যেখানে আলাদা গ্রাস–ড্রেসেলরা

২০০ মিটারে অলিম্পিক সোনাজয়ী কানাডার আন্দ্রে ডি গ্রাসের সঙ্গে বাংলাদেশের জহির রায়হানছবি: সংগৃহীত

ফেসবুকে নিজের প্রোফাইল ছবি বদলে ফেলেছেন অ্যাথলেট জহির রায়হান। ছবিটা তিনি তুলেছেন টোকিও অলিম্পিকে ২০০ মিটারে সোনাজয়ী কানাডার আন্দ্রে ডি গ্রাসের সঙ্গে। আপাতত এমন কিছু স্মৃতিই সঙ্গী জহিরের।

জহিররা অলিম্পিকে যান শুধু অংশগ্রহণ করতেই, বড়জোর লক্ষ্য থাকে ব্যক্তিগত রেকর্ডটা উন্নত করা। আন্দ্রে ডি গ্রাসের কথা বাদ দিন, অলিম্পিক থেকে একটা ব্রোঞ্জ আনার স্বপ্নও এখনো নেই বাংলাদেশের ক্রীড়াবিদদের। অলিম্পিক থেকে তাঁরা ফিরে আসেন কিছু স্মৃতি আর অভিজ্ঞতা নিয়ে। কিন্তু সে অভিজ্ঞতা তাঁরা পরবর্তী সময়ে কাজে লাগাতে পারবেন কি না, জানেন না সেটাও।

ডি গ্রাসদের কাছাকাছি মানের উন্নত অনুশীলন ব্যবস্থা দিতে হবে বাংলাদেশের ক্রীড়াবিদদের
ছবি: রয়টার্স

আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির বৃত্তি নিয়ে গত দুই বছর ফ্রান্সে উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন সাঁতারু আরিফুল ইসলাম। টোকিও অলিম্পিকেই সেই বৃত্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে। অলিম্পিকের অনুশীলনে আরিফুল সুইমিংপুলে পাশের লেনগুলোতে পেয়েছিলেন বিশ্বসেরা সাঁতারুদের। অনুশীলনের ফাঁকে অন্য সাঁতারু, কোচের সঙ্গে কথা বলেছেন। জানতে চেয়েছেন তাঁদের প্রস্তুতি আর সাফল্য সম্পর্কে।

অলিম্পিক থেকে ফিরে আরিফুলের উপলব্ধি, বিশ্ব সাঁতার থেকে বাংলাদেশ এখনো যোজন যোজন পিছিয়ে। টোকিও অলিম্পিকে সর্বোচ্চ ৫টি সোনাজয়ী যুক্তরাষ্ট্রের সাঁতারু ক্যালেব ড্রেসেলের উদাহরণ টেনে বললেন, ‘ওদের মতো করে অনুশীলনের কথা ভাবতেই পারি না আমরা। তাঁদের মতো আধুনিক কোনো সুযোগ–সুবিধাই নেই আমাদের। নেই কোনো দীর্ঘমেয়াদি অনুশীলন, ভালো কোচ।’

অলিম্পিক বিজয়ী সাঁতারুরা যে সুযোগ–সুবিধা র মধ্যে অনুশীলন করেন, সেটা ভাবতেও পারেন না বাংলাদেশের ক্রীড়াবিদেরা
ছবি: রয়টার্স

আরিফুল জানালেন, ড্রেসেলের একটা নোটবুক আছে। তাতে নিজের প্রতিদিনের পারফরম্যান্স টুকে রাখেন তিনি। অনুশীলনে কেমন টাইমিং করলেন, কার কাছে হারলেন—সেসব মিলিয়ে নিজের পারফরম্যান্সের গ্রেডিং করেন প্রতিদিন। ‘সাঁতারে মাইক্রো সেকেন্ডে পদকের ব্যবধান গড়ে দেয়। ওরা চেষ্টা করে প্রতিদিন নিজেকেই নিজে হারিয়ে দিতে। অথচ আমরা শুধু গেমসের আগে কোনোরকমে ক্যাম্প শুরু করি’—বলছিলেন আরিফুল।

টোকিওতে জ্যামাইকান স্প্রিন্টার ইয়োহান ব্লেক ও আন্দ্রে ডি গ্রাসের কোচদের সঙ্গে কথা হয়েছে জহিরের। তাঁদের উন্নতির রহস্য জানতে চাইলে নাকি উল্টো কোচদের প্রথম প্রশ্ন ছিল, ‘তোমাদের দেশের প্রতিভা বাছাইয়ের পদ্ধতিটা কী?’ এমন প্রশ্নে জহির আর কী উত্তর দেবেন! দেশের অ্যাথলেটিকসে তৃণমূল থেকে প্রতিভা তুলে আনার উদ্যোগ নেই, নেই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অভাব—বাধ্য হয়ে এসবই নাকি বলেছেন তিনি।

জহির রায়হান অলিম্পিকে কাউকে বলতে পারেননি বাংলাদেশে প্রতিভা বাছাইয়ের পদ্ধতি কি!
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

২০১৭ সালে কেনিয়ায় অনুষ্ঠিত বিশ্ব যুব অ্যাথলেটিকসে ৪০০ মিটারে ক্যারিয়ার সেরা টাইমিং (৪৮ সেকেন্ড) করেছিলেন জহির। টোকিওতে সেটাও পারেননি। আক্ষেপ থেকে বলছিলেন, ‘আমাদের ওপর দোষ না চাপিয়ে আগে উন্নত অনুশীলনের ব্যবস্থা করতে হবে। ২০১৭ সালের পর আমাকে ঘিরে দীর্ঘমেয়াদি কোনো পদক্ষেপই নেওয়া হয়নি।’

আর্চারিতে ছেলেদের রিকার্ভের শীর্ষ তারকা যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাডি এলিসন টোকিও অলিম্পিকে সোনা জিততে পারেননি। মেয়েদের র‌্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর তিরন্দাজ ভারতের দীপিকা কুমারিও পারেননি পদকমঞ্চে উঠতে। রোমান খুব কাছ থেকে দেখেছেন কোরিয়া, তুরস্ক আর চীনের সাফল্য। এসব দেশের খেলোয়াড়েরা কীভাবে এত নিখুঁতভাবে নিশানা ভেদ করতে পারেন, সেটা বললেন রোমান, ‘কোরিয়ান মেয়েরা ৫ বছর থেকেই খেলতে শুরু করে। গত ৩০ বছর ধরে এ জন্যই অলিম্পিকে কেউ ওদের হারাতে পারে না।’

দেশসেরা এই তিরন্দাজের বিশ্বাস, প্রতিভা বাংলাদেশেও আছে। প্রয়োজন শুধু অনুশীলনের উন্নত সুযোগ–সুবিধা। ‘অলিম্পিক থেকে পদক আনা আমাদের পক্ষেও সম্ভব। কিন্তু এ দেশের আর্চারদের জন্য সে রকম সুযোগ–সুবিধা নেই। সবচেয়ে বড় সমস্যা আর্থিক অনিশ্চয়তা। তাই ভালো কিছু করার তাড়নাও অন্য দেশের চেয়ে কম থাকে খেলোয়াড়দের’—বলছিলেন রোমান সানা।