যুক্তরাজ্যপ্রবাসী মুরহাদের লাল-সবুজের স্বপ্ন

বাংলাদেশের হয়ে টেবিল টেনিস খেলার স্বপ্ন দেখছেন মুরহাদ হোসেইন।ছবি: প্রথম আলো

পল্টন শহীদ তাজউদ্দীন উডেন ফ্লোর জিমনেসিয়ামে অখণ্ড মনোযোগে অনুশীলনে ব্যস্ত মুরহাদ হোসেইন। অন্যরা যখন ব্যাগ গুছিয়ে বাসায় ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তখনো মেরিনার্সের টেবিল টেনিস খেলোয়াড় মোহাম্মদ তুহিনের সঙ্গে অনুশীলন করে চলেছেন মুরহাদ।

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত যুক্তরাজ্যপ্রবাসী টিটি খেলোয়াড় মুরহাদ। শুধু বাংলাদেশের হয়ে টিটি খেলবেন বলেই ঢাকায় ছুটে এসেছেন গত সপ্তাহে। বাবা মোকাদ্দেস হোসেন বাংলাদেশ ছেড়ে প্রায় ৩০ বছর আগে ইংল্যান্ডে পাড়ি জমিয়েছিলেন। সেখানেই জন্ম মুরহাদের। ছোটবেলা থেকেই খেলাপাগল মুরহাদ বাংলাদেশের হয়ে টেবিল টেনিস খেলতে চান।

ডেনমার্কপ্রবাসী জামাল ভূঁইয়া বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক। বাংলাদেশের হয়ে সুইমিংপুলে ঝড় তুলেছেন লন্ডনপ্রবাসী জুনাইনা আহমেদ। জিমন্যাস্টিকসে লাল–সবুজের জার্সি গায়ে লন্ডন অলিম্পিক খেলেছেন যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী সাইক সিজার। সেই ধারাবাহিকতায় এবার টেবিল টেনিস খেলতে এসেছেন লন্ডনপ্রবাসী মুরহাদ।

যুক্তরাজ্যপ্রবাসী টেবিল টেনিস খেলোয়াড় মুরহাদ হোসেইন।
ছবি: প্রথম আলো

২০ বছর বয়সী মুরহাদ পড়াশোনা করছেন ইংল্যান্ডের নটিংহাম ট্রেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্স ও গেম ডেভলপমেন্টের ওপর। বাবা মোকাদ্দেস হোসেইন ও মা হামিদা বেগমের বাড়ি সিলেটের জালালাবাদে। বর্তমানে সপরিবার যুক্তরাজ্যপ্রবাসী। মুরহাদের বাবার রেস্তোরাঁ ব্যবসা রয়েছে সমারসেটে।

ইংল্যান্ড জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়া মুরহাদের জন্য খুবই কঠিন ব্যাপার। এ জন্যই তিনি বাংলাদেশের হয়ে খেলতে চান। নিজের উদ্যোগেই আন্তর্জাতিক টেবিল টেনিস ফেডারেশনের মাধ্যমে প্রথমে বাংলাদেশ টেবিল টেনিস ফেডারেশনে যোগাযোগ করেন ২০১৯ সালে। ওই সময় আন্তর্জাতিক টেবিল টেনিস ফেডারেশন থেকে বাংলাদেশের টিটি ফেডারেশনের সহসভাপতি খোন্দকার হাসান মুনীরের টেলিফোন নম্বর দেওয়া হয়। মুরহাদ এই কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করে নিজের ইচ্ছার কথাটা জানান, ‘আমি নিজের পরিচয় দিয়ে বাংলাদেশে খেলার আগ্রহের কথা তাঁকে জানিয়েছিলাম। তিনিই আমাকে এখানে আসার সব ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।’

মুরহাদ হোসেইনের স্বপ্ন একদিন বাংলাদেশ দলের হয়ে খেলবেন টেবিল টেনিস।
ছবি: প্রথম আলো

