আমার বেলায় হয়তো এটিই হওয়ার কথা ছিল

আশরাফুল হয়ে উঠেছিলেন দেশের ক্রিকেটের প্রতীকফাইল ছবি, প্রথম আলো
অভিষেকেই গড়লেন ইতিহাস! কলম্বোর সিনহলিজ স্পোর্টস ক্লাব মাঠে ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট খেলতে নেমেই তৃতীয় দিনে পেয়ে যান সেঞ্চুরির দেখা। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মাত্র ১৬ বছর বয়সে সেঞ্চুরি মোহাম্মদ আশরাফুলকে এনে দেয় টেস্ট ক্রিকেটে সর্বকনিষ্ঠ সেঞ্চুরিয়ানের গৌরব। আর সেই গৌরব মাল্যটা তিনি পরেছিলেন টেস্টের তৃতীয় দিনে, আজ যার ২০ বছর হয়ে গেল। অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরির দুই দশক পূর্তিতে প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক ফিরে তাকিয়েছেন তাঁর উত্থান–পতনের মধ্য দিয়ে যাওয়া অতীতের দিকে, বলেছেন ভবিষ্যৎ স্বপ্নের কথা—

প্রশ্ন :

মাত্র ১৬ বছর বয়সে বিশ্বরেকর্ড গড়ে টেস্টে সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে সেঞ্চুরি করেছিলেন। আজ তার ২০ বছর হয়ে গেল। পেছনে ফিরে তাকালে কেমন লাগে?

মোহাম্মদ আশরাফুল: ওই সময়ের শ্রীলঙ্কা দুর্দান্ত দল ছিল। আমরা ওই টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৯০ রানে অলআউট হয়ে গিয়েছিলাম। সে ইনিংসেও আমি দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ২৬ রান করেছিলাম। শ্রীলঙ্কা সম্ভবত দ্বিতীয় দিনের মধ্যেই ৫৫৫ রান করে ইনিংস ঘোষণা করেছিল। আমরা দ্বিতীয় দিনের শেষের দিকে আবার ব্যাটিংয়ে নামি। দ্রুত ৪ উইকেট পড়ে গিয়েছিল তখনও। আমি আর বুলবুল ভাই (আমিনুল ইসলাম) দিন শেষে অপরাজিত ছিলাম। মনে আছে ৪ রানে আপরাজিত থাকার সেই রাতটা আমি ঠিকমতো ঘুমাতে পারিনি। অল্প কিছুক্ষণের জন্য ঘুম এসেছিল, একটা স্বপ্নও দেখেছিলাম যে আমি ভালো করেছি। সেদিন সকালে মাঠের উদ্দেশে যাওয়ার সময় বাসে অধিনায়ক দুর্জয় (নাঈমুর রহমান) ভাইয়ের পাশে বসেছিলাম। দুর্জয় ভাইকে বলি স্বপ্নটার কথা। তিনি বলেছিলেন, ‘তুই তো ব্যাটসম্যান, তুই বড় একটা ইনিংস খেলতেই পারিস। চেষ্টা করলেই পারিস।’ বুলবুল ভাইও আমাকে উৎসাহ দিয়েছিলেন।

আমি একটা ভুল করে ফেলেছিলাম। সে ভুলের মাশুল আমি দিয়েছি। ভুলের জন্য জাতির কাছে ক্ষমাও চেয়েছি। আমি মনে করি, এ দেশের মানুষ আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছে।
মোহাম্মদ আশরাফুল

প্রশ্ন :

ভালো করার স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু সেঞ্চুরিই যে করে ফেলবেন, সেটি নিশ্চয়ই ভাবেননি....

আশরাফুল: ভেবেছিলাম, ‘ভালো কিছু’ বলতে আমি আসলে সেঞ্চুরিই করতে চেয়েছিলাম। ২০০১ সালে কলম্বোর সেই ইনিংসটির আগেও কয়েকটি সেঞ্চুরি করেছিলাম আমি। অস্ট্রেলিয়া একাডেমি দল বাংলাদেশ সফরে এসেছিল, তাদের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিলাম, যদিও সেটি ছিল ৫০ ওভারের ম্যাচ। অনূর্ধ্ব–১৭ এশিয়া কাপে সেঞ্চুরি পেয়েছি। দুটি প্রথম শ্রেণির ম্যাচেও সেঞ্চুরি করেছিলাম। সেঞ্চুরির অভ্যাসটা ছিলই। আমি তাই মোটামুটি আত্মিবশ্বাসী ছিলাম।

সেই ক্ষণ! আজ থেকে ২০ বছর আগে, ২০০১ সালের ৮ সেপ্টেম্বর, কলম্বো। সর্বকনিষ্ঠ ক্রিকেটার হিসেবে আশরাফুল পেয়ে গেলেন টেস্ট সেঞ্চুরি
ফাইল ছবি, এএফপি

প্রশ্ন :

মুরালিধরন তখন ফর্মের তুঙ্গে। তাঁকে খুব ভালো খেলেছিলেন সেদিন...

