সাক্ষাৎকারে দাবাড়ু নোশিন আনজুম

‘এখনো ইউরোপে খেলতে না পারা বড় দুঃখ’

রানী হামীদের পর লম্বা সময় ধরে খেলার মতো তেমন দাবড়ু আসছে না। তবে নোশিন আনজুমের আশা অনেক বছর তিনি খেলবেন। এক রাউন্ড বাকি থাকতেই বুধবার ঢাকায় জাতীয় মহিলা দাবার শিরোপা ধরে রেখেছেন এই মহিলা ফিদে মাস্টার। পরদিন শেষ রাউন্ডেও ছিলেন অপরাজিত। ১১ ম্যাচে পেয়েছেন ৯ পয়েন্ট। কতটা কঠিন ছিল শিরোপা ধরে রাখা? বাংলাদেশের নারী দাবার অবস্থাই-বা এখন কেমন। এসব নিয়েই প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন নোশিন আনজুম

প্রশ্ন:

জাতীয় মহিলা দাবায় পরপর দুবার চ্যম্পিয়ন হবেন আত্মবিশ্বাসী ছিলেন?

নোশিন আনজুম: শুরুতে একটু নার্ভাস ছিলাম। তবে ৭-৮ রাউন্ড পর আত্মবিশ্বাসী হয়ে যাই। গতবারের চেয়ে এবার লড়াইটা কঠিন ছিল। অনেক তরুণ খেলোয়াড় এবার সুযোগ পেয়েছে বাছাই পর্ব থেকে। এ বছর সেপ্টেম্বরে হাঙ্গেরিতে অলিম্পিয়াড থাকায় এবারের লড়াইটাও ছিল বেশ গুরুত্বপূর্ণ ।

প্রশ্ন:

আপনিসহ জাতীয় মহিলা দাবার শীর্ষ ৫ অলিম্পিয়াডে সুযোগ পেয়েছেন। অনুভূতি কেমন?

নোশিন: খুবই ভালো। ২০২২ সালে চেন্নাইয়ে প্রথম দাবা অলম্পিয়াড খেলি। এবার দ্বিতীয়বার খেলব।

প্রশ্ন:

এবারের জাতীয় মহিলা দাবায় আপনি অপরাজিত ছিলেন। শক্ত প্রতিপক্ষ ছিল না?

নোশিন: ছিল। যেমন নীলাভা চৌধুরী, ওয়াদিফা আহমদ ও ইশরাত জাহানের সঙ্গে ড্র করেছি। জিতেছি রানী, শিরিন আন্টি, ওয়ালিজা, আলোদের সঙ্গে। এবার আমি জাতীয় মহিলা দাবার আগে মাহমুদা মলি আন্টির এলিগেন্ট চেস একাডেমিতে শক্তিশালী খেলোয়াড়দের সঙ্গে একটা টুনামেন্ট খেলেছি, সেটা কাজে এসেছে।

প্রশ্ন:

আশি বছরের রানী হামিদের এখন শেষ বেলা। শিরিন নিয়মিত খেলেন না। লিজা, নীপারা বিদেশে। এক সময় জাতীয় মহিলা দাবা অনেক প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ হতো। এখন কী একটু সহজ?

নোশিন: সহজ নয়। নাজরানা, জাকিয়া, তনিমা আন্টিরা তো খেলেছেন এবং কোয়ালিফাইংয়ে বাদ পড়েন।

প্রশ্ন:

বাংলাদেশের নারী দাবাড়ুদের রেটিং এত কম কেন?

নোশিন: সমস্যা হলো মেয়েরা ওপেন ( ছেলে ও মেয়ে) টুর্নামেন্টে খেলতে চায় না। না খেললে রেটিং বাড়বে কীভাবে? বর্তমান সময়ে আমাদের মেয়েদের রেটিং ২০০০ এর নিচে। অবস্থা খারাপই বলব। আমার এখন ২০৫৬। এই টুর্নামেন্টে ২৮ বেড়েছে। এখন মেয়েদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রেটিং আমারই। একবার ২১০০ পেরিয়েছিলাম। বেশি বেশি খেলে আমাদের রেটিং বাড়াতে হবে। না হলে পিছিয়ে পড়ে থাকতে হবে।

দাবার বোর্ডে মগ্ন নোশিন আনজুম
সংগৃহীত
প্রশ্ন:

রেটিং বাড়াতে ভালো কোচিং কী পান?

