হকি লিগ মাঠে ফেরাতে প্রধানমন্ত্রীর কোটি টাকা

অবশেষে মাঠে ফেরার আশা করছে হকি।ফাইল ছবি: প্রথম আলো

ঢাকা প্রিমিয়ার হকি লিগ সর্বশেষ হয়েছিল ২০১৮ সালে। কিন্তু সে বছর ৭ জুন মোহামেডান-মেরিনার্স ম্যাচে গোলমালের সূত্র ধরে লিগটা আর শেষই হয়নি। প্রায় ৫ মাস পর ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর মোহামেডানকে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করে হকি ফেডারেশন।

২০১৯ সালে লিগ হয়নি। গত বছর করোনায় লিগ হওয়ার প্রশ্নই আসে না। স্বাভাবিক সময়েই হকি লিগ হয় না, করোনায় হবে সেটা দুরাশা। তাই করোনার মধ্যে অন্য সব খেলা মাঠে ফিরলেও ঘরোয়া হকি রয়েছে বাক্সবন্দীই।

তবে ফেডারেশন কিছু আর্থিক অনুদান দিলে লিগ খেলার আগ্রহ প্রকাশ করে কয়েকটি ক্লাব। ক্লাবগুলোকে আর্থিক অনুদান দিতে ফেডারেশন সভাপতি বিমানবাহিনী প্রধান চিফ মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত সহায়তা চান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। প্রধানমন্ত্রী নিরাশ করেননি হকিকে। লিগ আয়োজনে ফেডারেশনকে এক কোটি টাকা দেওয়ার আশ্বাস দেন প্রধানমন্ত্রী। সেই কোটি টাকা ঈদ ছুটি শুরুর ঠিক আগে পেয়েছে হকি ফেডারেশন।

হকিতে বহুদিন লিগ হচ্ছে না।
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইউসুফ আজ প্রথম আলোকে দিলেন সেই খবর, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া কোটি টাকার চেক আমরা পেয়েছি। এই টাকা হকির পথচলায় অনেক বড় অবদান রাখবে। আমরা খুব খুশি। ক্লাবগুলোকে কিছু অনুদান দিয়ে হলেও যদি লিগটা শুরু করা যায়, সেই চেষ্টাই করছি। আমরা চাইছি ক্লাবগুলো মাঠে আসুক। আশা করছি, শিগগিরই প্রিমিয়ার লিগটা মাঠে নামাতে পারব।’

তবে পুরো এক কোটি টাকাই ক্লাবগুলোকে দেওয়া হবে নাকি একটা বড় অংশ দেওয়া হবে, তা ঠিক হয়নি। কথা ছিল ঈদের পরপরই ১২টি প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন ফেডারেশন সভাপতি। কিন্তু ফেডারেশন সভাপতি বর্তমানে ওয়াশিংটনে আছেন। ২৯ মে তাঁর ঢাকায় ফেরার কথা। সভাপতি ফিরলে ক্লাবগুলোর সঙ্গে আলোচনা হবে বলে জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক।

এমনিতেই নানা অজুহাতে ক্লাবগুলো লিগ খেলতে চায় না। আর্থিক সংকেট কথা বলে তারা পিছিয়ে যায়। ফেডারেশনও নিতে পারে না কঠিন কোনো অবস্থান। ক্লাব খেলতে চাইলে তবেই খেলা মাঠে গড়ায়। এটাই ঘরোয়া হকির নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। উপরন্তু হকি ফেডারেশনের ভেতরে একটা পক্ষ লিগ আয়োজনে তেমন আগ্রহী নয় বলে জানা গেছে। ফলে ঘরোয়া হকি যে তিমিরে ছিল সেখানেই রয়ে গেছে।

হকি খেলোয়াড়েরা তাকিয়ে আছেন লিগের দিকে।
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

ক্যাসিনো–কাণ্ডের পর থেকে আত্মগোপনে আছেন বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক মমিনুল হক ওরফে সাঈদ। অনেক দিন অনুপস্থিতির কারণে গত বছর আগস্টে তাঁকে সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে অব্যাহতি দেয় হকি ফেডারেশন। কিন্তু সেই অব্যাহতির বিরুদ্ধে মমিনুল হক আদালতে গিয়েছেন। তাঁর সমর্থকেরা লিগ মাঠে নামানোর ব্যাপারে তেমন আগ্রহী নয় বলে ফেডারেশন সূত্রের খবর।

ঘরোয়া হকি বাক্সবন্দী হলেও ফেডারেশন চোখ রাখছিল ঢাকায় অনুষ্ঠেয় দুটি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের দিকে। একটি অনূর্ধ্ব-২১ জুনিয়র এশিয়া কাপ, অন্যটি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি। দুটি টুর্নামেন্টই গত বছর হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনায় দুটি টুর্নামেন্ট বারবার পেছাচ্ছে।

জুনিয়র এশিয়া কাপ সর্বশেষ ১ থেকে ১০ জুলাই হওয়ার কথা থাকলেও করোনা পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সরকারের অনুমতি না মেলায় অনির্দিষ্টকাল পিছিয়ে গেছে। এশিয়ার শীর্ষ ৬ দেশের (বাংলাদেশ শীর্ষ ৬ দলে নেই। স্বাগতিক হিসেবে সুযোগ পেয়েছে এই টুর্নামেন্টে)। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির নতুন তারিখ ১ থেকে ৯ অক্টোবর। হকি ফেডারেশন আশাবাদী দুটি টুর্নামেন্টই এ বছর ঢাকায় হবে। দুটি টুর্নামেন্টেরই স্বত্ব কেনা রয়েছে বাংলাদেশের।

তবে আপাতত আন্তর্জাতিক আয়োজন একপাশে রেখে হকি খেলোয়াড়েরা তাকিয়ে আছেন লিগের দিকে। জাতীয় দলের খেলোয়াড় পুস্কর খীসার দাবি, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী হকিকে এক কোটি টাকা দিয়েছেন, এটা হকির জন্য অনেক বড় সুখবর। এখন ফেডারেশন ও ক্লাব দুই পক্ষেরই এগিয়ে আসা উচিত। ৩ বছর ধরে লিগ নেই। ফলে বিভিন্ন বাহিনীর খেলোয়াড়ের বাইরে থাকা বিপুলসংখ্যক খেলোয়াড় চরম আর্থিক সংকটে আছে। তাই যত দ্রুত সম্ভব লিগ শুরু করা হোক।’