আশরাফুল: শুনলে অবাক হবেন, মুরালিধরনকে আমার সেদিন খুব কঠিন কোনো বোলার মনে হয়নি। আমি যে একাডেমিতে বেড়ে উঠেছি, ক্রিকেট শিখেছি, সে একাডেমিতে একজন বোলার ছিল, আমাদের বয়সীই—ইব্রাহিম সাগর। সে ‘দুসরা’ বলটা খুব ভালো করতে পারত। আমি একাডেমির নেটে ওর বল প্রচুর খেলেছি। একটা অভ্যাস তো হয়ে গিয়েছিলই। তা ছাড়া, ওই সময়টায় আমি টেলিভিশনে প্রচুর খেলা দেখতাম। মুরালিকে খুব খেয়াল করতাম। ওর হাতের দিকে নজর রাখতাম। কীভাবে কীভাবে যেন আমি ধরে ফেলেছিলাম কৌশলটা। ম্যাচে খুব কাজে লেগেছিল এসব। ৯০ রানে অলআউট হয়ে যাওয়া ইনিংসেও আমি মুরালিকে খুব আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে খেলেছিলাম। সে কারণেই দ্বিতীয় ইনিংসে দুর্জয় ভাই (নাঈমুর) তাঁর আগে আমাকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়েছিলেন।

প্রশ্ন :

কখন জানলেন যে সর্বকনিষ্ঠ ক্রিকেটার হিসেবে সেঞ্চুরি করে ফেলেছেন, রেকর্ড বইয়ে নাম তুলে ফেলেছেন?

আশরাফুল: মাঠে কিছুই বুঝিনি। চা বিরতির সময় আমি সম্ভবত ৬৮ রানে অপরাজিত ছিলাম। আমি ড্রেসিংরুমে ফিরলাম। রোকন ভাই (আল শাহরিয়ার), অপি ভাই (মেহরাব হোসেন), বুলবুল ভাইরা (আমিনুল ইসলাম) খুব উৎসাহ দিচ্ছিলেন। বলছিলেন, ‘তুই এখন যে জায়গায়, সে জায়গায় থেকে সেঞ্চুরি করতেই হবে। তুই পারবি।’ সেঞ্চুরি করে ফেলার পর শ্রীলঙ্কান খেলোয়াড়েরা এসেও অভিনন্দন জানাল। মুরলি নিজে এসে হাত মেলালো, সাঙ্গাকারা, জয়াবর্ধনে, ভাস—সবাই। কিন্তু তখনও বুঝিনি টেস্টে সবচেয়ে অল্প বয়সে সেঞ্চুরি করে ফেলেছি, সেটা বুঝলাম ড্রেসিংরুমে ফিরে। মুশতাক মোহাম্মদের রেকর্ড ভেঙে ফেলেছি! অসাধারণ অনুভূতি।

অনেক সম্ভাবনা নিয়ে এসেছিলেন আশরাফুল
ফাইল ছবি, এএফপি

প্রশ্ন :

এত ছোট বয়সে অত ভালো একটা ইনিংস খেললেন। মাঠে কোনো ধরনের স্লেজিং শুনতে হয়েছে?

আশরাফুল: না, একেবারেই না। একটা কথাও আমাকে উদ্দেশ্য করে কাউকে বলতে শুনিনি। ওরা যে নিজেদের মধ্যে সিংহলি ভাষায় আমাকে নিয়ে আলাপ–আলোচনা করছিল, সেটা বুঝতে পারছিলাম। কিন্তু কোনো স্লেজিং তারা করেনি। একটা মুহূর্ত বিশেষভাবে মনে আছে। শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক ছিলেন সনৎ জয়াসুরিয়া। তিনি স্লিপে দাঁড়িয়ে মুরলিকে চিৎকার করে বললেন, বেশি করে দুসরা দিতে। যদিও সিংহলি ভাষায় বলেছিলেন, কিন্তু হাবভাব দেখেও তো অনেক কিছু বোঝা যায়। আমিও বুঝতে পেরেছিলাম। মুরলি ইংরেজিতেই বললেন, ‘ও তো দুসরাও খেলে দিচ্ছে!’ দিনের শেষে মুরলির সঙ্গে দেখা হতেই পিঠ চাপড়ে দিলেন তিনি। বলেছিলেন, ‘এভাবেই খেলে যাও।’

একটা সময় বিরক্ত লাগত। ক্লান্তি ভর করত। কোন একটা পত্রিকায় যেন লিখেছিল, ‘আশরাফুল যেন আলু, সব তরকারির সঙ্গে যায়!’
আশরাফুল, নিজের ক্যারিয়ারের শুরুর দিনগুলোর কথা মনে করে

প্রশ্ন :

মুরালিকে ভালো খেলার কৌশলটা কী ওই টিভি দেখে শেখা? নাকি বাড়তি কোনো অনুশীলন করেছিলেন?

