বাংলাদেশের পেসাররা এখন মার খাওয়ার ভয় পায় না

বাংলাদেশের ফাস্ট বোলিং কোচ অ্যালান ডোনাল্ডছবি: প্রথম আলো

১৫ সদস্যের বিশ্বকাপ দলে পেসার পাঁচজন। স্ট্যান্ডবাই তালিকায় আরও একজন। অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠেয় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য ঘোষিত বাংলাদেশ দলে সেখানকার কন্ডিশন নিয়ে ভাবনার ছাপ স্পষ্ট। কিন্তু বিশ্বকাপের আগে পেস বোলিং নিয়ে প্রত্যাশার চেয়ে দুশ্চিন্তাটাই বেশি। অধিনায়ক সাকিব আল হাসান তো স্পষ্ট ভাষাতেই ডেথ ওভারে পেসারদের পারফরম্যান্সে উন্নতি দাবি করেছেন। কাল দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পেস বোলিং কোচ অ্যালান ডোনাল্ডও বলেছেন পেসারদের নিয়ে তাঁর ভাবনার কথা। সেখানে এশিয়া কাপে পেসারদের পারফরম্যান্স ও বিশ্বকাপের আগে পেস বোলিং নিয়ে তাঁর ভাবনাও উঠে এসেছে—

প্রশ্ন:

এশিয়া কাপে পেসারদের পারফরম্যান্স কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

অ্যালান ডোনাল্ড: আমরা পাঁচ-ছয় মাস ধরেই নতুন বলে পেসারদের মানসিকতা নিয়ে কাজ করেছি। ছেলেরাও সেটাকে মনেপ্রাণে গ্রহণ করেছে। আর এশিয়া কাপের পারফরম্যান্সে ঠিক সেটাই দেখা গেছে। পেসাররা এখন বোলিং করতে গিয়ে মার খাওয়ার ভয় পায় না। এটা আমার জন্য বিরাট এক অর্জন।

প্রশ্ন:

কিন্তু ডেথ ওভারের বোলিং একদমই ভালো হয়নি…

ডোনাল্ড: দেখুন, ডেথ ওভার বোলিং টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের সবচেয়ে কঠিন কাজ। বোলারের জন্য ম্যাচের উত্তাপটা সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় পৌঁছায় ঠিক তখনই। ঠান্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত নেওয়াটা সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং ঠিক তখনই। আমরা এটাকে বলি ‘মাইক্রো গেম’। ম্যাচের ভেতর যে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম খেলাটা হয়, সেটার কথা বলছি। আর আমরা সেই জায়গাটা ঠিক ধরতে পারছি না।

প্রশ্ন:

অধিনায়ক সাকিব আল হাসান বলেছেন, তিনি বিশ্বকাপে ডেথ ওভারে ভালো বোলিং চান। আমাদের কি সেই সামর্থ্য আছে?

ডোনাল্ড: সত্যি কথা বলতে, এশিয়া কাপে যে প্রস্তুতিটা হলো, এর চেয়ে ভালো প্রস্তুতি আমি প্রত্যাশা করতে পারি না। ওভার ও রাউন্ড দ্য উইকেট—আমরা একটা বিষয়ও বাদ দিইনি। ছেলেরা শতভাগ দিয়েছে। কিন্তু যখন সত্যিকারের চাপটা এসে পড়ে, তখন আমরা পারছি না। এটাই সত্যি। এটা লুকানোর কোনো সুযোগ নেই। অস্ট্রেলিয়ায় আমাদের যেতেই হবে। সেখানে ম্যাচ শেষ করে আসতেই হবে। এ ছাড়া উপায় নেই।

দেশের বাইরে মোস্তাফিজের বোলিং ভালো হচ্ছে না
ছবি: শামসুল হক
প্রশ্ন:

দেশের বাইরে মোস্তাফিজুর রহমানের ফর্ম ভালো যাচ্ছে না। তাঁকে নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তা?