বর্তমানে মুরহাদ টেবিল টেনিস ফেডারেশনের উডেন ফ্লোর জিমনেসিয়ামে আবাসিক ক্যাম্পে অন্য জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের সঙ্গে থাকেন। একই সঙ্গে নিয়মিত অনুশীলন করছেন।

আগামী এপ্রিলে শুরু হতে যাওয়া বাংলাদেশ গেমসে খেলতে চান মুরহাদ। জাতীয় দলের কোচ মোহাম্মদ আলী জানালেন, ‘ওর যদি সব কাগজপত্র ঠিক থাকে, তাহলে এখানে খেলতে কোনো সমস্যা নেই। ও খুবই প্রতিভাবান একজন খেলোয়াড়।’

যুক্তরাজ্যে অনূর্ধ্ব-১৯ স্কুল চ্যাম্পিয়নশিপ ব্রোঞ্জ জিতেছেন মুরহাদ। ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয় চ্যাম্পিয়নশিপে ছিলেন সেরা ৩২-এ। স্কুল দলের হয়ে জিতেছেন সোনা।
বাংলাদেশের জার্সিতে মুরহাদ খেলবেন, এটা শুনে প্রথমে নাকি বিশ্বাসই করতে চাননি মা–বাবা, ‘আমি যখন প্রথম বাবা-মাকে এই সিদ্ধান্তটা জানালাম, ওনারা তো বিশ্বাস করতেই চাইছিলেন না। কিন্তু আমি এখন ঢাকায়। ওনারা তো খুব খুশি।’

মুরহাদের বড় ভাই ও দুই বোন শ্রবণপ্রতিবন্ধী। একমাত্র তিনিই সুস্থ ও স্বাভাবিক। বাংলাদেশের হয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে খেলতে চান মুরহাদ, ‘ইংল্যান্ডে জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়া খুব কঠিন। কিন্তু আমার বিশ্বাস, এখানে খেললে বাংলাদেশের হয়ে ভালো কিছু করতে পারব। সেই চিন্তা থেকেই বাংলাদেশে খেলার পরিকল্পনা। আমি নিজের প্রতিভার ঝলক দেখাতে চাই।’

বাংলাদেশ গেমসেই আপাতত সব নজর মুরহাদের, ‘কর্মকর্তারা আমাকে আশা দিয়েছেন বাংলাদেশ গেমসে খেলানোর। আমার সেরাটা দিয়েই খেলব। এটা আমার জন্য একটা চ্যালেঞ্জ। নিজেকে প্রমাণ করতে চাই আমি।’

শহীদ তাজউদ্দীন উডেন ফ্লোর জিমনেসিয়ামে অনুশীলনে মগ্ন মুরহাদ হোসেইন।
ছবি: প্রথম আলো

বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার কোনো পর্যায়েই কখনো টিটিতে সোনা জেতেনি। অথচ সেই স্বপ্ন দেখার সাহস দেখাচ্ছেন মুরহাদ, ‘আমি জানি ভারত এই উপমহাদেশে সবচেয়ে শক্তিশালী দল। ওদের টপকেও সোনা জেতা সম্ভব। আমি কঠোর পরিশ্রম করতে ভালোবাসি। ফেডারেশন যদি সুযোগ দেয়, তাহলে নতুন প্রজন্মের একজন হয়ে বাংলাদেশকে আরও ওপরে তুলে ধরতে পারব। নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস আছে আমার।’

শুধু তাই নয়, বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ের সেরা এক শর মধ্যে বাংলাদেশকে তুলে আনতে চান, ‘আমি স্বপ্ন দেখি বাংলাদেশের লাল–সবুজের জার্সি গায়ে খেলব। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে অনূর্ধ্ব-১৯ র‌্যাঙ্কিংয়ের সেরা এক শর মধ্যে তুলে আনতে চাই আমাকে। আমার মাধ্যমে যেন ছেলেদের এককে সর্বোচ্চ র‌্যাঙ্কিংয়ে নাম থাকে বাংলাদেশের।’