হকি

‘ক্লাবের সঙ্গে বসব, মিলেমিশে এগোব’

ক্রীড়াঙ্গনে সংস্কারের অংশ হিসেবে ক্রীড়া ফেডারেশনগুলোর কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন অ্যাডহক কমিটি করা হচ্ছে। এরই মধ্যে ঘোষিত হয়েছে ৯টি ফেডারেশনের নতুন কমিটি। এই কমিটি কী সংস্কার করবে, কেন করবে—এসব জানতেই ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদকদের এই ধারাবাহিক সাক্ষাৎকার। আজ চতুর্থ দিনে প্রথম আলোর মুখোমুখি হকি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক লে. কর্নেল রিয়াজুল হাসান (অব.)

প্রশ্ন:

বাংলাদেশের হকি অঙ্গনে আপনার তেমন পরিচিতি নেই। নিজেকে কীভাবে চেনাবেন?

লে. কর্নেল রিয়াজুল হাসান (অব.): আমার জন্ম পাকিস্তানের পাঞ্জাবে ১৯৫৯ সালে। সেখানে স্কুলে হকি খেলেছি। বাবা সেনাবাহিনীতে চাকরি করতেন। ১৯৭৩ সালে আমরা ঢাকায় চলে আসি। সম্ভবত ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ স্পোর্টিংয়ের হয়ে আমার হকি খেলা শুরু। এরপর বন্ধুরা মিলে ক্যান্টোনিয়ানস স্পোর্টিং নামে একটা ক্লাব গড়ি। ক্লাবটি প্রথম বছরেই দ্বিতীয় বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হয়ে প্রথম বিভাগে আসে। আমিও প্রথম বিভাগে খেলেছি।

প্রশ্ন:

তারপর?

রিয়াজুল হাসান: সেনাবাহিনীতে যোগ দিই ১৯৮১ সালে। ১৯৯৫ পর্যন্ত সেনাবাহিনীর হয়ে হকি খেলেছি। সম্ভবত তিন-চারবার আমরা ন্যাশনাল হকি চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। আমি আর্মি স্পোর্টস কন্ট্রোল বোর্ডেও ছিলাম (সহকারী সচিব)। ২০০৯ সালে অবসরে যাই।

হকি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক লে. কর্নেল রিয়াজুল হাসান (অব.)
সংগৃহীত
প্রশ্ন:

গত ১৫ বছর কী করলেন?

রিয়াজুল হাসান: আর্মি হকি টিম দেখাশোনা করেছি মাঝেসাঝে। এখন পুরোপুরি অবসরে। তবে হকির পুরোনো খেলোয়াড়দের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। মওলানা ভাসানী স্টেডিয়ামে দু–চারবার খেলা দেখেছি চুপচাপ গিয়ে। এখন ফেডারেশনের দায়িত্বে এলাম সরকারের আগ্রহে।

প্রশ্ন:

কিন্তু হকির এক পক্ষের অভিযোগ, সার্চ কমিটির এক সদস্য তাঁর পছন্দের লোকদের নিয়ে কমিটি করেছেন। ওই পক্ষটি তাঁর বিরুদ্ধে আন্দোলনও করেছে। বিরোধ মেটাতেই সম্ভবত আপনাকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। অনেক বড় চ্যালেঞ্জ সামনে। কী করবেন, কিছু ভেবেছেন?

রিয়াজুল হাসান: হকিকে নতুনভাবে গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য। অ্যাডহক কমিটির প্রথম সভায় একটা বড় সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমরা চেষ্টা করব স্কুল পর্যায়ে হকি শুরু করতে। তারপর আস্তে আস্তে এগোব।

প্রশ্ন:

বাংলাদেশে হকিই সবচেয়ে অধারাবাহিক। এক বছর লিগ হলে তিন বছর উধাও। কোনো ক্যালেন্ডার নেই। একটা ক্যালেন্ডার কি আপনি দেবেন?

