রোমান-দিয়াকে নিয়ে স্বপ্ন দেখাই যায়

বাংলাদেশের আর্চারি দলকে নিয়ে স্বপ্ন দেখাই যায়ছবি: এএফপি

ক্রিকেটের বাইরে খেলাধুলার অন্যান্য দিকে বিশ্ব মঞ্চে বাংলাদেশের উপস্থিতি তেমন নেই। সাফল্যের কথা তো বাদই দেওয়া গেল। তবে সাফল্য–খরার মধ্যেই নতুন আশা হয়ে এলেন দেশের তরুণ দুই তিরন্দাজ। আর্চারির আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের পরিচিতি ইতিমধ্যে তাঁরা দুজন তুলে ধরেছেন। রোমান সানা ও দিয়া সিদ্দিকী সেই নতুন দিনের দিক নির্দেশক, আন্তর্জাতিক বেশ কয়েকটি প্রতিযোগিতায় এরই মধ্যে রোমান বাংলাদেশের জন্য সম্মান নিয়ে এসেছেন। দিয়াও আলো কেড়েছেন সাম্প্রতিক সময়ে। এবার দুজনই দারুণ শুরু করলেন অলিম্পিকের মতো কঠিন প্রতিযোগিতায়।

দিয়া সিদ্দিকী
ছবি: রয়টার্স

২৬ বছর বয়সী তিরন্দাজ রোমান আজ টোকিওতে প্রমাণ করলেন, আর্চারির জগতে বাংলাদেশের প্রবেশ হঠাৎ এসে হারিয়ে যাওয়ার নয়। জাপানের স্থানীয় সময় আজ রাত ৮টায় (বাংলাদেশ সময় বিকেল ৫টা) ২০২০ টোকিও অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান নির্ধারিত থাকলেও, আর্চারির র‍্যাঙ্কিং নির্ধারণের প্রতিযোগিতা চলছে দিনের প্রথমার্ধজুড়ে। রোমান সানার পাশাপাশি মেয়েদের বিভাগে বাংলাদেশের প্রতিযোগী ছিলেন নীলফামারী থেকে আসা ১৭ বছরের তরুণী দিয়া সিদ্দিকী।

টোকিওতে এখন গ্রীষ্মের মাঝামাঝি সময়। গরমের তেজ এই সময় গোটা জাপানেই সচরাচর বেশি থাকে, দেশটির রাজধানীতেও আজ এর ব্যতিক্রম ছিল না। দিনের তাপমাত্রা আজ ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সঙ্গে বাতাসের আর্দ্রতা ৬০ শতাংশের কাছাকাছি। ফলে খোলা জায়গায় প্রতিযোগিতায় নামা বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার ছিল। তবে বাংলাদেশের দুই তরুণ আর্চারকে সে রকম বৈরী আবহাওয়া দমিয়ে রাখতে পারেনি।

রোমান সানা
ছবি: রয়টার্স

দুজনেই একক এবং মিশ্র ইভেন্টের পরবর্তী পর্যায়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার যোগ্যতা অর্জন করেছেন। পুরুষদের র‍্যাঙ্কিংয়ে রোমানের অবস্থান ৬৪ জনের মধ্যে ১৭ নম্বরে, নারীদের বিভাগে দিয়া ৩৬ নম্বরে। দুজনের পয়েন্টের যোগফল মিলিয়ে মিশ্র ইভেন্টে প্রতিযোগিতার নকআউট পর্যায়ে বাংলাদেশকে তাঁরা তুলে নিতে পেরেছেন। ২৯টি দেশের মধ্যে সর্বশেষ ১৬তম হয়ে পরের রাউন্ডে উঠেছে বাংলাদেশ।

এ ছাড়া পুরুষ ও নারী এককের নকআউট পর্যায়েও তাঁরা খেলবেন আগামীকাল শনিবার। ফলে কিছুটা হলেও আশা তাঁরা জাগিয়ে রাখতে পেরেছেন। কাল সকালে রোমান-দিয়া জুটি টোকিওর ইয়ুমেনোশিমা আর্চারি মাঠে মিশ্র ইভেন্টে মুখোমুখি হবেন দক্ষিণ কোরিয়ার দুই শক্ত প্রতিপক্ষের। মিশ্র প্রতিযোগিতায় দুই প্রতিদ্বন্দ্বী শক্ত হলেও আগে থেকেই হাল ছেড়ে দিচ্ছেন না বাংলাদেশের দুই তিরন্দাজ। লড়ে যাবেন তাঁরা শেষ পর্যন্ত। এরপর একক প্রতিযোগিতাও রয়েছে। সেখানেও তাঁরা নিশ্চয়ই প্রমাণ করতে সক্ষম হবেন যে আর্চারি এখন বাংলাদেশের তরুণদের উদ্বুদ্ধ করছে।

রোমান
ছবি: টুইটার

আজকের র‍্যাঙ্কিং রাউন্ড শেষে কথা হচ্ছিল বাংলাদেশের অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে থেকে টোকিও অলিম্পিকে আসা বাংলাদেশ দলের শেফ দ্য মিশন শেখ বশির আহমেদের সঙ্গে। আর্চারিতে বাংলাদেশের তরুণদের দেখানো পারদর্শিতায় তিনি উৎফুল্ল। আজ রাতে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের চাকচিক্যে তিনি উপস্থিত থাকলেও মন তাঁর এখন থেকেই পড়ে আছে আর্চারির আগামীকালের এবং পরবর্তী ধাপের প্রতিযোগিতার দিকে।

রোমান সানার মতো দিয়াও সম্ভবত ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে স্বপ্ন দেখতে উদ্বুদ্ধ করছেন অনেক বেশি। দিয়ার বয়স কম হওয়ায় টোকিও অলিম্পিকের অভিজ্ঞতা তাঁর জন্য শিক্ষণীয় হয়ে উঠবে। কীভাবে নিজেকে আরও ঝালিয়ে নেওয়া যায়, সেই পথের নির্দেশিকা তাঁকে দেখিয়ে দেবে এই টোকিও অলিম্পিক। ফলে আশা করা যায়, এবারের অলিম্পিক থেকে খালি হাতে ফিরে যেতে হলেও অভিজ্ঞতার এই ভান্ডার ভবিষ্যতে তাঁকে ও রোমানকে আরও অনেক পথ পেরোতে সাহায্য করবে।

দুজনই বাংলাদেশের অলিম্পিক পদকের স্বপ্ন শুধু বাঁচিয়েই রাখবেন না, হয়তো বাস্তবায়নও করবেন ভবিষ্যতে। তাঁদের সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে ভবিষ্যতে নতুন প্রজন্মের অনেকেই হয়তো আর্চারি নিয়ে উৎসাহিত হবেন—এমন প্রত্যাশা করাই যায়।