‘বিপিএলে বিদেশিদের কম টাকা দেওয়া হয় না’

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন ও চেয়ারপারসন নাফিসা কামালছবি: সংগৃহীত

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসকে আগের দিন এনে দিয়েছেন চতুর্থ বিপিএল শিরোপা। সেই আনন্দের মধ্যেই গতকাল পেলেন আরেক খুশির খবর—প্রথম বিভাগ ক্রিকেটে জীবনের প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমে ৪ উইকেট পেয়েছেন তাঁর ছেলে। মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের জন্য সত্যিকার অর্থেই এটা বসন্ত। বসন্তের বিকেলেই গতকাল বনানীর টিম হোটেলে বসে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস কোচ সাক্ষাৎকার দিলেন প্রথম আলোকে—

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন
প্রশ্ন:

বিপিএল নিয়ে তো প্রতিবারই কিছু না কিছু বিতর্ক থাকে। এবার সব মিলিয়ে টুর্নামেন্টটা কেমন হলো?

সালাউদ্দিন: একবার খেলা শুরু হয়ে গেলে সবই আসলে ঠিক লাগে। তবে আমার মনে হয় টুর্নামেন্টটা ভালো করতে বিসিবির অনেক কিছুই করার আছে। আরেকটু যদি তারা যত্ন নেয়, অনেক ছোটখাটো সমস্যাই সমাধান করা সম্ভব। ডিআরএস তার মধ্যে একটা। বিপিএলের ভেন্যু বাড়ানোটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে হলে এটা আরও বড় টুর্নামেন্ট হবে, মানুষের সম্পৃক্ততা আরও বাড়বে। আপনি দেখেন, ফাইনালে কত দর্শক হয়েছে! দর্শকের মধ্যে তো বিপিএল নিয়ে ক্রেজ আছে, মানুষ খেলাটা দেখতে চায়। যে দেশের মানুষের মূল বিনোদন এই একটা খেলা, সেই দেশে ক্রিকেটে ব্যবসা করতে না পারার তো আসলে কোনো যুক্তি নেই।

বিপিএলে সালাউদ্দিনের হাত ধরে এবারও চ্যাম্পিয়ন হয়েছে কুমিল্লা। পাশেই কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের চেয়ারপারসন নাফিসা কামাল
ছবি: প্রথম আলো
প্রশ্ন:

এখানে কি শুধু বিসিবিরই দায়িত্ব দেখেন নাকি ফ্র্যাঞ্চাইজিদেরও কিছু ভূমিকা থাকতে পারে?

সালাউদ্দিন: দেখুন ফ্র্যাঞ্চাইজিরা তো এমনিতেই কোনো লাভ ছাড়া অনেক কাজ করছে। তারা অনেক টাকা খরচ করছে, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। সিলেট স্ট্রাইকার্সের কথাই ধরুন। প্রথমবার এসেই তাদের ভালো করার কারণ আছে। তারা পুরো সিলেটকেই এক করে ফেলেছে তাদের ফ্র্যাঞ্চাইজি দিয়ে। মাঠের বাইরেও অনেক টাকা খরচ করেছে। আমরা যেমন কুমিল্লার দল। আমরাও সব সময় চিন্তা করি, কুমিল্লার মানুষ যেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসকে নিয়ে খুশি থাকে। কুমিল্লার একটা একাডেমি আছে, সিলেটও শুনেছি একটা করবে। রংপুরের নিজস্ব মাঠ আছে। স্থায়ীভাবে যেসব ফ্র্যাঞ্চাইজি থাকবে, তারা এই কাজগুলো করবেই। আমরা যেমন এখন মনে করছি, অনুশীলনের জন্য আমাদের নিজস্ব ভেন্যু থাকলে ভালো হয়। আসলে টুর্নামেন্টটার যখন ভালো একটা কাঠামো দাঁড়াবে, ছয়–সাতটা দল প্রতিবছর নিয়মিত খেলবে, তখন কিন্তু আমিও চাইব পরের বছরের দুজন দুজন প্রতিভাবান ক্রিকেটার খুঁজে দলে ঢোকাই। দায়বদ্ধতা থেকেই তা করব। ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো যদি জানে পরের বছর তারা থাকবে বা বিপিএল থেকে তাদের লাভ হচ্ছে, তখন তারা নিজ থেকেই এসব করবে। বিদেশের বড় খেলোয়াড়েরা কিন্তু বাংলাদেশে এসে খেলতে চায়। তারা এখানকার দর্শকদের সামনে খেলে মজাও পায়। অন্য অনেক দেশে তো দর্শক পায় না। দুবাই লিগ দেখেন, পুরো স্টেডিয়ামে কেউ নেই! কিন্তু আমরা যখন বিদেশি খেলোয়াড়দের সঙ্গে কথা বলি, তারা বলে, তোমাদের টুর্নামেন্টের তো সময় ঠিক নেই, দিন–তারিখ ঠিক নেই।

