সাঁতারের নতুন নিয়মে খুশি কিম কারদেশিয়ানের ট্রান্সজেন্ডার সৎবাবা

কেইটলিন জেনার সাঁতারের নতুন নিয়মে খুশিছবি: ইনস্টাগ্রাম

শুধু সাঁতার নয়, অ্যাথলেটিকসের প্রতিটি ইভেন্টেই এ নিয়ে আলোচনা চলছে। মেয়েদের ইভেন্টে ট্রান্সজেন্ডার অ্যাথলেটরা অংশ নেন। নারী অ্যাথলেটদের সঙ্গে তাঁদের অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত কতটা ন্যায্য, এটা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বরাবর। গতকাল আন্তর্জাতিক সাঁতার ফেডারেশন (ফিনা) নিজেদের অবস্থান জানিয়ে দিয়েছে। সে নিয়ম অনুযায়ী অধিকাংশ ট্রান্সজেন্ডার অ্যাথলেটই আর নারীদের সাঁতারের ইভেন্টে অংশ নিতে পারবেন না।

ট্রান্সজেন্ডার অ্যাথলেটদের প্রসঙ্গে সবচেয়ে বিখ্যাত অ্যাথলেট কেইটলিন জেনার। কিছুদিন আগেও ব্রুস জেনার ও কিম কারদেশিয়ানের সৎবাবা হিসেবেই পরিচিত কেইটলিন ২০১৫ সালে নিজেকে ট্রান্সজেন্ডার নারী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন। ট্রান্সজেন্ডার নারী অ্যাথলেটদের নারীদের ইভেন্টে অংশ নেওয়ার পথে অনেক বড় বাধা সৃষ্টি করা হলেও এতে সায় দিয়েছেন জেনার।

কেইটলিন জেনার অলিম্পিকে সোনা জিতেছেন ছেলেদের ইভেন্টে
ছবি: ইনস্টাগ্রাম

গত রোববার সাঁতারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা নতুন ‘লিঙ্গ অন্তর্ভুক্তি’ নিয়ম প্রকাশ করেছে। জানিয়েছে ফিনার সদস্য ফেডারেশনের ৭১ দশমিক ৫ শতাংশই এ সিদ্ধান্তের পক্ষে ছিলেন। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, পুরুষ থেকে নারীতে রূপান্তরিত ট্রান্সজেন্ডার অ্যাথলেটরা এখন সাঁতারে মেয়েদের ইভেন্টে অংশ নিতে পারবেন। কিন্তু সে ক্ষেত্রে ১২ বছর বা বয়ঃসন্ধির দ্বিতীয় পর্যায়ে পুরুষদের বয়ঃসন্ধির প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার আগেই রূপান্তরিত হয়েছেন, এমন অ্যাথলেটরাই শুধু অংশ নিতে পারবেন। ২০ জুন ২০২২ থেকে এ নিয়ম কার্যকর হয়েছে।

২০২২ সালে ট্রান্সজেন্ডার লিয়া থমাস যুক্তরাষ্ট্রে আন্তকলেজ চ্যাম্পিয়নশিপে ৫০০ গজ ফ্রি স্টাইলের সোনা জেতেন। ২০২০ সাল পর্যন্ত ছেলেদের দলে খেলা এই সাঁতারুর অংশগ্রহণ নিয়ে বড় বিতর্ক ওঠে। লিঙ্গ অন্তর্ভুক্তি নিয়ম নিয়ে আলোচনা নতুন করে শুরু হয়। নতুন পাস হওয়া আইনে থমাস আর মেয়েদের ইভেন্টে অংশ নিতে পারবেন না।

লিয়া থমাসের (বাঁয়ে) আবির্ভাব নতুন নিয়মকে দ্রুত বাস্তবায়ন করেছে
ছবি: টুইটার

বহু আগে থেকেই এ নিয়মের পক্ষে কথা বলছিলেন কেইটলিন জেনার। ১৯৭৬ অলিম্পিকে ডেকাথলনে সোনা জিতেছিলেন জেনার। পুরুষদের ইভেন্টেই অংশ নিয়ে সোনা জেতা এই অ্যাথলেট টুইটে নিজের আনন্দের কথা প্রকাশ করেছেন, ‘এটা কাজ করেছে! আমাকে অনেক সমালোচনা শুনতে হয়েছে, কিন্তু যা ন্যায্য, তা ন্যায্যই! আপনি যদি ছেলেদের বয়ঃসন্ধির মধ্য দিয়ে যান, তাহলে আপনার মেয়েদের কাছ থেকে মেডেল কেড়ে নেওয়া উচিত নয়। এটাই শেষ কথা।’

ফিনার সভাপতি হুসেন আল-মুসাল্লাম এ ব্যাপারে বলেছে, ‘অ্যাথলেটদের অংশগ্রহণের অধিকার রক্ষা করতে হবে, কিন্তু এটাও তো ঠিক, প্রতিদ্বন্দ্বিতার ভারসাম্যও রক্ষা করতে হবে। বিশেষ করে ফিনার মেয়েদের প্রতিযোগিতায়।’

বয়ঃসন্ধির সময়টায় ছেলে ও মেয়েদের মধ্যে পারফরম্যান্সের যে ব্যবধান সৃষ্টি হয়, সেটি মাথায় রেখেই ফিনা এ নিয়ম করেছে বলে জানিয়েছে। জেনারেরও ধারণা, বয়ঃসন্ধির পর রূপান্তরিত ট্রান্সজেন্ডাররা মেয়েদের চেয়ে বাড়তি সুবিধা পান শারীরিক দিক থেকে। আর এ কারণেই অন্য ট্রান্সজেন্ডারদের সমালোচনার মুখেও নিজের অবস্থানে পিছপা হননি, ‘মেয়েদের খেলা রক্ষা করতেই হবে। বামপন্থী উগ্রবাদী চিন্তা ও “পরিচিতি রাজনীতি”র চাপে মাথা নত করতে পারি না আমরা। এটা ন্যায্য নয়, আমাদের স্কুলগুলোয় মেয়েদের খেলা রক্ষা করতে হবে।’

নিজের অবস্থান যে সমকামীবিরুদ্ধ নয় বা ট্রান্সজেন্ডার–বিরুদ্ধ নয়, সেটা আরেক টুইটে জানিয়েছেন জেনার, ‘পরিষ্কার বোঝা যায়, এমন (সমকামীবিদ্বেষী নয়, এটা কমন সেন্স) একটা বিষয়ে যখন কথা বলছিলাম, তখন যাঁরা পাশে ছিলেন, তাঁদের সবাইকে ধন্যবাদ। আমি খুশি যে আন্তর্জাতিক অ্যাথলেটিকসের লোকজন এ নিয়ে মুখ খুলতে শুরু করেছে। আমি ক্রীড়াঙ্গনে মেয়েদের অধিকার নিয়ে কথা বলে যাব, কাজ করে যাব।’