কাবাডি

‘আমাকে হেয় করে কার কী লাভ’

ক্রীড়াঙ্গনে সংস্কারের অংশ হিসেবে ক্রীড়া ফেডারেশনগুলোর কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন অ্যাডহক কমিটি করা হচ্ছে। এরই মধ্যে ঘোষিত হয়েছে ৯টি ফেডারেশনের নতুন কমিটি। এই কমিটি কী সংস্কার করবে, কেন করবে—এসব জানতেই ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদকদের এই ধারাবাহিক সাক্ষাৎকার। আজ দ্বিতীয় দিনে প্রথম আলোর মুখোমুখি কাবাডি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এস এম নেওয়াজ সোহাগ। 

প্রশ্ন:

অপেক্ষা শেষে কাবাডির অ্যাডহক কমিটি হয়েছে। কমিটির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম পাড়ায় আপনার বিরুদ্ধে দেদার পোস্টার পড়েছে। তাহলে সংস্কারটা কী হলো?

নেওয়াজ সোহাগ: অ্যাডহক কমিটিতে জায়গা না পেয়ে দু-একজন এটা করেছে। এটা স্রেফ নোংরামি। ব্যবসার কাজে জার্মানি এসে পোস্টার-কাণ্ডের কথা শুনে খুবই ব্যথিত হয়েছি। আমাকে হেয় করে কার কী লাভ। কাবাডি আমার ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়।

প্রশ্ন:

অনেকে বলছেন, আপনি ২০১৭ সালে কাবাডিতে উড়ে এসে জুড়ে বসেছেন। তার আগে আপনাকে কাবাডির কেউ চিনতই না। এমন উত্থান কীভাবে?

নেওয়াজ: ২০১৭ সালের মার্চে তৎকালীন আইজিপি ও কাবাডি ফেডারেশনের সভাপতি শহীদুল হকের সময় কাবাডিতে আসি। শুরুতে কাবাডির অফিশিয়াল পার্টনার হই। আমার স্পোর্টস মার্কেটিং কোম্পানি ক্রিকেটে দেশ-বিদেশে বিশ্বকাপসহ অনেক ইভেন্ট করেছে। প্রায় ১৫ বছর ধরে ক্রিকেটের দ্বিতীয় বিভাগের দল ধানমন্ডি প্রগতি সংঘের সহসভাপতি আমি। ২০০৯ থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ডিএসএতে সম্পৃক্ত ছিলাম। সংগঠক হিসেবে বিভিন্ন দেশে কাজ করি। ২০২১ সালে কাবাডি ফেডারেশনের যুগ্ম সম্পাদক হই, নিশ্চয়ই আমার যোগ্যতায় হয়েছি।

প্রশ্ন:

কিন্তু এই যে এত আলোচনা, এত সংস্কারের অপেক্ষা...দিন শেষে আপনাকে সাধারণ সম্পাদক মানতে পারছেন না সাবেক খেলোয়াড়সহ অনেকে।

নেওয়াজ: সেটা যার যার দৃষ্টিভঙ্গি। আমি কাজের মানুষ। কাবাডির উপকার ছাড়া অপকার করিনি। কাবাডির বাজারমূল্য বাড়িয়েছি। একটা ঘরোয়া টুর্নামেন্টের মূল্য ২ লাখ থেকে ১০ লাখ করেছি। এতে কাবাডিরই লাভ হয়েছে।

কাবাডি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এস এম নেওয়াজ সোহাগ
প্রশ্ন:

কারও কারও অভিযোগ, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট থেকে প্রতিবছর কাবাডি ফেডারেশনকে আপনার নাকি ৫৩ লাখ টাকা দেওয়ার কথা ছিল। ৫ বছরে অঙ্কটা হয় ২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। এক টাকাও নাকি দেননি?

