সাক্ষাৎকারে শরীফুল ইসলাম

‘এসব দেখলে আমার সহ্য হয় না’

পঞ্চগড়ে ভালোই সময় কাটছিল শরীফুল ইসলামের। এলাকার বন্ধুদের সঙ্গে ফুটবল খেলে, আড্ডা দিয়ে ছুটির সময়টা পার করছিলেন জাতীয় দলের এই বাঁহাতি পেসার। লঙ্কা প্রিমিয়ার লিগের (এলপিএল) দল কলম্বো স্ট্রাইকার্সে খেলার প্রস্তাবটা আসে এর মধ্যেই। বিসিবির অনাপত্তিপত্রও পেয়ে গেছেন। তিন সংস্করণের ক্রিকেটে দারুণ ছন্দে থাকা শরীফুল এখন প্রথমবারের মতো ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলা নিয়ে রোমাঞ্চিত। এলপিএলে ডাক পাওয়া, নিজের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স নিয়ে কাল মুঠোফোনে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন শরীফুল।

প্রশ্ন:

প্রথমবারের মতো ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ খেলবেন। কেমন লাগছে?

শরীফুল ইসলাম: খুবই এক্সাইটেড। আগামীকাল দুপুরে (আজ) ফ্লাইট। বিসিবিকে ধন্যবাদ অনুমতি দেওয়ার জন্য। খেলতে যাচ্ছি শ্রীলঙ্কায়, কয়দিন পর এশিয়া কাপও হবে শ্রীলঙ্কায়। স্বাভাবিকভাবেই অভিজ্ঞতাটা কাজে লাগবে।

প্রশ্ন:

শুনেছি একটা পর্যায়ে এলপিএলের দুটি দল আপনাকে চাচ্ছিল?

শরীফুল: হ্যাঁ, তাসকিন ভাই ডাম্বুলা ওরার হয়ে খেলার কথা ছিল। পরে তাসকিন ভাই না করে দেওয়ায় ডাম্বুলাও আমাকে নিতে চাচ্ছিল। সেখানে বোলিং কোচ শন টেইট, তাঁর সঙ্গে আমি বিপিএলে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সে কাজ করেছি। তখনো কলম্বো থেকে আমি চিঠি পাইনি। তাই শন বলেছিলেন, কলম্বোতে না হলে তুমি ডাম্বুলায় চলে এসো। শেষ পর্যন্ত কলম্বোতেই হয়ে গেল।

মাঠের বাইরের সময়টাও ভালোই কাটছিল শরীফুলের
ছবি: ইনস্টাগ্রাম
প্রশ্ন:

গত কয়েক দিনের ছুটিটা কেমন উপভোগ করছিলেন, ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে দেখলাম, বন্ধুদের সঙ্গে ভালোই সময় কাটাচ্ছেন...

শরীফুল: ভালোই যাচ্ছিল। এমন ছুটি তো খুব বেশি পাওয়া যায় না। এর মধ্যেও কাজ করছি। কিছু ফিটনেসের কাজ করতে হতো, সেগুলো করছিলাম।

খেলতে যাচ্ছি শ্রীলঙ্কায়, কয়দিন পর এশিয়া কাপও হবে শ্রীলঙ্কায়। স্বাভাবিকভাবেই অভিজ্ঞতাটা কাজে লাগবে।
শরীফুল ইসলাম
প্রশ্ন:

একটু পেছনে ফিরে যাই। গত এক বছর চোট, দল থেকে বাদ পড়া—সব মিলিয়ে সময়টা নিশ্চয়ই প্রত্যাশামতো যায়নি।

শরীফুল: খুব কঠিন সময় ছিল। কিন্তু আমি হাল ছেড়ে দিইনি। হতাশ হইনি। ফিটনেসের যে একটু সমস্যা ছিল, সেটা কাটিয়ে উঠেছি। সব সময় তাসকিন ভাইয়ের সঙ্গে কথা হতো। ট্রেনারের সঙ্গে কথা হতো। তাঁরা যে কাজগুলো দিত, সেগুলো করতাম। কিছু সাপ্লিমেন্ট নিয়ম করে খেয়েছি। যখন আবার ফিরেছি, তখন বোলিং ওয়ার্কলোড নিয়ে খুব সচেতন ছিলাম। এখন সব নিয়ম মেনে করছি। তাই ফলও ভালো পাচ্ছি।