আশরাফুল: কিছু কৌশল তো ছিলই। আমি আমার ওই ইনিংসটার জন্য জাভেদ মিয়াঁদাদকেও ধন্যবাদ দেব। পাকিস্তানের সাবেক গ্রেট ২০০১ সালে এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ঠিক আগে বাংলাদেশে এসেছিলেন। জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের সঙ্গে সেশন করেছিলেন তিনি। তিনি খুব বুদ্ধিমান ক্রিকেটার ছিলেন তো, নিজে নিজেই অনেক কৌশল বের করে ফেলতেন। মুরালিকে খেলার কৌশলও শিখিয়েছিলেন আমাদের। অন্য যে কেউ বলবে স্পিনারদের বিপক্ষে ভালো করতে হলে উইথ দ্য স্পিন খেলতে হবে। কিন্তু মিয়াঁদাদ বলেছিলেন, মুরালিকে স্পিনের বিপরীতে খেলতে। আমরা একটু অবাকই হয়েছিলাম। কিন্তু সেটা কাজে লাগিয়েই আমি ফল পেয়েছিলাম।

একটা সময় ক্লান্ত লাগত আশরাফুলের
ফাইল ছবি, এএফপি

প্রশ্ন :

এমন দুর্দান্ত শুরুর পর আপনি যেন দেশের ক্রিকেটেরই প্রতীক হয়ে উঠলেন। বাংলাদেশের ক্রিকেটের প্রত্যাশার ভার আপনার অল্পবয়সী কাঁধে উঠে গেল। কেমন লাগছিল তখন?

আশরাফুল: আমি সে সময় বাংলাদেশের প্রায় সব দলেই খেলেছি। অনূর্ধ্ব–১৭ দল বিদেশ যাবে, আশরাফুলকে পাঠাও, অনূর্ধ্ব–১৯ দলের হয়ে নিউজিল্যান্ডেও পাঠানো হলো। ‘এ’ দলেও বোধহয় খেলেছিলাম। একটা সময় বিরক্ত লাগত। ক্লান্তি ভর করত। কোন একটা পত্রিকায় যেন লিখেছিল, ‘আশরাফুল যেন আলু, সব তরকারির সঙ্গে যায়!’ অথচ, আমার বয়সটা দেখেন ওই সময়, কত কম! খেলাধুলায় বিশ্রামও অনেক সময় খুব কাজে লাগে। মুরালিকে কিন্তু আমি আমার অভিষেক টেস্টে প্রথমবারেই ভালো খেলেছিলাম। আগে কখনো তাঁর মুখোমুখি হইনি। টেলিভিশনে খেলা দেখে কৌশল রপ্ত করেছি। এখন খুব আক্ষেপ হয়। ২০ বছর আগে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের খেলোয়াড় ব্যবস্থাপনাও এখনকার মতো ছিল না। একটু সিনিয়র হয়ে আমি আমার সমস্যাটা অনুধাবন করতে পেরেছি। তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসানদেরও আমার মতো শুরু হয়েছিল। তামিমকে একবার আমি অনূর্ধ্ব–১৯ দলের হয়ে পাকিস্তান যেতে দিই নি। সুমন ভাইকে (হাবিবুল বাশার) বলে ওর যাওয়া ঠেকিয়েছিলাম। আসলে কেউ যখন সর্বোচ্চ পর্যায়ে খেলে ফেলে, তাঁকে সেখানেই রাখা উচিত। ওই খেলোয়াড়টির জন্য বিভিন্ন দলের হয়ে খেলাটা খুব বিরক্তিকর হয়। এতে পারফরম্যান্সেও প্রভাব পড়ে।

দেশের মানুষকে নানা সময়ই আনন্দে ভাসিয়েছে আশরাফুলের ব্যাট। ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এসেছিল এমনই এক ম্যাচজয়ী ইনিংস
ফাইল ছবি, এএফপি

প্রশ্ন :

এত প্রতিভা নিয়ে জন্মেছেন। এখনো তো আপনার বাংলাদেশ দলের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় থাকার কথা। ক্যারিয়ারটা অনাকাঙ্খিত কারণে ছোট হয়ে গেছে। আক্ষেপ হয় নিশ্চয়ই...

