করতেন পাখি শিকার, এখন তিনি ‘এশিয়া সেরা’ তিরন্দাজ

এশিয়া কাপ আর্চারির দ্বিতীয় লেগে পুরুষদের রিকার্ভ ব্যক্তিগত ইভেন্টে গত শুক্রবার সোনা জিতেছেন আবদুর রহমান আলিফ। রোমান সানার পর দ্বিতীয় আর্চার হিসেবে এশিয়া কাপ থেকে এমন সাফল্য পেয়ে রোমাঞ্চিত এই অ্যাথলেট। গতকাল প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আলিফ বলেছেন আর্চারিতে আসার গল্প এবং এই খেলাকে ঘিরে তাঁর আশা ও সম্ভাবনার কথা।

প্রশ্ন:

নবমবারের চেষ্টায় আন্তর্জতিক কোনো প্রতিযোগিতার পোডিয়ামে দাঁড়ালেন, অনূভূতিটা কেমন ছিল?

আলিফ: এটা অনেকটা স্বপ্নের মতো। মন থেকে চাইতাম, একদিন বাংলাদেশের হয়ে বিদেশের মাটিতে সোনা জিতব। আর সেই সোনার ভাগিদার আমি ছাড়া আর কেউ হবে না। সবাই শুধু দেখবে আর উৎসাহ দিয়ে বলবে, ‘আলিফ, তুমি এগিয়ে যাও।’ এশিয়া কাপ দিয়ে সেই স্বপ্নটা পূরণ হয়েছে। বিদেশের মাটিতে প্রথমবার নিজ দেশের জাতীয় সংগীত বাজাতে পেরেছি। এটা সত্যি অনেক বড় পাওয়া।

প্রশ্ন:

আর্চারিতে কীভাবে আসা?

আলিফ: বিকেএসপিতে আমি ফুটবলে ভর্তি হতে এসেছিলাম। ট্রায়ালে উত্তীর্ণও হয়ে যাই। সে সময় বাবার এক বন্ধু বলেছিলেন, ওকে বলেন আর্চারিতেও একটা ট্রায়াল দিতে। দিলে হয়তো ভালো করবে, আর আর্চারির ভবিষ্যৎও ভালো। তখন প্রায়ই আমি গুলতি দিয়ে পাখি শিকার করতাম, সেটা খুব উপভোগও করতাম। এরপর বাবাও বললেন আর্চারিতে ট্রায়াল দিতে, গেলাম ট্রায়ালে, হয়েও গেল! নূরে আলম স্যার (বিকেএসপির কোচ) দেখে পছন্দ করে ফেলেন। হয়তো উনি ভেবেছিলেন, এই ছেলেটাকে দিয়ে ভবিষ্যতে ভালো কিছু হবে, দেশের জন্য কিছু করতে পারবে। সেই যে ২০১৮ সালে যাত্রা শুরু, এখনো বিকেএসপিতেই আছি, ২৬ জুন এইচএসসি পরীক্ষায় বসব।

প্রশ্ন:

তাহলে নিশ্চয়ই আর্চার না হলে ফুটবলার হতেন?

আলিফ: হ্যাঁ, ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন তো শৈশব থেকেই ছিল। আর্চার না হলে অবশ্যই ফুটবলার হতাম।

সিঙ্গাপুরে এশিয়া কাপ আর্চারির দ্বিতীয় লেগে পুরুষদের রিকার্ভ ব্যক্তিগত ইভেন্টে সোনা জিতে দেশের পতাকা উড়িয়েছেন আলিফ।
বাংলাদেশ আর্চারি ফেডারেশন
প্রশ্ন:

আর্চারিতে আসার ক্ষেত্রে মা–বাবার কতটা সমর্থন ছিল?

আলিফ: আমার বাড়ি পাবনায়। পরিবারের কেউ খেলাধুলার সঙ্গে নেই। পরিবার কেন, বংশেও কেউ নেই। সে জন্য বাবা সব সময় চাইতেন, আমি শিক্ষিত হই, পড়াশোনা নিয়ে থাকি। খেলাধুলায় আমার আগ্রহ দেখে একদিন মা বাবাকে বললেন, ‘আলিফ যেহেতু চাইছে, ওকে একবার সুযোগ দিন, দেখেন না কী করে।’ এরপরই বিকেএসপিতে ট্রায়ালে অংশ নিই। সেখানে ভালো করার পর ধীরে ধীরে সবকিছু স্বাভাবিক হতে থাকে। একটা সময় তাঁদেরও আর্চারিটা ভালো লেগে যায়।

প্রশ্ন:

প্রথম সফলতা পাওয়ার পর নিজের কাছে কেমন লেগেছিল?

আলিফ: ২০১৮ সালে বিকেএসপিতে ভর্তি হওয়ার পর কঠোর পরিশ্রম করা শুরু করি। ২০২১ সালে জাতীয় আর্চারিতে তিনটি সোনা জিতেছিলাম। যেটা আমার প্রথম কোনো সাফল্য। এরপর শুধু এগিয়ে চলা।

প্রশ্ন:

রোমান সানাকে দিয়ে বাংলাদেশে আর্চারি অনেকে চিনেছেন, তাঁর খেলা কেমন লাগত?

আলিফ: দেখুন, আমরা যারা আর্চারি শুরু করেছিলাম, বেশির ভাগই রোমান ভাইয়ের খেলা দেখে বড় হয়েছি। ওনাকে দেখে মনের মধ্যে প্রথম জেদ চেপেছিল, উনি পদক পেয়েছেন বিশ্বকাপে, উনি এসএ গেমসে ভালো করেছেন; আমি কেন পারব না। এমন একটা জেদ কাজ করত। উনি অলিম্পিকে কোয়ালিফাই করতে পেরেছেন, একদিন আমরাও পারব।

দেশের হয়ে যা কেউ করেনি, তা–ই আলিফ করতে চান।
আলিফের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে
প্রশ্ন:

রোমান তো আর্চারি ছেড়ে দিলেন। এখন দায়িত্ব আপনাদের। কী ভাবছেন দেশের আর্চারি নিয়ে?

আলিফ: আর্চারি নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন রয়েছে। আমি চাই, একের পর এক টুর্নামেন্টে ভালো করতে। এখন পর্যন্ত দেশের হয়ে কেউ যা করতে পারেননি, আমি সেটা করে দেখাতে চাই।

প্রশ্ন:

সেটা কি অলিম্পিকে পদক জেতা?

আলিফ: না, অলিম্পিক আসতে এখনো তিন বছর বাকি। তিন বছরে কী হবে, কেউ বলতে পারে না। আমার কাজ হলো নিজেকে তৈরি করা। সামনে অনেকগুলো প্রতিযোগিতা আছে। যদি বাংলাদেশ সেগুলোতে অংশ নেয়, আর আমিও সুযোগ পাই; তাহলে চেষ্টা করব ভালো করার। এখন এশিয়া কাপে সোনা জিতলাম, এরপর বিশ্বকাপ, এরপর ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ, তারপর অলিম্পিকের চিন্তা।