আরও পড়ুন
প্রশ্ন:

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের একাডেমিকে আপনারা ফ্র্যাঞ্চাইজির সঙ্গে কীভাবে সম্পৃক্ত করছেন? একাডেমির কোনো খেলোয়াড়কে কি দলের সঙ্গে রাখেন বা অন্য কিছু করেন?

সালাউদ্দিন: কুমিল্লার একাডেমি খুব ভালো করছে। বিভিন্ন জায়গায় খেলে ওরা ট্রফিও নিয়ে আসছে। তবে আমি একাডেমির ছেলেদের বলেছি, একাডেমিতে আছ বলেই ভেবো না তোমরা কুমিল্লার হয়ে বিপিএল খেলবে। তোমাদের যদি যোগ্যতা থাকে আমরাই তোমাদের খুঁজে নিয়ে আসব। অনেক ছেলে আছে, যারা এখন প্রথম বিভাগে খেলছে। তারা যখন ওই পর্যায়ে আসবে, আমরাই তাদের সুযোগ দেব।

কুমিল্লার একাডেমি নিয়ে আশার কথা শোনালেন সালাউদ্দিন
ছবি: প্রথম আলো
প্রশ্ন:

বিদেশি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ বাড়ছে। দুবাই ও দক্ষিণ আফ্রিকার লিগ এরই মধ্যে বিপিএলকে চাপে ফেলে দিয়েছে। ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট হিসেবে বিপিএলের অবস্থান আরও শক্ত করতে বিসিবির কী করা উচিত বলে মনে করেন?

সালাউদ্দিন: প্রথম কাজ হলো টুর্নামেন্টের দিন–তারিখ ঠিক করা। কারণ, অনেক বিদেশি খেলোয়াড় শুধু এটা আগে থেকে জানে না বলে আসতে পারে না। তারা যদি জানে যে পরের বছর এই সময়ে এই টুর্নামেন্টটা হবে, তখন তারা অন্য টুর্নামেন্ট খেলতে যাবে না। বিপিএলে বিদেশিদের কম টাকা দেওয়া হয় না। আমাদের দেশে ওদের ট্যাক্সও তুলনামূলক কম দিতে হয়। বিগব্যাশে এখন অনেক খেলোয়াড় খেলতে চাচ্ছে না। কারণ, সেখানে ৪০–৪৫ শতাংশ ট্যাক্স দিতে হয়। খেলোয়াড়েরা তো কিছুই পায় না! সে তুলনায় আমাদের এখানে ট্যাক্স কম, ৩০ শতাংশ। এ রকম আরও টুর্নামেন্ট আছে, যেখানে অনেক খেলোয়াড় এখন যেতে চাচ্ছে না।

