‘সবচেয়ে ছোট দেশ’ হিসেবে অলিম্পিকে পদক সান মারিনোর

ব্রোঞ্জ পদক হাতে কেঁদে ফেলেন পেরেল্লিছবি: রয়টার্স

মেয়েদের শুটিং ট্র্যাপে কাল ব্রোঞ্জ জিতেছেন আলেসান্দ্রা পেরেল্লি। আবেগের ঢেউ তিনি সংবরণ করতে পারেননি। কেঁদে ফেলেন সবার সামনেই।

চোখ মুছতে মুছতে পেরেল্লি বলেন, তাঁর ‘দেশ ছোট হলেও গর্বিত’। অলিম্পিক পদক এনে দিলে দেশ তো গর্বিত হবেই, আর সেটিও যদি হয় দেশের ইতিহাসে প্রথম অলিম্পিক পদক, তাহলে তো কথাই নেই!

কিন্তু পেরেল্লির সাফল্যে কিছু দেশের জন্য কথা থেকে যায়, ভ্রুকুটি আরও বড় হয়। বাংলাদেশের কথাই ধরুন। প্রায় ১৮ কোটি জনসংখ্যার দেশ। এত দিনেও একজন ক্রীড়াবিদ তৈরি করা যায়নি, যাঁর হাত ধরে অলিম্পিক থেকে একটা পদক মিলবে। অথচ ইতালির ভূখণ্ডবেষ্টিত মাত্র ৩৪ হাজার জনসংখ্যার দেশ কিনা অলিম্পিক থেকে পদক তুলে নিল!

অলিম্পিকের ইতিহাসে সবচেয়ে ছোট দেশ হিসেবে পদক জয়ের কীর্তি গড়ল সান মারিনো। ‘মাইক্রোস্টেট’–এ দেশটি মাত্র পাঁচজন ক্রীড়াবিদ পাঠিয়ে এ সাফল্যের দেখা পেল, যেখানে বাংলাদেশ থেকে এবার টোকিও অলিম্পিকে গেছেন ছয় ক্রীড়াবিদ।

যে আর্চারি নিয়ে সবচেয়ে বেশি আশা ছিল, সে ইভেন্টে হার নিশ্চিত হয়েছে এরই মধ্যে।
১৯৬০ সাল থেকেই অলিম্পিকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে সান মারিনো। মোট ১৪টি অলিম্পিকে খালি হাতে ফেরার পর এবার টোকিও গেমস দিয়ে সান মারিনোকে পদকের খাতা খোলালেন পেরেল্লি, ‘ভীষণ গর্ব হচ্ছে। কারণ, আমরা সবাই চেষ্টা করে এ পর্যন্ত পৌঁছেছি।’

অলিম্পিকের বিজয়মঞ্চে উঠে চোখ মুছছেন পেরেল্লি
ছবি: রয়টার্স

পেরেল্লি কথাটা বলার সময় আনন্দাশ্রু আটকাতে পারেননি। তাঁর জন্ম ইতালির রিমিনিতে হলেও ১৮ বছর বয়সে সান মারিনোর নাগরিকত্ব পান। টোকিও অলিম্পিকে আসার আগেই তিনি ছিলেন দেশটির সবচেয়ে সফল অলিম্পিয়ান, ২০১২ লন্ডন অলিম্পিকে নিজের ইভেন্টে চতুর্থ হন।

লন্ডনের সেই স্মৃতি স্মরণ করে পেরেল্লি বলেন, ‘লন্ডনে পদক পাওয়ার খুব কাছাকাছি গিয়েও বিজয়মঞ্চে উঠতে পারিনি। এখন পেরেছি। এটা আমার প্রথম অলিম্পিক না হলেও আমার এবং আমার দেশের জন্য প্রথম পদক। আমার দেশটা খুব ছোট হতে পারে, কিন্তু ভীষণ গর্বিত।’

পেরেল্লি জানেন, দেশে হয়তো তাঁর সাফল্য নিয়ে অনেক হইহুল্লোড় ও উৎসব চলছে। সান মারিনো সাধারণ পর্যটন নিয়ে বিশ্বে আলাদা করে নজর কেড়েছে। খেলাধুলায় তাদের সাফল্য নেই বললেই চলে। পেরেল্লি তাই আশা করছেন, ‘আমি নিশ্চিত, (দেশে) সবাই আনন্দে পাগলপারা, হয়তো অনেকেই কাঁদছে।’

মেয়েদের ট্র্যাপে তিন পদকজয়ী—কাইল ব্রাউনিং (বাঁয়ে), রেহাক স্টেফেচকোভা (মাঝে) ও আলেসান্দ্রা পেরেল্লি
ছবি: রয়টার্স

২০১২ লন্ডন গেমসে সান মারিনোর ইতিহাসে প্রথম অ্যাথলেট হিসেবে অলিম্পিকের যেকোনো ইভেন্টে চতুর্থ স্থানে উঠে এসেছিলেন পেরেল্লি। সেটিও মেয়েদের শুটিংয়ের ট্র্যাপে। তাঁর আগে দেশটির হয়ে অলিম্পিকে সেরা সাফল্য ছিল ফ্রান্সেসকো ন্যানির। ১৯৮৪ লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিকে ৫০ মিটার রাইফেল প্রনে পঞ্চম হয়েছিলেন ন্যানি।

কাল পেরেল্লির ইভেন্টে সোনা জেতেন স্লোভাকিয়ার রেহাক স্টেফেচকোভা।যুক্তরাস্ট্রের কাইল ব্রাউনিং জিতেছেন রুপা। পঞ্চম শুটার বাদ পড়ার পর নিজের মনের অবস্থাটা বোঝান পেরেল্লি, ‘তখন ভেবেছি একবার চতুর্থ হয়েছি, এবার আর খালি হাতে ফিরব না। যেকোনো মূল্যেই হোক (বিজয়মঞ্চে) থাকতে হবে।’

বাবার প্রেরণায় ২০০১ সালে শুটিংয়ে আসেন পেরেল্লি। তাঁর বোন আরিয়ান্না পেরেল্লিও শুটার। ইতালি ও সান মারিনোর প্রতিনিধিত্ব করেছেন। আজারবাইজানে ২০১৭ ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে ট্র্যাপে সোনা জিতেছেন। অলিম্পিক ওয়েবসাইটে পেরেল্লির প্রোফাইল দেখে বোঝা যায়, বোনকে তিনি আদর্শ মানেন।

শুটিংয়ের ট্র্যাপে পদকজয়ের হাসি পেরেল্লির
ছবি: রয়টার্স

শুটিংয়ে মাঝেমধ্যে তাঁকে বিরতিও নিতে হয়েছে। ২০১৩ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে যেমন অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার জন্য সাত মাস শুটিং থেকে দূরে ছিলেন পেরেল্লি। এই অলিম্পিক সামনে রেখে প্রস্তুতি নেওয়ার সময় তাঁর ওপর নাকি প্রত্যাশার কোনো বোঝা ছিল না, জানান পেরেল্লি, ‘কোনো চাপ কিংবা প্রত্যাশা ছিল না কারও। গোটা দেশের সমর্থন পেয়েছি। আমার ফেডারেশন এবং অলিম্পিক কমিটি সমর্থন দিয়েছে।’

পেরেল্লি শুধু নিজের কাজটা ঠিকমতো করায় তাঁর দেশ এখন অলিম্পিক ইতিহাসে।