আশরাফুল: দেখুন, আমি একটা ভুল করে ফেলেছিলাম। সে ভুলের মাশুল আমি দিয়েছি। ভুলের জন্য জাতির কাছে ক্ষমাও চেয়েছি। আমি মনে করি, এ দেশের মানুষ আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছে। আক্ষেপ না হওয়ার কোনো কারণ নেই। খুবই হয়। আমার তো এখন জাতীয় দলেই খেলার কথা। অভিজ্ঞতা দিয়ে দেশের ক্রিকেটে কাজে আসার কথা। কিন্তু সেটা হয়নি। আক্ষেপের পাশাপাশি নিজের মনকে প্রবোধ দিই, হয়তো এটিই হওয়ার ছিল আমার বেলায়।

২০০৫ সালে কার্ডিফে সেই অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে দেওয়ার সেঞ্চুরি
ফাইল ছবি, এএফপি

প্রশ্ন :

আপনি বলছেন, ভুল করে ফেলেছিলেন। এমনকি মনে হয়, একটু ভালো দিক নির্দেশনা বা অভিভাবকত্ব পেলে ভুলটা করতেন না?

আশরাফুল: যেটা করে ফেলেছি, সেটা তো অতীত। তবে এটা ঠিক, আরও ভালো দিক নির্দেশনা পেলে হয়তো আমার জন্য ভালো হতো।

প্রশ্ন :

এখনো কী জাতীয় দলে ফেরার স্বপ্ন দেখেন?

আশরাফুল: অবশ্যই দেখি। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে হয়তো পারব না। কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটে দেশকে এখনো কিছু দেওয়ার বাকি আমার। আমি দলে সুযোগ পেলে (টেস্টে) কিছু ভালো ইনিংস খেলে নিজের অতীত ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করতে চাই। এখন চাই শুধু ভালো খেলে জাতীয় দলে আবারও সুযোগ করে নিতে। আমি একটা দিক দিয়ে ভাগ্যবান, যে আমি ৫ বছরের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়েও খেলায় ফিরতে পেরেছি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও ফেরার সুযোগ আছে। এখন সুযোগ পাচ্ছিনা, সেটি ভিন্ন প্রসঙ্গ।

২০০৪ সালে চট্টগ্রামে ভারতের বিপক্ষে সেই ১৫৮
ফাইল ছবি, এএফপি

প্রশ্ন :

অন্য প্রসঙ্গে যাই। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের কোন ইনিংসটাকে এগিয়ে রাখবেন?

আশরাফুল: (হেসে) প্রিয় তো সবগুলোই। কোনোটাকেই কোনোটার চেয়ে পিছিয়ে রাখতে পারব না। প্রতিটি ইনিংসই এসেছে ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতিতে, ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষাপটে। অভিষেক টেস্টের ইনিংসটা আমাকে পরিচিতি দিয়েছে, বাংলাদেশকে ক্রিকেট দুনিয়ায় আলোচনায় এনেছে। ২০০৪ সালে ভারতের বিপক্ষে টেস্টে ১৫৮ রানের ইনিংসটি খেলেছিলাম খুব দাপটের সঙ্গে। শ্রীলঙ্কার গলে ২০১৩ সালে দুর্ভাগ্যজনকভাবে ডাবল সেঞ্চুরি করতে পারিনি। ১৯০ রানের ওই ইনিংসটি আউট হওয়ার আগ পর্যন্ত নিখুঁতই ছিল। কার্ডিফে ২০০৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়ানডেতে জয়ের সেই ইনিংসটি বাংলাদেশকে নতুন আত্মবিশ্বাস এনে দিয়েছিল। আমরা জিতেছিলাম ম্যাচটা—সেটা তো অবশ্যই অন্যরকম এক অনুভূতি।

প্রশ্ন :

ভালো ইনিংসের প্রসঙ্গে প্রথম টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ইনিংসটাও নিশ্চয়ই আসবে। আপনার ওই ইনিংসই টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে প্রথম জয় এনে দিয়েছিল...