এই খেলোয়াড়দের কিন্তু আমরা ধরতে পারি, যদি বিপিএলের সময়টা ঠিক থাকে। দ্বিতীয়ত, বিসিবি ২০–২৫ জন বিদেশি ক্রিকেটারের সঙ্গে চুক্তি করতে পারে যে তারা পরের তিন বছর বিপিএলে খেলবে, যেকোনো দলে। তাদের একটা ভিত্তি মূল্য বিসিবি ঠিক করে দেবে। তারা যদি দল না–ও পায়, তবু তারা টাকা পাবে। দক্ষিণ আফ্রিকা সম্ভবত এটা করেছে। আসলে ইচ্ছা করলে, পরিকল্পনা করলে বিপিএলকেও শক্তভাবে দাঁড় করানো সম্ভব। পাকিস্তানের লিগে আমাদের চেয়ে কম টাকা দেয়। তবু খেলোয়াড়েরা সেখানে যেতে চায়, কারণ তাদের কাঠামোটা ঠিক আছে।

আরও পড়ুন
প্রশ্ন:

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের সাফল্যের প্রসঙ্গে আসি। প্রথম তিন ম্যাচ হারার পর টানা ১১ ম্যাচ জিতে চ্যাম্পিয়ন। প্রায় অসম্ভবকেই তো সম্ভব করে ফেললেন…

সালাউদ্দিন: যে অবস্থায় ছিলাম, প্রতিটি ম্যাচে জেতা ছাড়া কোনো উপায় ছিল না। এরপর পুরো টুর্নামেন্টই চাপের মধ্যে খেলতে হয়েছে। আরেকটা সমস্যা হয়েছে, যারা পয়েন্ট তালিকায় নিচের দিকে ছিল, তারাও জিতছিল না। তারা দু–একটা বড় দলকে হারাতে পারলে কাটাকাটি করে আপনি চার–পাঁচ ম্যাচ হেরেও শিরোপা জয়ের দৌড়ে থাকতে পারেন। সিলেট জিতছিল, বরিশাল জিতছিল; আমরা ওদের ধরতে হলে তো ওদেরও কারও কাছে হারতে হবে।

ভালো দল গড়ার চেষ্টাতেই কুমিল্লা সাফল্য পেয়েছে বলে মনে করেন সালাউদ্দিন
ছবি: প্রথম আলো
প্রশ্ন:

দলের পারফরম্যান্স কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

সালাউদ্দিন: আমরা সব সময় চেষ্টা করি ভালো দল গড়তে। কারণ, আমাদের লক্ষ্য থাকে প্রথমে যেন অন্তত কোয়ালিফায়ারেই যাই। এবার বাড়তি চিন্তা ছিল, কোয়ালিফায়ারে গেলে তো খেলোয়াড় লাগবে। দক্ষিণ আফ্রিকা ও দুবাই লিগ চলছিল। খেলোয়াড় পাওয়া মুশকিল হয়ে যাচ্ছিল। সে জন্য আমরা অনেক আগেই মাঠে নামি।

প্রায় সবই ঠিক করে রেখেছিলাম। গ্রুপ পর্বে কারা খেলবে, পাকিস্তানিরা কখন আসবে, ওরা যখন চলে যাবে তারপর কারা আসতে পারে। এমনও দেখা গেছে এক ম্যাচের জন্য আটজনের সঙ্গে কথা বলে রেখেছি। একজন না এলে আরেকজন। ড্রাফটের টেবিলেও ভাগ্য আমাদের পক্ষে ছিল। যাদের চেয়েছিলাম, প্রায় সবাইকে পেয়েছি। প্রথম তিন ম্যাচ হারলেও আমাদের আত্মবিশ্বাস ঠিক ছিল। কিছু ভুল আমরা করেছি, যেগুলো খুব তাড়াতাড়ি শুধরাতে পেরেছি।

প্রশ্ন:

ভুলগুলো কী, কীভাবে শোধরালেন?

