ফেবারিট তকমা বাংলাদেশের পছন্দ নয়

গ্রুপে দ্বিতীয় হওয়ায় সুপার টুয়েলভে প্রত্যাশিত গ্রুপ ২-এ যেতে পারেনি বাংলাদেশ দলছবি: আইসিসি টুইটার
আল আমেরাত ক্রিকেট স্টেডিয়ামের প্রেসবক্সের ঠিক ওপরেই ধারাভাষ্যকক্ষ। সেখান থেকেই ম্যাচ চলাকালে সাবেক নিউজিল্যান্ড পেসার ও ধারাভাষ্যকার ড্যানি মরিসনের উঁচু গলার ধারাভাষ্য শোনা যায়। কাল স্কটল্যান্ড-ওমানের ম্যাচ দিয়ে বিশ্বকাপের ওমান পর্ব শেষ হওয়ার পর মরিসন বলছিলেন ওমান ক্রিকেটের নতুন অভিজ্ঞতার গল্প। প্রথম আলোর সঙ্গে কথোপকথনে উঠে এসেছে বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রসঙ্গও।

প্রশ্ন :

নিশ্চয় এবারই প্রথম ওমানে এলেন। এখানকার ক্রিকেটকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

এবারই প্রথম এসেছি। এখানকার সুযোগ-সুবিধা দেখে খুবই অবাক হয়েছি। একবার চিন্তা করুন, পাঁচ-ছয় বছর আগে এখানে কোনো ঘাসই ছিল না। এখন যেভাবে গড়ে উঠেছে, সেটা দেখে খুব অবাক হচ্ছি। অবিশ্বাস্য এককথায়। যেসব অবকাঠামো আল আমেরাতে গড়ে উঠেছে, ওমান চাইলে এখানে আফগানিস্তানের মতো দেশের খেলাগুলো আয়োজন করতে পারে। এবারের বিশ্বকাপের শুরু তো এখানেই হলো। এর পরের ধাপ হয়তো এটিই।

প্রশ্ন :

বেশ কয়েকটি সহযোগী সদস্যদেশের ম্যাচেও আপনি ধারাভাষ্য দিয়েছেন। দেখে কি মনে হয়, টেস্ট দল ও সহযোগী সদস্যদেশগুলোর মধ্যে পার্থক্য কমে আসছে?

তা তো অবশ্যই। সময়ের সঙ্গে এটা হওয়ারই কথা। ক্রিকেট ছড়িয়ে যাচ্ছে অনেক দেশে। আর যে দলগুলো অবকাঠামো গড়তে পারছে, তারা টেস্ট দল থেকে খুব বেশি পিছিয়ে থাকবে না। কারণ, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রতিভা দরকার, কিন্তু তার চেয়ে বেশি দরকার পেশাদারত্ব। সেটি সহযোগী সদস্যদেশে এসে গেলেই দেখবেন ওপরের সারির দলগুলোর সঙ্গে পার্থক্য কমে আসবে। মাঠেও সেটি দেখা যাচ্ছে।

প্রশ্ন :

বিশ্বকাপের প্রথম পর্ব দেখে মনে হয়েছে, সহযোগী সদস্যদেশগুলো বেশি ম্যাচ খেলতে পারলে দ্রুত উন্নতি করতে পারত…

হ্যাঁ, উন্নতিটা আরও দ্রুত হতে পারত, যদি ওরা নিয়মিত বড় দলের বিপক্ষে খেলার সুযোগ পেত। ওরা যে পরিমাণ ক্রিকেট খেলে, সেটার পর ওদের দ্রুত উন্নতি করা কঠিন। ক্রিকেটের বড় দলগুলো সব সময় নিজেরা নিজেরা খেলে। সহযোগী সদস্যদেশগুলোর সঙ্গে খেলার জন্য ওদের সময় কই। এ কারণে উন্নতিটা দ্রুত হয় না।

প্রশ্ন :

প্রথম পর্বে স্কটল্যান্ডকে কেমন দেখলেন?

ওদের জন্য আমার একটাই শব্দ—দুর্দান্ত। তিন ম্যাচ খেলে তিনটিই জেতা সহজ কথা নয়। বিশেষ করে সহযোগী সদস্যদেশগুলোর ধারাবাহিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয় সব সময়। এবার স্কটল্যান্ড সে সুযোগ দেয়নি। অনেক বক্সেই ওরা টিক চিহ্ন পাবে। দলটায় অনেক অভিজ্ঞতাও আছে। এটা কিন্তু পেশাদার ক্রিকেট কাঠামোর আভাস। দলটা তাদের প্রতিভাদের ধরে রাখছে। দেখে ভালো লাগছে।

প্রশ্ন :

বাংলাদেশ দলের কাছে যেমন পারফরম্যান্স প্রত্যাশা করেছেন, সেটা কি দেখতে পেয়েছেন?

প্রথম ম্যাচটা হারলেও পরের দুটি জিতে মূল পর্বে গিয়েছে। কিন্তু এখনো কেমন জানি নড়বড়ে, তাই না? শতভাগ কি তারা দিতে পেরেছে গত তিন ম্যাচে? আমার মনে হয় না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ওরা যে ভুল করছে, তা একেবারেই অপ্রত্যাশিত। এখানে বাকিগুলোর তুলনায় বাংলাদেশ কিন্তু অনেক অনেক শক্তিশালী। কিন্তু আমার মনে হয়, ওরা এই ফেবারিট তকমাটা পছন্দ করে না। ওদের আন্ডারডগ তকমাটাই বেশি মানায়। তখন চাপ কম থাকে, হয়তো সেটি তাদের ভালো পারফর্ম করতে সাহায্য করে।

টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভে উঠেছে বাংলাদেশ
ছবি: এএফপি

প্রশ্ন :

সুপার টুয়েলভে কত দূর যেতে পারে বাংলাদেশ?

বলা কঠিন। ওরা যে কাউকেই হারিয়ে দিতে পারে। কিন্তু ওদের নিজেদের সেরা খেলাটা বের করে আনতে হবে। বিশেষ করে সাকিব, মাহমুদউল্লাহ, মুশফিক ও মোস্তাফিজকে আরও ধারালো পারফরম্যান্স দিতে হবে। এখানে যে তিন ম্যাচ দেখলাম, সেখানে তাদের প্রত্যেকেই কিছু না কিছু করেছে। কিন্তু তাদের সেরা পারফরম্যান্সটা আমরা এখনো দেখিনি। এটা বাংলাদেশের জন্য ভালো খবরও হতে পারে। হয়তো বাংলাদেশ দলের তারকাদের সেরা পারফরম্যান্সটা সুপার টুয়েলভের জন্যই জমা রাখা আছে। আমি ওদের বিশ্বকাপ সফরে আলাদা চোখ রাখব। দেখি ওরা কেমন করে।