মোহাম্মদ নাওয়াজের বলটা মিড উইকেটের ওপর দিয়ে বাউন্ডারির বাইরে পাঠাতেই হ্যারি ব্রুকের মুষ্টিবদ্ধ উদ্যাপন। মাত্র তৃতীয় টেস্ট খেলতে নেমে দ্বিতীয় সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন ইংলিশ মিডল অর্ডারের নতুন আস্থার প্রতীক হয়ে ওঠা ব্রুক।
অধিনায়ক বেন স্টোকসও কম যাননি। আবরার আহমেদের করা পরের ওভারের দ্বিতীয় বলে বিশাল ছক্কা মেরে ছুঁয়ে ফেলেছেন কোচ ব্রেন্ডন ম্যাককালামকে। কীসে ছুঁয়েছেন? ছক্কা মারাতেই।
টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে ছক্কা মারায় এত দিন সবার ওপরে ছিলেন ইংল্যান্ডের সাদা পোশাকের প্রধান কোচ ম্যাককালাম। মুলতানে আজ ওই ছক্কা মেরে তাঁকে ছুঁয়েছেন স্টোকস। দুজনেরই ছক্কাসংখ্যা এখন সমান ১০৭টি। নিজের বিশ্ব রেকর্ডে ভাগ বসাতেই ড্রেসিং রুমে বসে শিষ্যকে করতালিতে অভিনন্দন জানিয়েছেন গুরু ম্যাককালাম।
টেস্ট ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি ছক্কা
ব্যাটসম্যান দল ছক্কা
বেন স্টোকস ইংল্যান্ড ১০৭*
ব্রেন্ডন ম্যাককালাম নিউজিল্যান্ড ১০৭
অ্যাডাম গিলক্রিস্ট অস্ট্রেলিয়া ১০০
ক্রিস গেইল ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৯৮
জ্যাক ক্যালিস দক্ষিণ আফ্রিকা ৯৭
ওই ওভারের পঞ্চম বলে ৩ রান নেওয়ার পর ব্রুক-স্টোকসের জুটিটাও তিন অঙ্ক ছুঁয়েছে। দুজনের ‘ফিস্ট বাম্প’ বা মুখে চওড়া হাসি দেখে মনে হচ্ছিল, পাকিস্তানের বিশাল লক্ষ্য দিতে চলেছে ইংল্যান্ড।
কিন্তু পরের গল্পটা লিখেছেন পাকিস্তানের তিন স্পিনার নাওয়াজ, আবরার আর জাহিদ মাহমুদ মিলে। দ্বিতীয় ইনিংসে ৫ উইকেটে ২৫৬ রান থেকে আর ১৯ রান যোগ করতেই দম ফুরিয়ে যায় ইংল্যান্ডের। বাবর আজমের দল পায় ৩৫৫ রানের লক্ষ্য।
রান তাড়ায় ৪ উইকেটে ১৯৮ রান তুলে তৃতীয় দিন শেষ করেছে পাকিস্তান। সিরিজে সমতা আনতে স্বাগতিকদের দরকার আরও ১৫৭ রান। এক ম্যাচ বাকি থাকতে সিরিজ মুঠোয় পুরতে ইংলিশদের চাই ৬ উইকেট। রাওয়ালপিন্ডিতে প্রথম টেস্ট জিতে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে সফরকারীরা।
সফরকারীদের ইনিংসে মড়ক লাগে স্টোকসকে দিয়েই। তাঁকে আউট করে পাকিস্তানকে ম্যাচে ফেরানোর শুরুটা করেন নওয়াজ, শেষটা রাঙান জাহিদ। মাঝে আবরাব বোল্ড করেছেন ওলি রবিনসনকে। দুই ইনিংস মিলিয়ে ১১ উইকেট নিয়ে পাকিস্তানিদের মধ্যে অভিষেক টেস্টে সবচেয়ে বেশি উইকেট নেওয়ায় মোহাম্মদ জাহিদের পাশে বসেছেন আবরার।
বড় লক্ষ্য ছুঁতে নেমে পাকিস্তানকে দারুণ শুরু এনে দেন আবদুল্লাহ শফিক ও মোহাম্মদ রিজওয়ান। উদ্বোধনী জুটি যখন ইংলিশদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলছিল, তখন বুড়ো হাড়ের ভেলকি দেখান জিমি অ্যান্ডারসন। বলকে একটু সামনে ফেলে রিজওয়ানকে যেভাবে লাইন মিস করিয়েছেন, সেটাকে এই সিরিজের সেরা ডেলিভারি বলছেন অনেকে। ৪০ বছর বয়সী অ্যান্ডারসনের বলে এভাবে পরাস্ত হওয়ার পর অবিশ্বাসের ঘোরে কিছুক্ষণ ক্রিজে ঠাঁই দাঁড়িয়ে ছিলেন রিজওয়ান।
পাকিস্তান বড় ধাক্কাটা খায় এরপরই। রবিনসনের প্রায় ‘অ্যান্ডারসন টাইপ’ বল ছেড়ে দিয়ে বাবর দেখেন, তাঁর অফ স্টাম্প নেই! শফিকও বেশি দূর এগোতে পারেননি। আরেক পেসার মার্ক উডের বলে বোল্ড হন তিনি।
পাকিস্তানের ঘুরে দাঁড়ানোর শুরু এখান থেকেই। নিয়মিত ওপেনার ইমাম-উল-হক পাঁচে নেমে সৌদ শাকিলের সঙ্গে দারুণ জুটি গড়েন। তাঁদের ১০৮ রানের জুটিতেই জয়ের সুবাস পেতে শুরু করেছে স্বাগতিকরা।
পড়ন্ত বিকেলে ইমাম আউট হলেও ফাহিম আশরাফের সঙ্গে ‘আশার বাতিঘর’ হয়ে আছেন শাকিল।