সালাউদ্দিন: প্রথম ৬ ওভারে আমরা বেশি রান দিয়ে দিচ্ছিলাম। দলের সমন্বয়ের কারণে তানভীরকে তখন বসিয়ে রেখেছিলাম। এটা বড় ভুল ছিল। তানভীর আগেরবার আমাকে অনেক ভালো সার্ভিস দিয়েছে। পাওয়ারপ্লেতে সব সময় উইকেট বের করে দিত। তানভীরকে দলে নেওয়ার পর সমস্যাটা দূর হয়ে যায়।

খুশদিলকে নিয়েও একটা ভুল চিন্তা ছিল। তাকে এর আগে কখনো সামনাসামনি দেখিনি। ইউটিউবে দু–একটা হাইলাইটস দেখেছি। মিরপুরের একাডেমি মাঠে ব্যাটিং দেখে আমার মনে হয়েছিল, ও তো ৫–৬ এ ব্যাট করার মতো নয়, ওকে তাহলে আরেকটু পেছনে নামাই। কিন্তু চট্টগ্রামের প্র্যাকটিস উইকেটে ব্যাটিং দেখে বুঝতে পারি আমি ভুল করে ফেলেছি। পরে খুশদিলকেও বলেছি, ওকে আমি ভুল বুঝেছিলাম। দলের কাছেও দুঃখ প্রকাশ করেছি। চট্টগ্রাম পর্ব থেকে খুশদিল খুব ভালো খেলা শুরু করে।

প্রথম তিন ম্যাচে হেরেও উজ্জীবিত হয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় কুমিল্লা
ছবি: প্রথম আলো
প্রশ্ন:

প্রথম তিন ম্যাচ হারার পর খেলোয়াড়দের কীভাবে উজ্জীবিত করেছেন?

সালাউদ্দিন: আমি হারার জন্য খেলোয়াড়দের খুব বেশি দোষ দিই না। দায় নিজেই নিই। একজন খেলোয়াড়কে যখন আপনি বলবেন, দোষ তোমার নয়, দোষ আমার; পরেরবার সে জান দিয়ে খেলবে। রিজওয়ানেরও ভালো ভূমিকা ছিল। যেহেতু আগে অধিনায়ক ছিল, সে জানে দলকে কীভাবে উজ্জীবিত করতে হয়। ওকে নিয়ে আমরা সবার সঙ্গে বসে কথা বলেছি। সে ছেলেদের বলেছে, মুলতানে একবার পাঁচ ম্যাচ হেরেও তারা চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। একজন বড় খেলোয়াড় যখন এভাবে দলের দায়িত্ব নেয় এবং দলের ভালোর জন্য চেষ্টা করে, তখন সবার মধ্যে ইতিবাচক মনোভাব আসে।

প্রশ্ন:

বিদেশি খেলোয়াড় নিয়ে এবার সব ফ্র্যাঞ্চাইজিই ভুগেছে। কিন্তু কুমিল্লার ক্ষেত্রে দেখা গেছে, বিকল্প বিদেশি খেলোয়াড়ও আপনারা ভালো এনেছেন। স্থানীয় কিছু ক্রিকেটারের কাছ থেকেও অপ্রত্যাশিত ভালো পারফরম্যান্স পেয়েছেন…