ডোনাল্ড: তার কাছে সব সময় প্রত্যাশা বেশি থাকে। আমরা দেখেছি, সে ইয়র্কার দেওয়ার ক্ষেত্রে কতটা ধারাবাহিক। গত কয়েক মাসে সে হয়তো সেই পুরোনো ছন্দে নেই। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলি, চাপের মুহূর্তে ইয়র্কার দেওয়ার আত্মবিশ্বাস যখন থাকবে না, যখন শুধু স্লোয়ার বলের ওপর নির্ভর করবেন, তখন কাজটা খুবই কঠিন হয়ে যায়। আমি ওর সঙ্গে এটা নিয়ে কথা বলেছি। আশা করছি, যেখানে সে ছিল, আমি তাকে সেখানে ফিরিয়ে নিতে পারব।

প্রশ্ন:

ইবাদত হোসেনের বিশ্বকাপ দলে জায়গা করে নেওয়াটাকে কীভাবে দেখছেন?

ডোনাল্ড: সাদা বলের ক্রিকেটে সে খুবই কম ম্যাচ খেলেছে। কিন্তু তাতেই সে বিশ্বকাপ দলে জায়গা করে নিয়েছে। তিন সংস্করণেই যে তার ওপর থেকে চোখ সরানো যাবে না, সেটা সে নিশ্চিত করেছে। সে কত কঠোর পরিশ্রম করেছে, আমরা যা বলেছি তা কতটা গ্রহণ করেছে, এটা তারই প্রমাণ। অস্ট্রেলিয়ার সব মাঠে ইবাদত কার্যকর হতে পারে। খুব বেশি মুভমেন্ট থাকবে না। কিন্তু ওই অতিরিক্ত গতি, যেটা ইবাদতের আছে, সেটা ব্যাটসম্যানের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা এলোমেলো করে দিতে পারে।

ইবাদতকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন ডোনাল্ড
ছবি : সংগৃহীত
প্রশ্ন:

মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনকে ডেথ ওভারের সমাধান হিসেবে দেখছেন?

ডোনাল্ড: দুবাইতে তার সঙ্গে কাজ করেছি। সে নিজেই বলেছে, এখনো সে সেরা অবস্থানে ফিরতে পারেনি। তবে সামনে যেটুকু সময় আছে, তত দিনে আমরা তার কাছ থেকে আরও অনেক কিছু বের করে নেব। সে দারুণ ডেথ বোলার। এই দলে এটাই হতে পারে তার দায়িত্ব।

পেস বোলারদের নিয়ে আশাবাদী ডোনাল্ড
ছবি: শামসুল হক
প্রশ্ন:

হাসান মাহমুদের অনেক প্রশংসা করেছিলেন আপনি। তাঁকে কি নতুন বলে দেখা যেতে পারে?

ডোনাল্ড: হাসান গতির সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ দিচ্ছিল দলকে, সঙ্গে সুইংও। জিম্বাবুয়েতে খুব দ্রুতই উইকেট এনে দিচ্ছিল সে। ডেথেও ভালো আত্মবিশ্বাসী ইয়র্কার দেওয়ার ক্ষেত্রে।

এশিয়া কাপে তাকে খুব মিস করেছি। আমি নিশ্চিত, সে বিশ্বকাপে বড় অবদান রাখবে। আমরা এখন দোটানায় ভুগছি, কে হবে আমাদের নতুন বলের বোলার।

প্রশ্ন:

শরীফুল ইসলাম সেরা ১৫-তে জায়গা পেল না। অবাক হয়েছেন?

ডোনাল্ড: আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম সিরিজে কী দারুণ বোলিংটাই না করল! সে নিশ্চয়ই হতাশ মূল দলে জায়গা না পেয়ে। ক্রিকেটে মাঝেমধ্যে খুব রূঢ় সিদ্ধান্ত নিতে হয়। শরীফুলের ক্ষেত্রে সেটা হয়েছে।

প্রশ্ন:

অস্ট্রেলিয়ায় কমপক্ষে ১২-১৪ ওভার পেস বোলিং করানো লাগবে। এ ক্ষেত্রে পেসারদের নিয়ে আপনি কতটা আত্মবিশ্বাসী?  

ডোনাল্ড: তাসকিন, ফিজ, ইবাদত, হাসান, সাইফুদ্দিন…অবশ্যই এদের নিয়ে সাজানো পেস আক্রমণটা যে কাউকে চমকে দিতে পারে। কোনো সন্দেহ নেই, অস্ট্রেলিয়ায় এরা চমক দেখাবে। আমাদের পেস আক্রমণকে কেউ বাজে বলতে পারবে না।

মানসিকতাটা আসল। আমরা যদি কাঁপিয়ে দেওয়ার মানসিকতা চর্চা করতে পারি, তাহলে যেকোনো দলকে হারাতে পারব।