সাক্ষাৎকারে রাসেল মাহমুদ জিমি

‘আমি প্রতিবাদ করি, এটাই আমার সমস্যা’

গত ১৯ এপ্রিল শেষ হয়েছে ঘটনাবহুল বাংলাদেশ প্রিমিয়ার হকি লিগ। কিন্তু এর বেশ রয়ে গেছে এখনো। আবাহনী-ঊষাকে যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করে পরশু বিভিন্ন ক্লাব, কর্মকর্তাসহ রেকর্ড ১৫ জন খেলোয়াড়কে বিভিন্ন মেয়াদে নিষিদ্ধ করেছে বাংলাদেশ হকি ফেডারেশন। সর্বোচ্চ ১২ ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা পেয়েছেন দেশের হকির সবচেয়ে বড় নাম রাসেল মাহমুদ জিমি। এমন শাস্তিতে হতবাক মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের অধিনায়ক। সিদ্ধান্ত সঠিক হয়নি বলছেন তিনি। উগরে দিয়েছেন অনেক ক্ষোভও। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মাসুদ আলম

প্রথম আলো:

হকি ফেডারেশন ১২ ম্যাচ নিষিদ্ধ করেছে আপনাকে। কীভাবে দেখছেন?

রাসেল মাহমুদ জিমি: প্রথমে শুনে হেসেছি। শাস্তি তো আমি লিগ চলাকালীনই পেয়েছি। মেনেও নিয়েছি। তিন হলুদ কার্ডে আমি শেষ ম্যাচে আবাহনীর বিপক্ষে খেলতেই পারিনি। পুরো লিগ দেখে ডিসিপ্লিনারি কমিটির সুপারিশে এই শাস্তি হয়েছে। মাঠে আমি বেআইনি কিছু করলে লিগ চলাকালে শাস্তি দিল না কেন? বা সতর্ক করল না কেন? এটা আমার প্রশ্ন।

প্রথম আলো:

ফেডারেশন আপনার বক্তব্য শুনেছে?

জিমি: শোনেনি। কারণ দর্শানোর নোটিশও দেয়নি। শুনানিতে ডাকলে জানার ইচ্ছা ছিল, আমি যদি পুরো লিগে দোষ করে থাকি, তাহলে লিগের মধ্যে কেন শাস্তি দিল না। আবাহনীর বিপক্ষে শেষ ম্যাচের আগে তো আমি চিঠি পাই যে তিন হলুদ কার্ডের জন্য খেলতে পারব না।

প্রথম আলো:

সেটিই যদি হয়, তাহলে লিগ শেষে এত বড় শাস্তির কারণ কী মনে হয় আপনার?

জিমি: কোনো কারণ নেই। আমার সঙ্গে অন্যায় হয়েছে। না হলে তো আমার ক্লাব মোহামেডান আমার পক্ষে দাঁড়াত না। আর লিগের সঙ্গে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের সম্পর্ক কী? আমি নাকি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগও খেলতে পারব না!

প্রথম আলো:

আপনি কি বলতে চান, মাঠে কোনো অপরাধ করেননি?

জিমি: না, করিনি। প্রতিটি ম্যাচে ডিসিপ্লিন কমিটির একজন মাঠে ছিল। ভিডিও দেখা হয়েছে। মাঠের সমস্যা হলে মাঠেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বাইলজ বলছে, কোনো খেলোয়াড় শৃঙ্খলা ভাঙলে দুই ঘণ্টার মধ্যে রিপোর্ট যাবে লিগ কমিটির কাছে। লিগ কমিটি দুই ঘণ্টার মধ্যে সিদ্ধান্ত নেবে। আমি কোনো গোলমাল করলে পরের ম্যাচেই তো আমাকে বসিয়ে দেওয়ার কথা। সেটা তো হয়নি।

প্রথম আলো:

আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ, লিগজুড়ে আপনি ৭১ বার আপিল করেছেন। এতে খেলার সময় নষ্ট হয়েছে...

জিমি: ৭১ বার আপিল করে থাকলে সেটা রিভিউর জন্য অবশ্যই। এখন একটা রিভিউর নিষ্পত্তিতে আম্পায়ার ৭-১০ মিনিট সময় নিয়ে নিলে আমার কিছু করার নেই। আর রিভিউ নেওয়া আমার অধিকার। প্রতি ম্যাচে ২টা করে রিভিউ থাকে। দেখা গেছে এক ম্যাচে ২টাতেই সফল হয়েছি, পরে আবার নিয়েছি। আবাহনীর বিপক্ষে ম্যাচে রিভিউ নিয়ে সফল হয়েছি। প্রতিপক্ষ প্রতিবাদ করায় খেলা বন্ধ হয়েছে। আবাহনী ম্যাচে শেষ ১৫ সেকেন্ডের খেলা হয়েছে ৩৫ মিনিটে। এতে আমার দায় কোথায়?

প্রথম আলো:

বড় অভিযোগ, আপনি আম্পায়ারদের সঙ্গে অযথা তর্ক করেছেন। তাঁদের গালাগাল করেছেন?

জিমি: এটা সত্য নয়। কোনো আম্পায়ারের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করিনি। করলে তো পরের ম্যাচেই বাদ পড়ার কথা। হ্যাঁ, আমার মাথা গরম হয়েছে। খেলার মধ্যে লড়াই হয়েছে। ধাক্কাধাক্কি হয়েছে। এগুলো খেলারই অংশ।

প্রথম আলো:

আপনার ক্যারিয়ারে বারবারই এমন হয় কেন?

জিমি: ২০১৩ সালে দলবদলের জন্য আন্দোলন করে এক বছর নিষিদ্ধ হয়েছি। আমি আসলে প্রতিবাদ করি। এটাই আমার সমস্যা।

প্রথম আলো:

বলা হয়, আপনার মাথা গরম...

জিমি: এখন কী করব, আমি কি আমার মাথা ফাটিয়ে দেব? মানসিক ডাক্তারের কাছে যাব? আমার মাথা গরম সেটা আন্তর্জাতিক ম্যাচে নয় কেন? আমি জাতীয় দলে ২১ বছরের ক্যারিয়ারে ১৯৪টা আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছি। সেখানে কয়টা হলুদ কার্ড দেখছি? অনেক সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করে বাংলাদেশের পক্ষে ফল এনেছি। আন্তর্জাতিক ম্যাচে আমার মাথা গরম হয়নি কেন?

প্রথম আলো:

তারপরও কি মনে হয় নিজের কোনো ভুল আছে বা অনুতপ্ত?

জিমি: আমি কোনো ভুল করিনি। তাই কোনো হতাশা নেই, অনুতপ্তও নই। বরং ভালো লাগে এই ভেবে, আজও আমাকে নিয়ে কথা হয়। খারাপ খেললে তো হতো না। এবার অনেক খেলোয়াড় সাসপেন্ড, কিন্তু সবাইকে নিয়ে কথা হচ্ছে না। ক্রিকেটে যেমন সাকিবকে নিয়ে হয়, অন্যদের নিয়ে খুব কম।

প্রথম আলো:

বাংলাদেশ লিগ হয় ২–৩ বছর পরপর। আপনার বয়স এখন প্রায় ৩৭। এই নিষেধাজ্ঞায় জিমির ক্যারিয়ারে তাহলে দাঁড়ি পড়ে গেল বলা যায়?

জিমি: না, বলা যায় না। ফিটনেস আর মনের জোরে খেলে চলেছি। যত দিন সম্ভব খেলে যেতে চাই।