সালাউদ্দিন: দেখুন, বড় খেলোয়াড় সবাই আনতে পারে। তবে সঠিক জায়গায় সঠিক খেলোয়াড় আনাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ। ঢাকায় যখন খেলি আমার সব সময় চেষ্টা থাকে আমি যেন ভালো বোলিং আক্রমণ নিয়ে খেলতে পারি। এখানে ১৫০ রান করেও ভালো বোলিং আক্রমণ থাকলে ম্যাচ জিতে যাবেন। সব সময় সুযোগ থাকে। আমার বোলিং আক্রমণ ভালো ছিল। একই সঙ্গে আমরা খুব সৌভাগ্যবান যে আমরা সঠিক জায়গায় সঠিক খেলোয়াড় পেয়েছি। রিজওয়ান চলে গেলে ওর জায়গায় কে খেলবে? সুনীল নারাইনকে দিয়ে আমরা প্রথমে ওপেন করাইনি। কিন্তু আমরা জানতাম সুনীল ব্যাকআপ ওপেনার হিসেবে খেলতে পারবে। জনসন চার্লস খেলতে পারেনি রিজওয়ান থাকায়। ও খেলবে, মঈন ভাই (মঈন আলী) আসলে ব্যাটিংটা আরও লম্বা হবে। সব বিবেচনা করলে বিদেশিদের অদল–বদল খুব ভালো হয়েছে। স্থানীয়দের কথা যদি বলেন, আমি খুব অবাক হয়েছি তানভীরকে ড্রাফটে কেউ আগে ডাকেনি। গতবার ও খুবই ভালো খেলেছে। সৌভাগ্যবশত আমরা ওকে পেয়ে যাই। মোসাদ্দেকের পারফরম্যান্স হয়তো সবার চোখে পড়বে না। অথচ সে–ও আমাদের দুটি ম্যাচ জিতিয়েছে। একেকজন একেকভাবে ভূমিকা রেখেছে। আমরা পরিস্থিতি অনুযায়ী ওদের কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছি। ছোটখাটো এই ট্যাকটিসগুলো কাজে লাগায় স্থানীয়দের যেভাবে চেয়েছি, সেভাবে কাজে লাগাতে পেরেছি। তবে পেসার আশিককে সেভাবে কাজে লাগাতে পারিনি। ওর পেস ভালো, আক্রমণাত্মক মানসিকতা আছে। আশা করি, সে একদিন বাংলাদেশকে ভালো সার্ভিস দেবে।

প্রশ্ন:

তানভীর স্পিনটা একটু জোরের ওপর করেন বলে অনেক সময় তাঁকে সমালোচনা শুনতে হয়। কিন্তু আপনি নাকি তাঁকে তাঁর মতো করে বোলিং করার স্বাধীনতা দিয়েছেন…

সালাউদ্দিন: দলে অন্য যারা স্পিনার ছিল, এমনকি খুশদিলও, তারা সাধারণত ফ্লাইট দিয়ে বল করতে পারে না। এখন আমি যদি তাকে বলি যে তুমি ফ্লাইট দিয়ে বল কর, তাহলে সে পারবে না। যে যেটা পারে না, তাকে সেটা করতে বললে তো হবে না। এটাই বরং ভালো যে লেংথ ঠিক রেখে সে তার শক্তি কাজে লাগাক। এসব ক্ষেত্রে এ রকম সোজা পথে হাঁটাই ভালো। তানভীরকেও তা–ই বলেছি এবং ও সেটা করেই সফল হয়েছে। তবে ভালো স্পিনার হতে হলে ওকে সবকিছুই শিখতে হবে।

বিপিএল ফাইনালে জনসন চার্লসের অপরাজিত ৭৯ রানের ইনিংসে চ্যাম্পিয়ন হয় কুমিল্লা
ছবি: প্রথম আলো
প্রশ্ন:

ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে খেলোয়াড়দের নিয়ে কাজ করার খুব বেশি সময় কোচরা পান না। তা ছাড়া খুশদিলের ব্যাপারে যেটা বললেন, অনেকের সম্পর্কে হয়তো পুরোপুরি ধারণাও থাকে না সব সময়। কোচদের কাজটা কি তাহলে এখানেই বেশি চ্যালেঞ্জিং?

সালাউদ্দিন: অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং। আন্দ্রে রাসেলের কথাই ধরুন। ও দুবাই লিগে ভালো বোলিং করেনি। কিন্তু ফ্র্যাঞ্চাইজি মনে করছিল নাসিম শাহ চলে যাওয়ার পর আমাদের ফাস্ট বোলিং দুর্বল হয়ে গেছে। আমি নাফিসাকে (কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের চেয়ারপারসন নাফিসা কামাল) বলি, আমি আগে রাসেলকে দেখি। যদি মনে হয় ওকে দিয়ে ৪ ওভার বোলিং করানো যাবে, আর ফাস্ট বোলার আনব না। তো প্রথম দিন দেখার পরই মনে হলো আমাদের উইকেটে রাসেল ভালো করবে। একইভাবে নাফিসা যখন বলল খুশদিলকে নিয়েছে, আমি বললাম আমি তো অলরাউন্ডার নিতে চাচ্ছি! আসলে ও যে বোলিংও করে, সেটা আমি জানতাম না। খুশদিল পিএসএলে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারিদের তালিকায় ছয় নম্বরে।