নোশিন: না, সেভাবে কোচিং কোথায়! করোনার আগে ধানমন্ডিতে এলিগেন্ট চেস একাডেমিতে ক্লাস করতাম। এখন আর সেটা সেই। ফলে নিজের চেষ্টাতেই এগোচ্ছি। এখন আসলে অনলাইনেই সব পাওয়া যায়। ফলে অনলাইন থেকে যতটুকু নেওয়া যায় নিচ্ছি।

প্রশ্ন:

বাইরে খেলতে অনেক টাকা লাগে। কিভাবে তা জোগাড় হয়?

নোশিন: কষ্ট হয়। ফেডারেশন কিছু সহায়তা করে। তবে কখনো কখনো ফেডারেশনের ফান্ড থাকে না। ফলে সমস্যায় পড়তে হয়, চিন্তা বাড়ে। আম্মু ওদিক থেকে কিছু স্পনসর জোগাড় করেন। তবে সেটা যথেষ্ঠ নয়। আমার বেশির ভাগ গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্ট মিস হয়েছে স্পনসরের অভাবে। সে টুর্নামেন্টগুলো খেলতে পারলে অনেক ভালো হতো। ২০২০ থেকে আমি বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে আছি। স্যালারি আস্তে আস্তে বেড়েছে। ওখান থেকে একটা সহায়তা পাই।

প্রশ্ন:

বাংলাদেশে আজও কেউ মহিলা গ্র্যান্ডমাস্টার হতে পারেনি। সেই স্বপ্ন দেখেন?

নোশিন: অবশ্যই দেখি। এ জন্য দেশেরে অনেক বাইরে খেলতে হবে। গতবছর দেশেরে বাইরে তিনটি টুর্নামেন্ট খেলেছি। দেশে বেশি টুর্নামেন্ট হচ্ছে না। সুযোগ সুবিধা পেলে মহিলা গ্র্যান্ডমাস্টার হতে পারব আশা করি। ইউরোপে লম্বা সময় খেললে এটা অসম্ভব নয়। ভারতীয়রা কিন্তু ইউরোপে অনেক দিন থেকে টুর্নামেন্ট খেলছে। ফলে তারা দ্রুত এগোচ্ছে। ইউরোপে খেলত না পারা আমাদের সামনে অনেক বড় সমস্যা। আমি এখন পর্যন্ত দশটি দেশে খেলেছি। কিন্তু এখনো ইউরোপে একটি টুর্নামেন্টেও খেলতে না পারা বড় দুঃখ। এবার আশা করি হাঙ্গেরিতে অলিম্পিয়াডে খেলতে যাব।

প্রশ্ন:

দাবা বোর্ড আপনার প্রিয় ঘুটি কী? পছন্দের ওপেনিং কী?

নোশিন: নাইট (ঘোড়া)। এর মুভ ভালো। আমি শুরুতে ই-৪, ই-৫ খেলি। রুই লোপেজ ওপেনিং পছন্দ।

টানা দ্বিতীয়বার জাতীয় মহিলা দাবায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন নোশিন আনজুম
সংগৃহীত

প্রথম আলো :

দাবা ছাড়া প্রিয় খেলা কী?

নোশিন: ব্যাডমিন্টন ভালো আগে। ২০২২ সালে অলিম্পিয়াডে গিয়ে হোটেলের নিচে আর্চারি খেলেছিলাম। এই খেলাটা খুব ভালো লেগেছে। দাবাড়ু না হলে অন্য কোনো খেলায় আসতাম। কারাতে বা আর্চারি করতাম। আম্মুর ইচ্ছা ছিল আমি যেন খেলোয়াড় হই। সেটা হতে পেরে আমি খুশি।

প্রশ্ন:

দাবাড়ুরা শান্ত থাকেন। ছোট বেলায় আপনি কেমন ছিলেন?

নোশিন: খুব চঞ্চল। নরসিংদতে জন্মের পর তৃতীয় শ্রণিতে পড়ার সময় ঢাকায় আসা। ক্লাস ফোরে থাকতে প্রথম দাবা ফেডারেশনে যাওয়া। তখন আসলে তেমন কিছুই বুঝতাম না। তারপর অনেক কষ্ট করে ধীরে ধীরে সামনে এগিয়েছি। ভিকারুন নিসা নূন স্কুল থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে খেলোয়াড় কোটায় ভর্তির আবেদন করেছি। দেখা যাক কী হয়।

প্রশ্ন:

দিনের অনেকটা সময় দাবা নিয়েই থাকেন। অবসরে কী করেন?

নোশিন: অবসর আর তেমন কই! তারপরও যতটুকু পাই, গান গুনি, বই পড়ি। জাফর ইকবালের স্যারের বই পড়তে ভালো লাগে।