রিয়ালে যাবেন শুনে নিজেদের খেলোয়াড়কে প্লেনে উঠতে দেয়নি বার্সা

থমাস উয়ের্তেল।
ছবি: টুইটার

লিওনেল মেসি যদি বিশ্বে এত বড় তারকা না হতেন, তাহলে তাঁর সঙ্গেও এমন করত বার্সেলোনা?

নিজেদের বাস্কেটবল দলের খেলোয়াড় থমাস উয়ের্তেলের সঙ্গে যেমন অশোভন আচরণ করেছে কাতালান ক্লাবটি, তাতে মেসিভক্তদের মনে এমন প্রশ্ন উঠতেই পারে!

কী করেছে বার্সেলোনা? উয়ের্তেল বার্সা ছাড়তে চান, ক্লাব তাতে রাজি নয়। সেটি নিয়ে উয়ের্তেল ও তাঁর প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা চলছিল। সেখানেই শেষ নয়, বার্সা ভেবেছিল ক্লাব ছাড়লে উয়ের্তেল যাবেন তুরস্কের ক্লাব ফেনেরবাচের বাস্কেটবল দলে। কিন্তু পরে বার্সা জানতে পারে, ফরাসি এই পয়েন্ট গার্ড চুপিচুপি কথা বলেছেন বার্সার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে! গত মঙ্গলবার ইস্তাম্বুলে আনাদলু এফের বিপক্ষে ম্যাচ খেলে ফেরার পথে উয়ের্তেলকে দলের প্লেনেই উঠতে দেয়নি বার্সা!

বার্সেলোনা ছাড়তে চেয়ে বিপদে পড়েছে থমাস উয়ের্তেল।
ছবি: টুইটার

গত কয়েক বছরে সাবেক ও বর্তমান অনেক খেলোয়াড়ের সঙ্গে বার্সার অশোভন আচরণের অনেক গল্প সংবাদমাধ্যমে এসেছে। নেইমার, দানি আলভেজসহ অনেক ফুটবলারই বার্সার বিরুদ্ধে বাজে আচরণের অভিযোগ তুলেছেন। এমনকি কদিন আগে বার্সার সভাপতির চেয়ার থেকে পদত্যাগ করা জোসেপ মারিয়া বার্তোমেউর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল, মেসি-গার্দিওলা-জাভিসহ নিজেদের সাবেক ও বর্তমান অনেক খেলোয়াড়-কোচের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কুৎসা রটিয়ে নিজের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে একটা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করেছিলেন বার্তোমেউ! এখন নিজেদের বাস্কেটবল খেলোয়াড়ের সঙ্গে বার্সার এমন আচরণ চারদিকে নিন্দা কুড়াচ্ছে!

তা-ও বার্সা কাজটা করেছে এমন এক সময়ে, যখন করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে আন্তর্জাতিক ভ্রমণে অনেক বিধিনিষেধ আছে। বার্সার মতো ক্লাব যেখানে অনেক সহজে কূটনৈতিক ও ব্যবস্থাপনাগত জটিলতা এড়িয়ে ভ্রমণের ব্যবস্থা করতে পারে, একজন খেলোয়াড়ের পক্ষে ব্যক্তিগতভাবে তো সেটা এখন অত সহজে সম্ভব নয়।

বার্সেলোনার সমালোচনা এখন তাই চারদিকে। রাশিয়ান ক্লাব সিএসকেএ মস্কোর পয়েন্ট গার্ড ও ইউরো লিগ তারকা মাইক জেমস টুইট করেছেন, ‘ওরা কীভাবে ওকে প্লেনে উঠতে দিল না, সেটাই ভাবছি! বার্সাকে সব সময় ইউরো লিগের দলগুলোর মধ্যে অন্য মর্যাদায় (গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড) দেখেছি, কিন্তু যা হয়েছে সেটা সত্যিকারের ন্যক্কারজনক ঘটনা।’

বার্সার আচরণকে একনায়কতন্ত্র মনে হয়েছে জেমসের কাছে, ‘আমরা তোমাকে আমাদের ক্লাবে চাই না, চাই তুমি চলে যাও। কিন্তু তুমি শুধু ওই ক্লাবে যেতে পারবে, যেখানে আমরা চাই তুমি যাও... এটা তো একনায়কতন্ত্র নয়! আপনি যদি আমাকে যেতে দিতে না চান, আমি আমার পরিবারের জন্য সবচেয়ে ভালো যেটাতে হয় তা-ই করব।’

বার্সায় খেলা সাবেক ফরাসি তারকা কেভিন সেরাফিন আবার জেমসের টুইটের উত্তরে জেমসের ‘ভুল’ ভাঙিয়ে দিয়েছেন, ‘সে ক্ষেত্রে ওদের (বার্সা) তুমি যে নজরে দেখতে, সেটি বদলাও।’ বার্সা এমন বাজে আচরণ সব সময়ই করে বোঝাতে লিখেছেন, ‘আমি আসলে বার্সার এমন আচরণে অবাক হইনি।’

কোর্টে থমাস উয়ের্তেল।
ছবি: টুইটার

বার্সার সমর্থকদের প্রশংসা করলেও কর্মকর্তাদের ধুয়ে দিয়েছেন সেরাফিন, ‘ক্লাবটার সমর্থকেরা দারুণ। কিন্তু কর্মকর্তারা হচ্ছে কিছু পুতুলের মতো। বড়দিন উপলক্ষে আমি ওদের মস্তিষ্ক উপহার দেব।’ আরেক ফরাসি বাস্কেটবল তারকা ইভান ফোরনিয়ের বার্সেলোনার বাস্কেটবল দলের টুইটার অ্যাকাউন্ট ট্যাগ করে লিখেছেন, ‘তোমরা খুবই নিচু মানসিকতার!’

স্পেনের বাস্কেটবল খেলোয়াড়দের সংগঠন এবিপিও উয়ের্তেলের সঙ্গে বার্সার এমন অভব্য আচরণের তীব্র নিন্দা জানিয়ে লিখেছে, ‘রাতের সাড়ে ১২টায় একজন খেলোয়াড় বিদেশের এক শহরে পড়ে আছে। তাঁর ক্লাব তাঁকে ক্লাবে ফেরার বিমানে উঠতে দেয়নি। এর সঙ্গে (বার্সেলোনার) যাঁরা জড়িত, তাঁদের কি এখন ব্যাখ্যা করতে হবে যে কোভিড-১৯-এর কারণে পরিস্থিতিটা এখন কী দাঁড়িয়েছে? মানবিকতা বলতে কি কিছু নেই? আমরা ওই খেলোয়াড়ের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করে তাঁকে সব ব্যাপারে সাহায্য করছি।’

এবিপির সভাপতি আলফনসো রেইয়েস শুধু টুইট করেছেন, ‘ব্যাখ্যার অযোগ্য এবং কুরুচিপূর্ণ কাজ!’