নেওয়াজ: এটা ঠিক নয়। এ নিয়ে কোনো চুক্তিও হয়নি ফেডারেশনের সঙ্গে। কথা ছিল, ফেডারেশন ৫ বছরে (জুলাই ২০১৭— জুন ২০২২) ৫৫-৬০টি ইভেন্ট দেবে আমাকে, সেগুলো আয়োজন করে দেব। বছরে সব টুর্নামেন্টের আয়োজন খরচ নির্ধারণ করা হয় ৫০-৫৫ লাখ টাকা। স্পনসর না পেলে নিজের টাকায় টুর্নামেন্ট করেছি।

প্রশ্ন:

কী বলেন, সেটা কেউ করে?

নেওয়াজ: কাবাডিতে আমি লাভ করতে আসিনি। ২০১৭ থেকে এ পর্যন্ত ৩১টি ইভেন্ট করেছি। সব খরচ বাদে ফেডারেশনে প্রায় ৮ কোটি টাকা জমা হয়েছে। বকেয়া আছে ১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা, আমার কোম্পানি প্রায় ৯০ লাখ টাকা পাবে ফেডারেশনের কাছে। ফেডারেশনকে যদি আমার বছরে ৫৩ লাখ টাকা দেওয়ার কথাই থাকত, তাহলে ৮ কোটির মধ্যে সাড়ে ৫ কোটি টাকা তো আমার হওয়ার কথা।

প্রশ্ন:

গত কয়েক বছরে ঘটা করে চারটি বঙ্গবন্ধু কাপ, আইজিপি কাপ যুব কাবাডি হয়েছে জাঁকজমকপূর্ণভাবে। কিন্তু বাহ্যিক চাকচিক্যই সার। ভারতীয় কোচ, ভারতে প্রশিক্ষণ...সবকিছুর ফলই শূন্য। গত এশিয়াডে ছেলে-মেয়ে দুই বিভাগেই ভরাডুবি...

নেওয়াজ: আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ফল না আসা আমাদের ব্যর্থতাই। চেষ্টার অবশ্য ত্রুটি করিনি। আসলে কাবাডির উন্নয়নে অর্থ আর প্রতিভা দরকার। প্রতিভা অন্বেষণের টাকা আছে এখন। ২০১৭ সালে প্রায় দুই লাখ টাকা ছিল কাবাডির তহবিলে, এখন সেটি কয়েক শ গুণ বেড়েছে সবার চেষ্টায়।

প্রশ্ন:

লিগ, বিজয়, স্বাধীনতা দিবস, সার্ভিসেস কাবাডি করেছেন আপনারা। কিন্তু ছেলেদের জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ ৮ বছর ধরে বাক্সবন্দী। মেয়েদের ৮ বছরে মাত্র একবার। আসল জায়গাতেই নজর দেননি কেন?

নেওযাজ: আইজিপি কাপ, বঙ্গবন্ধু কাপ করে আর্থিক লাভ হয়েছে ফেডারেশনের। সেটার দরকারও ছিল। এখন কাবাডির উন্নয়নে খরচ করার মতো কিছু তহবিল হয়েছে। সামনে পুরুষ-মহিলা জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ, স্কুল, বিচ কাবাডিসহ সবই করব। প্রতিভা খুঁজে ৪ বছরের জন্য অনুশীলনে রাখার ইচ্ছা আছে। একটা প্রো-কাবাডি লিগ করারও স্বপ্ন দেখছি। দু–তিন দিনের মধ্যে দেশে ফিরে প্রথম সভা করে পরিকল্পনা ঠিক করব।

প্রশ্ন:

কাবাডিকে বলা হতো ‘পুলিশ ফেডারেশন’। সভাপতি পুলিশপ্রধান, সাধারণ সম্পাদক আর একজন যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। অ্যাডহক কমিটিতে সভাপতিও পুলিশপ্রধানই। আপনিও পদোন্নতি পেলেন। দিন শেষে এটা কেমন সংস্কার?

নেওয়াজ: আইজিপি দেয় সরকার। তবে কাবাডির যে কমিটি হয়েছে, ভালো কিছুই হবে। আমাদের ওপর আস্থা রাখুন।

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন: মাসুদ আলম