২০২০ বিশ্বকাপের পর অনূর্ধ্ব–১৯ পর্যায়ে আরও একটি শিরোপা এনে দিলেন বাংলাদেশকে। কেমন লাগছে?
নাভিদ নেওয়াজ: ভালো তো অবশ্যই। টুর্নামেন্ট জিততে পারা সব সময়ই আনন্দের। আমাদের পরিকল্পনা, খেলা, পরিশ্রম, প্রত্যাশা—সবকিছু তো এ জন্যই। ক্রিকেট বোর্ড বলুন, খেলোয়াড় বা আমি—সবাই তাই চায়। চ্যাম্পিয়ন হতে পারাটা তৃপ্তির। এটা দেখে ভালো লেগেছে যে আমরা যেভাবে পরিকল্পনা করেছি, খেলোয়াড়েরা তাতে সাড়া দিয়েছে।
যুব এশিয়া কাপের অন্য দলগুলোর সঙ্গে আপনার দলের তুলনা কীভাবে করবেন?
নাভিদ: সব দলই শক্তিশালী ছিল। গ্রুপে আমরা নেপাল, আফগানিস্তান, শ্রীলঙ্কার সঙ্গে খেলেছি। প্রতিটা দলই ভালো। আমাদের ছেলেরা ভালো খেলেই সেমিফাইনালে উঠেছে। পরিকল্পনা কাজে লাগানোতে ভালোভাবে সফল হয়েছে এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে।
চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় ব্যাটিং–বোলিং, কোন বিভাগের অবদান বেশি দেখেন?
নাভিদ: ব্যাটিং–বোলিং দুই দিক দিয়েই দলটা ভারসাম্যপূর্ণ ছিল। দলে বেশ কয়েকজন অলরাউন্ডার থাকায় বোলার–ব্যাটসম্যানের সমন্বয়ের ক্ষেত্রে আমরা স্বাধীনতা নিতে পেরেছি। আর এটা তো সবাই–ই দেখেছেন যে আমাদের ফাস্ট বোলাররা দারুণ ফর্মে ছিল। আমরা সব ম্যাচই খেলেছি দুবাইয়ে, শারজায় ম্যাচ খেলিনি। দুবাইয়ের উইকেট অতটা পেস সহায়ক নয়। ব্যাটিংয়ে তামিম (আজিজুল হাকিম)সহ আরও কয়েকজন ভালো করেছে। যখন তামিম পারফর্ম করতে পারেনি, তখন অন্য ছেলেরা এগিয়ে এসেছে। সব মিলিয়ে সবার পারফরম্যান্সেই খুশি।
এই পর্যায়ের ক্রিকেট থেকে পরের ধাপে, অর্থাৎ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যাওয়ার পথে অন্য দেশের ক্রিকেটাররা অনেকটাই উন্নতি করে। বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের ক্ষেত্রে সেটা কম দেখা যায়। এটা কেন হয়?
নাভিদ: আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কঠিন জায়গা। সে পর্যন্ত যেতে যেতে অনেক কিছুই হতে পারে। বয়সভিত্তিক পর্যায়ের ক্রিকেটাররা ওই পর্যায় গিয়ে কেন নিজেদের ধরে রাখতে পারে না, তার কারণ ও সমাধান খুঁজে বের করাটা জরুরি। গ্যাপটা কোথায় তৈরি হচ্ছে—ফিটনেসে, কোচিংয়ে নাকি প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ায়, আমাদের তার উত্তর খুঁজে বের করতে হবে।
সেটাই জানতে চাচ্ছি, এ নিয়ে আপনার পরামর্শ কী?
নাভিদ: আমি মনে করি সব আন্তর্জাতিক দলের জন্যই তাদের ঘরোয়া ক্রিকেট শক্তিশালী হওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এটা শুধু ভালো খেলোয়াড় উঠে আসার জন্যই নয়, মানসম্মত কোচিংয়ের জন্যও জরুরি। আমি নিশ্চিত বিসিবি এদিকটা দেখবে। উন্নত ঘরোয়া ক্রিকেট খেলোয়াড়দের আরও দৃঢ় করে তোলে। ঘরোয়া প্রতিযোগিতা যদি মানসম্মত না হয়, তা থেকে উঠে আসা খেলোয়াড়দের ওপরও আপনি আস্থা রাখতে পারবেন না। একই কথা প্রযোজ্য কোচিংয়ের ক্ষেত্রেও। একজন খেলোয়াড়কে ভালোভাবে গড়ে তুলতে, তার শক্তিমত্তা ও দুর্বলতার জায়গা বুঝতেও ভালো কোচিংটা জরুরি।
বয়সভিত্তিক পর্যায় থেকে জাতীয় দলে যাওয়া অনেক ক্রিকেটারেরই অনেক সময় মৌলিক কিছু সমস্যা থেকে যায়। আপনি তো দ্বিতীয় দফায় বাংলাদেশ যুব দল নিয়ে কাজ করছেন। কতটা তৈরি খেলোয়াড় পাচ্ছেন এই পর্যায়ে?
