‘সবজি খেতে পারিনি বলে হেরে গেছি’

এক ফ্রেমে আজহারুল ইসলাম ও মামুন শিকদার (বাঁয়ে)।
ছবি: প্রথম আলো

খেলা শেষে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের অ্যাথলেটিকস ট্র্যাকের ওপর তোয়ালে বিছিয়ে উপুড় হয়ে শুয়ে রইলেন আজহারুল ইসলাম। চোখেমুখে রাজ্যের হতাশা। একটু আগেই ডিসকাস থ্রোয়ে ব্রোঞ্জ জিতেছেন। ২৬ বছর ধরে এই ইভেন্টকে নিজের ব্যক্তিগত সম্পত্তিই বানিয়ে ফেলেছেন আজহারুল। ডিসকাস থ্রো মানেই যেন আজহারুলের সোনা। ক্যারিয়ারে এ পর্যন্ত সামার ও জাতীয় মিট মিলে ৩৩টি সোনার পদক জিতেছেন। অথচ সেই আজহারই কিনা আজ সোনা জিততে পারলেন না!

সোনা দূরে থাক, রুপাও জেতা হয়নি নৌবাহিনীতে চুক্তিভিত্তিক খেলা অ্যাথলেট আজহারুলের। বয়স ছুঁয়েছে ৫০। এই বয়সে এসে নিজের সেরাটা নিংড়ে দিয়েও সোনা জিততে পারলেন না। বিজয় মঞ্চে উঠে চেয়ে চেয়ে দেখলেন একসময়ের শিষ্য সেনাবাহিনীর মামুন শিকদার গলায় তুলছেন সোনার পদক। এই ইভেন্টে মামুন ৪৪.২৫ মিটার দূরত্বে ডিসকাস নিক্ষেপ করে সোনা জেতেন। রুপা জেতা নৌবাহিনীর ফারুক আহমেদ ৪২.২২ মিটার দূরত্বে ডিসকাস ছুড়েছেন। আর ৪১.৮১ মিটার দূরত্ব ছুড়তেই ঘাম ঝরেছে আজহারুলের।    

১৯৯৫ সালে সেনাবাহিনীর হয়ে খেলা শুরু আজহারুলের। সেনাবাহিনী থেকে অবসরে যাওয়ার পর বিজেএমসিতে খেলেছেন। এরপর নৌবাহিনীর হয়ে চুক্তি ভিত্তিতে খেলছেন। ক্যারিয়ারে সব মিলিয়ে তিনবার জাতীয় প্রতিযোগিতায় সোনার পদক জিততে পারেননি আজহারুল। ২০১২ সালের পর সোনা হাতছাড়া হয় ২০১৬ সালে। আজ আবারও সোনা জেতা হয়নি আজহারের।

কেন এবার সোনার পদক হাতছাড়া হলো? আজহারের উত্তর, ‘আসলে এবার আমার খাবারদাবারে একটু সমস্যা হয়েছে। অতিচর্বিযুক্ত খাবার খাচ্ছি। কিন্তু সবজি হলে আমার জন্য ভালো হতো। সবজি খেতে পারিনি বলেই হারলাম। তা ছাড়া এবার আবহাওয়ার কারণেও স্বাচ্ছন্দ্যে খেলতে পারিনি।’

তাহলে কি এবার শেষের শুরু দেখে ফেলেছেন আজহার? যদিও ক্যারিয়ারে এখানেই ইতি টানতে রাজি নন আজহারুল, ‘আজ খারাপ করেছি বলে হাল ছেড়ে দিইনি। সামনেই বাংলাদেশ গেমস (আগামী ১-১০ এপ্রিল)। সেখানে নিজের হারানো পদকটা উদ্ধার করতে চাই।’

আজহারুল ইসলাম।
ছবি: প্রথম আলো।

গত বছর চট্টগ্রামে আজহারুল সোনা জেতেন মামুনকে হারিয়ে। এবার শিষ্যকে হারাতে পারলেন না। সোনা জেতার পর উচ্ছ্বসিত মামুন বলছিলেন, ‘গতবার ভাইয়ের কাছে হেরেছিলাম। তিনি আমার গুরু। ভাইয়ের অনুপ্রেরণাতেই এখানে আসতে পেরেছি। যখন সেনাবাহিনীতে ছিলেন আজহার ভাই, আমি তাঁর কাছে খেলা শিখতাম। এবার তাঁকে হারাতে পেরে ভালো লাগছে।’

আগামী এপ্রিলের বাংলাদেশ গেমসে অবশ্য খেলার সম্ভাবনা কম মামুনের, ‘আমি আগামী মাসেই জাতিসংঘের মিশনে দক্ষিণ সুদান যাব। তাই বাংলাদেশ গেমসে খেলতে পারব না।’