রিয়াজুল হাসান: চেষ্টা করব। এ জন্য ক্লাবগুলোর সহায়তা লাগবে। ক্লাবের সহযোগিতা না পেলে লিগ-টুর্নামেন্ট চলবে না। আমরা ক্লাবের সঙ্গে বসব, মিলেমিশে এগোব।

প্রশ্ন:

কিন্তু বাংলাদেশের হকি মানেই ক্লাবগুলার মধ্যে রেষারেষি। ফেডারেশনের ভেতরে দ্বন্দ্ব চরমে। মাঠে গন্ডগোলও নিয়মিত ঘটনা। সুষ্ঠুভাবে হকি চালানো কতটা চ্যালেঞ্জ মনে করছেন?

রিয়াজুল হাসান: অনেক বড় চ্যালেঞ্জই। তবে ছোটখাটো সমস্যাগুলো এড়িয়ে সামনে যেতে হবে। আমরা সেই পরিবেশ তৈরি করার চেষ্টা করব।

প্রশ্ন:

হকি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে অতীতে অনেক বিতর্ক হয়েছে। এক পক্ষ উত্তরে গেলে আরেক পক্ষ দক্ষিণে হাঁটে। এরই মধ্যে এই অ্যাডহক কমিটিকে প্রত্যাখান করে বক্তব্য দিয়েছেন হকির সাবেক এক সাধারণ সম্পাদক। অবস্থাদৃষ্টে অনেকে মনে করছেন, আপনি পুরোপুরি সহযোগিতা না-ও পেতে পারেন ক্লাব থেকে।

রিয়াজুল হাসান: এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করব না। তবে আশা করি, ক্লাবগুলোকে পাশে পাব। আমাদের মাত্র ১০ দিন হয়েছে। সব গুছিয়ে নিতে একটু সময় দিন।

প্রশ্ন:

বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক মমিনুল হক সাঈদ ক্যাসিনো-কাণ্ডে জড়িত ছিলেন। হকি ফেডারেশন তীব্র ইমেজ–সংকটে পড়ে। তা ছাড়া হকি মাঠে নামানো, মাঠে রাখা, পারবেন তো?

রিয়াজুল হাসান: পারতে হবে। দেখি হকির কী পরিস্থিতি আছে বর্তমানে। পরিস্থিতি তো এত দ্রুত বোঝা যায় না। একটু সময় লাগে।

প্রশ্ন:

হকিতে কেমন সংস্কার চান আপনি নিজে?

রিয়াজুল হাসান: উত্তরটা এখনই দিতে পারব না। আস্তেধীরে কাজ হবে। তাড়াহুড়োয় কাজ ভালো হয় না। তবে হকিতে সংস্কার বলতে সবার মধ্যে সমঝোতা দরকার। সবাই মিলে কাজ করাই হবে হকির বড় সংস্কার।

প্রশ্ন:

অ্যাডহক কমিটিতে ক্লাব-জেলার প্রতিনিধি সেভাবে নেই। ফলে তাঁরা খেলতে খুব একটা আগ্রহী হবে না মনে করছেন কেউ কেউ। কী বলবেন?

রিয়াজুল হাসান: কমিটি সরকার করেছে। ফলে আমার কোনো মন্তব্য নেই। তবে আমি সব সময়ই ইতিবাচক থাকতে চাই।

প্রশ্ন:

হকি খেলোয়াড়দের মনে অনেক দুঃখ, অনেক ক্ষোভ। তাঁদের জন্য কী বার্তা?

রিয়াজুল হাসান: খেলাটা চালিয়ে যাও। মওলানা ভাসানী স্টেডিয়ামের মাঠটা কাল (আজ) পরিষ্কার করা শুরু হবে। আমার আহ্বান, খেলোয়াড়েরা যেন এসে প্র্যাকটিস করে।

প্রশ্ন:

কিন্তু প্র্যাকটিস করে কী লাভ, যদি খেলাই না থাকে?

রিয়াজুল হাসান: খেলার ব্যাপারে আগামী সপ্তাহে বলতে পারব। আমি চাই, হকি যেন আগের মতো মাঠে ব্যস্ত থাকে, জেলায় জেলায় খেলা হয়।