আশরাফুল: ওটা অবশ্যই স্মরণীয়। টি–টোয়েন্টি ক্রিকেটে ওই সময়টায় আমাদের ভালো করার একটা সম্ভাবনা ছিল। আমাদের দলে যারা ছিল, সবাই শট খেলতে পছন্দ করত। আফতাব ছিল দুর্দান্ত হিটার। আমার বিশ্বাস ছিল, আমরা ভালো করতে পারি। ওয়েস্ট ইন্ডিজ কিন্তু সে ম্যাচে আগে ব্যাটিং করে ১৬০ রানের বেশি করেছিল। আমরা সে রান তাড়া করে জিতি। ওদের রানটা এত বেশি হয়ে যাওয়ার পেছনে আমার দায় ছিল। একটা উইকেট পেয়ে খুব আত্মবিশ্বাসী হয়ে পড়েছিলাম। প্রথম দুই ওভারে যেখানে আমি বোলিং করে ১১ রান দিয়েছিলাম, সেখানে পরের দুই ওভারে ৩০ রানের বেশি দিয়ে ফেলি। ড্রেসিংরুমে ফিরে আমি সবাইকে বলি, যে রানটা আমি দিয়েছি, সেটা আমি ব্যাট দিয়ে পুষিয়ে দেব। আফতাবের সঙ্গে একটা জুটি গড়ে শেষ পর্যন্ত ম্যাচটা জিতিয়েছিলাম।

পেতে পারতেন টেস্ট ক্রিকেটে দেশের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরিটিও। কিন্তু ২০১৩ সালে গলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ফেরেন ১৯০ রান করে।
ফাইল ছবি, এএফপি

প্রশ্ন :

আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারটা শুরুর সম্ভাবনা অনুযায়ী এগুলো না। নিজেকে কী দুর্ভাগা মনে হয়?

আশরাফুল: আমি আসলে নিজেকে অনেক সৌভাগ্যবানই মনে করি। কত কম বয়সে কত কিছু পেয়েছি! দেশের হয়ে খেলেছি। নিজের দিনে পৃথিবীর কোনো বোলারকেই ভয়ংকর মনে হয়নি। সবই আল্লাহর ইচ্ছা। আমি দুর্ভাগ্য বলব না। সৌভাগ্য–দুর্ভাগ্য মিলিয়েই তো মানুষের জীবন। হ্যাঁ, অনেক ইনিংস আরও বড় হতে পারত। দেশের হয়ে টেস্টে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরিটা তো আমারই পাওয়ার কথা ছিল। আল্লাহ হয়তো অন্য কিছু ভেবে রেখেছিলেন আমার জন্য। সব মিলিয়ে আমার এ ব্যাপারে কোনো খেদ নেই।

প্রশ্ন :

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টি–টোয়েন্টি সিরিজ জিতল বাংলাদেশ দল। এখন চলছে নিউজিল্যান্ড সিরিজ। প্রথম দুটি ম্যাচ জিতে তৃতীয় ম্যাচে বাংলাদেশ বাজেভাবে হারল। কী মনে হয়, টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে এই সিরিজগুলো কাজে দেবে?

আশরাফুল: জয়ের অভ্যাস সব সময়ই ভালো। সেদিক দিয়ে ঠিক আছে। কিন্তু যে ধরনের উইকেটে খেলে জয়গুলো এল, আমার সন্দেহ আছে, আমিরাত আর ওমানে সেটি কাজে আসবে কিনা! সেখানে তো অনেক স্পোর্টিং উইকেটে খেলতে হবে। জয় যেমন অভ্যাস, ব্যাটসম্যানদের রান করাটাও কিন্তু অভ্যাসেরই ব্যাপার।

প্রশ্ন :

টি–টোয়েন্টি ক্রিকেটে ভালো দল হয়ে ওঠার সুযোগ ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু আপনার কী মনে হয় না, সে পথে একটা প্রক্রিয়ার মধ্যে না হেঁটে বাংলাদেশ অতিরিক্ত সাফল্য–নির্ভর হয়ে পড়ছে? যেনতেনভাবে জয়টাই যেন লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে...

আশরাফুল: প্রক্রিয়া ঠিক না হলে কিছুই হবে না। সেদিক থেকে বললে একটু অন্যপথেই বোধহয় হাঁটছে বাংলাদেশ। টি–টোয়েন্টিতে ভালো দল হয়ে উঠতে প্রয়োজন বেশি করে ঘরোয়া টুর্নামেন্ট খেলা। বিপিএলের বাইরেও আমাদের একটা টি–টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট দরকার। একইভাবে ওয়ানডে আর প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট নিয়েও কাজ করতে হবে। ঘরের মাঠে নিজেদের মতো করে উইকেট বানিয়ে আমরা হয়তো ম্যাচের পর ম্যাচ জিতব। কিন্তু বিদেশের মাটিতে? এ দিকটা অবশ্যই ভেবে দেখা উচিত।