প্রশ্ন:

স্থানীয় ক্রিকেটারদের মধ্যে নতুন কোনো টি–টোয়েন্টি প্রতিভা কি খুঁজে পেলেন এবার?

সালাউদ্দিন: উইকেট ভালো ছিল, ব্যাটসম্যানরা রান করেছে। কিন্তু ব্যাটসম্যানদের জন্য চ্যালেঞ্জ কম ছিল। অন্যান্য বিপিএলে ভালো ভালো বোলার এসেছে। এবার ভালো বিদেশি বোলার না আসায় বা এলেও বেশি ম্যাচ না খেলায় সেই চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়তে হয়নি ব্যাটসম্যানদের। তবে এটা ভালো দিক, স্থানীয় খেলোয়াড়েরা এবার ভালো খেলেছে। যতটুকু সুযোগ পেয়েছে, কাজে লাগিয়েছে।

কুমিল্লার হয়ে লিটনও ফিফটি তুলে নেন ফাইনালে
ছবি: প্রথম আলো
প্রশ্ন:

চারবার ফাইনালে উঠে চারবারই চ্যাম্পিয়ন। সবার মুখে আপনাদের প্রশংসা। তারপরও আপনার কি মনে হয় এমন কোনো জায়গা আছে, যেখানে ফ্র্যাঞ্চাইজি হিসেবে ভিক্টোরিয়ানসেরও উন্নতির সুযোগ আছে?

সালাউদ্দিন: উন্নতির সুযোগ তো সব সময়ই থাকে। এটা ঠিক যে আমাদের ফ্র্যাঞ্চাইজি টাকা খরচ করতে পিছপা হয় না। দলের ভালোর জন্য যা লাগে, তারা সেটাই করে। নাফিসার কাছে কোনো খেলোয়াড় চেয়ে পাইনি, এ রকম আজ পর্যন্ত হয়নি। ভালো ফল পেতে এ রকমই দরকার। তবে যেটা বললাম, অনুশীলনের সুযোগ–সুবিধা; এখানে আমাদেরও উন্নতির জায়গা আছে। আমরা উদীয়মান কোনো ক্রিকেটারকে দলের সঙ্গে রাখতে পারি। এটা অবশ্য বিসিবিই ঠিক করে দিতে পারে যে সব দলকে একজন করে উদীয়মান খেলোয়াড় রাখতে হবে, পাকিস্তানে যেটা হচ্ছে বলে জানি।

প্রশ্ন:

শেষ প্রশ্ন, পঞ্চম শিরোপা জেতার পরিকল্পনা কি এখনই শুরু করে দিয়েছেন?

সালাউদ্দিন: একই কথা বলব, কিছু বিষয়ে আমরা এখনো অনিশ্চিত। শুনতে পাচ্ছি আগামীবার পুরোনো খেলোয়াড় ধরে রাখার নিয়ম থাকবে। কিন্তু এটার লিখিত কিছু নেই এখনো। তাহলে আমি কীভাবে পরিকল্পনা করব? আমি জানলে তখনই না পুরোনো কাকে কাকে রাখব ঠিক করে তাদের নিয়ে পরিকল্পনা করতাম! এখন তো জানি না কী হবে। কিছু বিদেশি খেলোয়াড়ের সঙ্গে আমরা প্রাথমিক কথা বলেছি। কিন্তু তাদেরও তো বলতে পারছি না পরের বছর বিপিএল কখন হবে!