যুক্তরাষ্ট্রের জিমন্যাস্টিকসে ৭৫৫১ কোটি টাকায় যৌন নির্যাতনের মামলার নিষ্পত্তি

গত সেপ্টেম্বরে আদালনের শুনানিতে শপথবাক্য পাঠ করার সময় যুক্তরাষ্ট্রের কিংবদন্তি জিমন্যাস্ট সিমোন বাইলসছবি: রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্রের জিমন্যাস্টিকসে এক অন্ধকার অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটল।

১৭৫ বছর সাজা পাওয়া ল্যারি নাসার এখন কারাগারে। যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় জিমন্যাস্টিকস দলের চিকিৎসক ছিলেন তিনি। ২০১৭ সালের শেষ দিকে তাঁর বিরুদ্ধে মারাত্মক এক অভিযোগ ওঠে। শতাধিক নারী জিমন্যাস্ট যৌন নিপীড়নের অভিযোগ তোলেন নাসারের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি গড়ায় আদালতে।

প্রায় পাঁচ বছরব্যাপী এ মামলা সুরাহা হলো কাল। সংবাদ সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, নাসারের লালসার শিকার হওয়া নারী জিমন্যাস্টদের সঙ্গে ৩৮ কোটি ডলারে (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩ হাজার ২৬০ কোটি টাকা) মামলাটি নিষ্পত্তি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের জিমন্যাস্টিকস, অলিম্পিক, প্যারালিম্পিক ও ইনস্যুরেন্স কর্তৃপক্ষ।

যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম ‘নিউইয়র্ক টাইমস’ লিখেছে, ‘এর মধ্য দিয়ে ইতিহাসের অন্যতম কলঙ্কময় শিশু নির্যাতন অধ্যায়ের সমাপ্তি হলো।’

এএফপি জানিয়েছে, যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়ার মামলায় এটা অন্যতম (আর্থিকভাবে) বড় নিষ্পত্তির নজির। নাসারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা জিমন্যাস্টদের মধ্যে আছেন কিংবদন্তি সিমোন বাইলস, অ্যালি রেইসমান ও ম্যাককেলা ম্যারোনি।

নাসার তাঁর দুই যুগের বেশি সময়ব্যাপী ক্যারিয়ারে ধারাবাহিকভাবে যৌন নির্যাতন করেছেন, এমন অভিযোগ করেন জিমন্যাস্টরা। ইন্ডিয়ানাপোলিসে আদালতে এ মামলার নিষ্পত্তি হয়।

নাসার যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় জিমন্যাস্ট দলে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি জিমন্যাস্টিকস ফেডারেশনে (ইউএসএজি) মেডিসিন চিকিৎসকের দায়িত্বেও ছিলেন। এর পাশাপাশি মিশিগান স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়েও চিকিৎসকের দায়িত্বে ছিলেন।

২০১৮ সালে মিশিগান স্টেট বিশ্ববিদ্যালয় একই অভিযোগে ওঠা মামলার নিষ্পত্তি করে ৫০ কোটি ডলারে (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৪ হাজার ২৯০ কোটি টাকা)। অর্থাৎ সব মিলিয়ে এ মামলার নিষ্পত্তি করতে খরচ হলো ৮৮ কোটি ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৭ হাজার ৫৫১ কোটি টাকা)।

অপরাধের সাজা পেয়েছেন চিকিৎসক ল্যারি নাসার
ছবি: টুইটার

যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়া ১৮০ নারীর প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করা জন ম্যানলি এক বিবৃতিতে বলেন, ‘অভিযোগকারীদের সাহসের কারণেই আমরা টিকে থাকতে পেরেছি। এই সাহসী নারীরা নির্যাতন নিয়ে সংবাদমাধ্যমে অসংখ্যবার কথা বলেছেন, সাক্ষাৎকার দিয়েছেন এবং বিষয়টি জনসমক্ষে নিয়ে এসেছেন, যেন আর একটি শিশুও নির্যাতনের শিকার না হয়।’

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক জিমন্যাস্ট ও আইনজীবী র‌্যাচেল ডেনহোলান্ডার ২০১৬ সালে প্রথম নাসারের যৌন নির্যাতনের বিরুদ্ধে মুখ খোলেন। তিনি এই নিষ্পত্তিকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাঁর টুইট, ‘শেষ পর্যন্ত এ অধ্যায়ের সমাপ্তি হলো। এখন সবকিছু নতুন করে শুরুর চ্যালেঞ্জ নিতে হবে।’

আদালেত উপস্থিত হওয়া যুক্তরাষ্ট্রের নারী জিমন্যাষ্টরা
ছবি: টুইটার

২০১৮ সালে নাসারের বিরুদ্ধে স্রোতের মতো যৌন নির্যাতনের অভিযোগ ওঠার পর যুক্তরাষ্ট্রের জিমন্যাস্টিকস ফেডারেশন দেউলিয়াত্বের আবেদন করেছিল। দেশটির সংবাদমাধ্যম ‘ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’ জানায়, ইনস্যুরেন্স প্রতিষ্ঠান টিআইজি ‘সিংহভাগ’ দিতে রাজি হওয়ায় মামলাটির নিষ্পত্তি করা সম্ভব হয়েছে।

শুধু তা–ই নয়, নিষ্পত্তির শর্ত হিসেবে যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়া নারীদের ভেতর থেকে একজন যুক্তরাষ্ট্রের জিমন্যাস্টিকস ফেডারেশনে বোর্ড পরিচালক হিসেবেও কাজ করবেন।