তিন সংস্করণের ক্রিকেটে দারুণ ছন্দে শরীফুল
ছবি: প্রথম আলো
প্রশ্ন:

২০২১ সালে যখন আপনার অভিষেক হয়, তখন টানা সব সংস্করণে খেলেছেন। এবার চোট থেকে ফেরার পর হিসাব করে খেলানো হচ্ছে।

শরীফুল: হাথু স্যার (চন্ডিকা হাথুরুসিংহে) বারবার এটাই বলেছেন। বিশ্বকাপের আগে আমাদের ওয়ার্কলোড এমনভাবে নিয়ে যেতে হবে যেন ফিট থাকি। সে জন্য যেটা করার, তাঁরা করছেন। সবাইকে হিসাব করে খেলাচ্ছেন।

আরও পড়ুন
প্রশ্ন:

আপনাকে খুব বেশি ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি খেলানো হয়নি। কিন্তু এ বছর দুটি টেস্ট খেলেছেন। বোলিংয়ের ছন্দ ফিরে পেতে টেস্ট দুটি কতটা সাহায্য করেছে?

শরীফুল: আমাকে টেস্টে খেলানোর জন্য আমি কোচকেও থ্যাংকস দিয়েছিলাম। আমি টেস্ট খেলতে চাচ্ছিলাম। আমার মনে হচ্ছিল টেস্ট খেললে আমি দ্রুত ছন্দে ফিরব। টেস্টে ভালো করায় খুব ভালো লাগছিল। তখন একটা আত্মবিশ্বাস চলে আসে। মনে হচ্ছিল আগের ছন্দে ফিরতে পেরেছি। টেস্টে ভালো করলে অন্য দুই সংস্করণের বোলিংটা সহজ মনে হয়।

আরও পড়ুন
প্রশ্ন:

নতুন বলে খুব আক্রমণাত্মক বোলিং করছেন। আফগানিস্তান সিরিজের একটা ম্যাচে তো প্রথম স্পেলেই খেলা শেষ করে দিয়েছিলেন। আপনার ক্যারিয়ার সেরা বোলিং ছিল সেটি...

শরীফুল: আমি আফগানিস্তান সিরিজের (ওয়ানডে) প্রথম দুই ম্যাচে সুযোগ পাইনি। বসে বসে খেলা দেখেছি। দেখলাম যে ওদের বোলাররা আমাদের প্লেয়ারদের সঙ্গে অনেক কিছু করছে। এসব দেখলে আমার আর সহ্য হয় না (হাসি)। আমি মাঠের বাইরে যতই ঠান্ডা থাকি না কেন, তখন অটোমেটিক ভেতর থেকে (আগ্রাসন) চলে আসে। প্রথম দুইটা ম্যাচে আমাদের সঙ্গে এমন করতে দেখে আমার ভালো লাগেনি। আমিও তাই চেষ্টা করেছি ওদের কিছু ফিরিয়ে দিতে।

প্রশ্ন:

নতুন কোনো স্কিল যোগ হয়েছে গত এক বছরে?

শরীফুল: হ্যাঁ, বল ভেতরে আনতে শিখছি। তবে এখনো ওই পর্যায়ে যাইনি। চাইলেই বল ভেতরে আনতে পারব, এমন পর্যায়ে যেতে হবে। আমি অনুশীলন করে যাচ্ছি। যখন চাইব তখন যেন বল ভেতরে আনতে পারি। এটার অন্যরকম একটা আনন্দ আছে। ম্যাচে ওই বলটা করতে পারলে একমাত্র আমিই সেই আনন্দটা টের পাব। এটা বিরাট ব্যাপার। আমি চেষ্টা করছি। নেটে করছি। সেখানে ভালোই আসে। এখন ম্যাচে সেটা ধারাবাহিকভাবে করতে চাই।

প্রশ্ন:

এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপ নিয়ে কোনো ভাবনা?

শরীফুল: এখনই না। সময় তো আছে। আপাতত সামনে যা আছে তা নিয়ে ভাবছি। তবে যদি সুযোগ পাই, তাহলে অবশ্যই দেশকে বড় কিছু এনে দিতে চাইব। যে কোনো বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে যাওয়ার আগে পুরো দলেরই লক্ষ্য এটাই থাকে। আমিও ব্যতিক্রম নই।

আরও পড়ুন