নাভিদ: (হাসি) আমরা কখনোই এই পর্যায়ে তৈরি ক্রিকেটার পাই না। তাদের প্রস্তুত করে তুলতে অনেক কাজ করতে হয়। ছয় মাস আগে আমি যখন এবারের দলটার দায়িত্ব নিই, তাদের স্কিল ছিল, তবে আমাকে সেটাকে একটা কাঠামোর মধ্যে আনতে হয়েছে। তাদের প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটের অনেক কিছু শেখাতে হয়েছে।
এই দলের বেশির ভাগ ক্রিকেটারের সামনেই সুযোগ থাকবে ২০২৬ সালের যুব বিশ্বকাপে খেলার। ২০২০ যুব বিশ্বকাপ জেতা দলটার সঙ্গে বর্তমান দলের তুলনা করবেন কীভাবে?
নাভিদ: এবার দলের কম্পোজিশনটাই আলাদা। ২০২০ বিশ্বকাপে আমাদের দলে একজনই অলরাউন্ডার ছিল। এবারের দলে বেশ কয়েজন অলরাউন্ডার আছে। ২০২০–এর দলে আবার ব্যাটসম্যান ছিল অনেক। মাহমুদুল হাসান, তাওহিদ হৃদয়, তানজিদ তামিম, আকবর আলীর মতো ক্রিকেটাররা ছিল। বর্তমান দলটাকে নিয়ে এখনই কিছু বলা একটু তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে। হাতে অনেক সময় আছে। আমি নিশ্চিত তারাও তত দিনে বিশ্বকাপে ভালো খেলার সামর্থ্য অর্জন করবে।
বিশ্বকাপের আগে দক্ষিণ আফ্রিকা, জিম্বাবুয়ে ও ইংল্যান্ডে সফর করবে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব–১৯ দল। শ্রীলঙ্কা যুব দলের সঙ্গেও একটা সিরিজ হতে পারে। এই সিরিজগুলো নিয়ে কী পরিকল্পনা?
নাভিদ: এসব সিরিজের আগে প্রস্তুতি ক্যাম্প তো হবেই। এর বাইরে চেষ্টা করব ওদের বেশি বেশি প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলাতে, সেটা হতে পারে ঘরোয়া ক্রিকেটে সুযোগ দিয়ে বা নিজেদের মধ্যে খেলিয়ে। ম্যাচ পরিস্থিতিতে অনুশীলন তো হবেই। সব মিলিয়েই পরিকল্পনা থাকবে।
অনূর্ধ্ব–১৯ পর্যায়ের ক্রিকেটে কোনটি আসলে মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত? টুর্নামেন্ট বা ট্রফি জয় নাকি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য ভবিষ্যতের ক্রিকেটার তৈরি করা?
নাভিদ: আমি মনে করি দুটো লক্ষ্যই থাকা উচিত। বিশ্বকাপের মতো টুর্নামেন্ট জয়ের লক্ষ্য যেমন রাখতে হবে, একইভাবে এমন কিছু ক্রিকেটার তৈরি করাও গুরুত্বপূর্ণ, যারা বাংলাদেশ দলের হয়ে লম্বা সময় খেলতে পারবে। বৃহত্তর দৃষ্টিকোণ থেকে বললে এটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ আসলে।
বাংলাদেশ দলের অভিজ্ঞদের ক্যারিয়ার শেষের দিকে। বয়সভিত্তিক পর্যায় থেকে যাঁরা আসছেন, অভিজ্ঞদের শূন্যস্থান তাঁরা কতটা ভরাট করতে পারবেন বলে মনে করেন?
নাভিদ: আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আসার পর একজন ক্রিকেটারের এই পর্যায়ের সঙ্গে মানিয়ে নিতে কিছুটা সময় লাগে। তাদের যথেষ্ট সময় দিতে হবে এবং দেখতে হবে তারা এই পর্যায়ে খেলতে কতটা সক্ষম। আমি মনে করি এখন যারা উঠে আসছে, তারাও একটা পর্যায়ে গিয়ে জাতীয় দলে খেলতে পারবে। তবে সে জন্য তাদের একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
