরা। কখনো স্নায়ুচাপে ভোগেন, কখনো অস্ত্র হাতে তুলেই শুনতে পান হৃৎস্পন্দন। এসব সমস্যার সমাধানের জন্য বারবার ফেডারেশনের কাছে ক্রীড়া মনোবিদ চেয়েছেন শুটাররা। অবশেষে ফেডারেশন সেই ব্যবস্থা করেছে।

কানাডা প্রবাসী বাংলাদেশি ক্রীড়া মনোবিদ আজহার আলী খান আজ বিকেলে শুনলেন শুটারদের কথা। গুলশান শুটিং রেঞ্জে প্রায় তিন ঘণ্টা তিনি শুটারদের সঙ্গে কাটিয়েছেন। দিয়েছেন মনস্তাত্ত্বিক পরামর্শ।

শুটিংয়ে চিন্তা করার অনেক সময় পাওয়া যায়। চিন্তা করার অভ্যাস না থাকলে সেকেন্ডের ভগ্নাংশে মানসিক শক্তি নিচে নেমে যেতে পারে।
আজহার আলী খান, মনোবিদ
মনোবিদ আজহার আলী খানের ক্লাসে আবদুল্লাহ হেল বাকি, শাকিলরা। আজ গুলশান শুটিং রেঞ্জে
প্রথম আলো

আজহার আলী খান বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়দের মনস্তত্ত্ব নিয়ে কাজ করছেন কয়েক বছর ধরেই। করোনার সময়েও অনলাইনে জাতীয় দলের মেয়েদের এবং অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী ক্রিকেটারদের নিয়ে কাজ করেছেন। গলফার সিদ্দিকুর রহমানকে তো সারা বছরই পরামর্শ দেন তিনি। দুই সপ্তাহ আগে কানাডা থেকে ঢাকায় এসে আলী খান চলে যান সিদ্দিকুরের অনুশীলনে। সাভার গলফ কোর্সে সিদ্দিকুরের সঙ্গে কাজ করেছেন।

তবে শুটারদের সঙ্গে কালই প্রথম কাজ করলেন তিনি। সে অভিজ্ঞতার কথা জানাতে গিয়ে আলী খান বলেন, ‘শুটিংয়ে চিন্তা করার অনেক সময় পাওয়া যায়। চিন্তা করার অভ্যাস না থাকলে সেকেন্ডের ভগ্নাংশে মানসিক শক্তি নিচে নেমে যেতে পারে। আর এতে খেলায় প্রভাব পড়ে। আমি এসব বিষয় নিয়েই তাঁদের সঙ্গে কাজ করেছি। তারা খুব সহজেই বিষয়গুলো বুঝতে পেরেছে।’

আমরা অনেক দিন ধরেই চাইছিলাম বিশেষজ্ঞ ক্রীড়া মনোবিদের সঙ্গে এমন একটা সেশন করানো হোক।
আবদুল্লাহ হেল বাকি, শুটার

২০১৮ গোল্ডকোস্ট কমনওয়েলথ গেমসে অল্পের জন্য সোনা জিততে পারেননি বাকি। টানা দুবার কমনওয়েলথ গেমসে রুপাজয়ী বাকি এসএ গেমসের ব্যক্তিগত ইভেন্টে এ পর্যন্ত সোনার পদক জিততে পারেননি। দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিযোগিতায় নামলেই স্নায়ুচাপ ঘিরে ধরে তাঁকে। এসব নিয়ে বাকি কথা বলেছেন আলী খানের সঙ্গে।

মনোবিদের এমন ক্লাসে খুশি বাকি, ‘আমরা অনেক দিন ধরেই চাইছিলাম বিশেষজ্ঞ ক্রীড়া মনোবিদের সঙ্গে এমন একটা সেশন করানো হোক। আমি কমনওয়েলথ গেমস ও এসএ গেমসে গিয়ে প্রতিবার একই সমস্যার মুখোমুখি হই। শেষ পর্যন্ত আলী ভাইয়ের সেশন পেয়ে খুব ভালো লাগছে।’

অনুশীলনে শুটাররা
ফাইল ছবি


মাত্র এক সেশনেই বেশ উপকার পেয়েছেন বাকি, যেটা ভবিষ্যতে কাজে দেবে বলে তাঁর বিশ্বাস, ‘মানসিকভাবে আমার যে দুর্বলতা আছে, যেসব নেতিবাচক চিন্তা করেছি এত দিন, সেগুলো করা উচিত হয়নি। ভুলগুলো নিয়ে কথা বলেছি। সেভাবেই এখন থেকে অনুশীলন করব, যাতে ভবিষ্যতে আরও ভালো করতে পারি।’

ভবিষ্যতে এমন সেশন আরও আয়োজনের প্রতিশ্রুতি দিলেন ফেডারেশনের মহাসচিব ইন্তেখাবুল হামিদ, ‘আমরা অনেক দিন ধরে ক্রীড়া মনোবিদ খুঁজছিলাম। বিদেশি কয়েকজনকে পেয়েছিলাম। কিন্তু ওদের নিলে সবচেয়ে বড় সমস্যাটা হতো ভাষাগত। বিসিবি থেকে আলী খানের কথা জেনেছি কদিন আগে। এবার শুটারদের প্রতিক্রিয়া নিয়ে কমিটিতে এই বিষয়ে বিশদ আলোচনা করব। এরপর প্রয়োজনে দীর্ঘ মেয়াদে এমন সেশনের ব্যবস্থা করব।’