‘অ্যাথলেট না হলে এখন হয়তো ইতালি থাকতাম’

টানা তৃতীয়বার দেশের দ্রুততম মানব বাংলাদেশ নৌবাহিনীর মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন। আজ বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে
ছবি: তানভীর আহাম্মেদ

জাতীয় অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপ ঘিরে অতীতের সেই আকর্ষণ নেই অনেক দিন। যেটুকু অবশিষ্ট আছে, তা ১০০ মিটার স্প্রিন্টেই। আজ বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ৪৪তম জাতীয় অ্যাথলেটিকসেও ব্যতিক্রম হয়নি। টানা তৃতীয়বার দেশের দ্রুততম মানব হয়েছেন বাংলাদেশ নৌবাহিনীর মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন। টানা ১১ বার দ্রুততম মানবীর আসন অলংকৃত করেছেন একই দলের শিরিন আক্তার।

১০০ মিটার জয়ের পর দুজনকে নিয়ে সংবাদমাধ্যমের হুড়োহুড়ির চলল অনেকটা সময়। একজন ছবি তুলতে ডাকছেন তো আরেকজন সাক্ষাৎকার নিতে। ওদিকে কর্মকর্তা এসে দাঁড়িয়ে আছেন দুজনেরই ঘাড়ের ওপর। এরপরও আলাদাভাবে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন দ্রুততম মানব ইসমাইল হোসেন

প্রশ্ন:

দ্রুততম মানবের খেতাব ধরে রাখার অনুভূতি কেমন?

দারুণ লাগছে। ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। করোনায় ভালোভাবে অনুশীলন করতে পারিনি। অন্যরাও পারেনি। তাই ফল কোন দিকে যাবে বুঝে উঠতে পারছিলাম না। তবে আত্মবিশ্বাস ছিল ভালো করব। শেষ পর্যন্ত শিরোপা ধরে রাখতে পেরে ভীষণ আনন্দ লাগছে।

প্রশ্ন :

বাংলাদেশের অ্যাথলেটিকসে রুগণ অবস্থা চলছে অনেক বছর। এই সময়ে অ্যাথলেটিকসে এসেছেন আপনি। এখানে তেমন প্রচার–প্রচারণা বা অর্থ নেই। কেন এলেন?

ভাগ্যই আসলে খেলায় টেনে নিয়ে এসেছে আমাকে। তবে শুরুতে আমি লংজাম্প করতাম। কিন্তু লংজাম্পে প্রচার–প্রচারণা নেই। তাই স্প্রিন্টে চলে এলাম।

প্রশ্ন :

স্প্রিন্টে আপনার আগে একটানা সাতবার চ্যাম্পিয়ন ছিলেন আপনারই দলের মেজবাহ আহমেদ। সেই মেজবাহ এখন দৃশ্যপটেই নেই। আপনি লম্বা সময় টিকে থাকতে পারবেন?

চেষ্টা তো করবই টিকে থাকতে। তবে শিরোপা ধরে রাখা সহজ নয়। মেজবাহ আজ দৌড়াননি। হয়তো সামনে বাংলাদেশ গেমস হলে দৌড়াবেন এবং আমাকে চ্যালেঞ্জ দেবেন।

প্রশ্ন :

অ্যাথলেট হলেন কীভাবে?

কুমিল্লার তিতাসে আমাদের বাড়ি। এলাকায় খেলাধুলা করতাম। এক বড় ভাই ছিলেন, তাঁর আগ্রহে খেলায় আসি। একজন শিক্ষকের মাধ্যমে যোগাযোগ হয় কুমিল্লা জেলা ক্রীড়া সংস্থায়। ওই সংস্থার হয়ে ঢাকায় জাতীয় জুনিয়র প্রতিযোগিতায় এসে লংজাম্পে ভালো করি। ২০১৩ সালে বাংলাদেশ গেমসে ভালো ফল হলে নৌবাহিনীতে আমার চাকরি হয়ে যায়।

টানা তৃতীয়বার দেশের দ্রুততম মানব হয়েছেন ইসমাইল হোসেন। টানা ১১ বার দ্রুততম মানবী হয়েছেন শিরিন আক্তার।
ছবি: প্রথম আলো

প্রশ্ন :

অ্যাথলেট না হলে কী হতেন?

কী যে হতে চেয়েছিলাম...। ক্রিকেটার হতে চেয়েছিলাম (হাসি)। এলাকায় ক্রিকেটও খেলতাম। কত দূর যেতে পারতাম জানি না। তবে ক্রিকেটের প্রতি একটা আকর্ষণ তো ছিলই।

প্রশ্ন :

কিন্তু হয়ে গেলেন অ্যাথলেট...

হ্যাঁ, অ্যাথলেট। তবে অ্যাথলেট না হলে এখন হয়তো ইতালি থাকতাম। আমাদের এলাকার লোকজন বিদেশে থাকে বেশি। আমার ঘরের লোকও একজন আছেন বিদেশে। মধ্যবিত্ত পরিবার আমাদের। অত শিক্ষিত নয়। তাই পরিকল্পনা করে কিছু হয়নি জীবনে। দেখা গেছে, পূর্বপুরুষেরা যে পথে গেছেন, সে পথে আমিও যেতাম (বিদেশে পাড়ি দেওয়া)।

প্রশ্ন :

কিন্তু ইতালি কেন?

কারণ, আমার ভগ্নিপতি থাকেন ওখানে। তাঁর কাছেই চলে যেতাম। আমার ভাই থাকেন সৌদি আরব। হয়তো সৌদি আরবও যেতে পারতাম। তবে মনে হয় ইতালিতেই যাওয়া হতো। সৌদির ব্যাপারে আমার আগ্রহ ছিল না।

প্রশ্ন :

অ্যাথলেট যখন হয়েই গেলেন, আপনার আগামীর লক্ষ্য কী?

দেশের জন্য ভালো কিছু করা। গত এসএ গেমসে আমি দৌড়ে ১০০ মিটারে পঞ্চম হয়েছিলাম। গেমসে ১০০ মিটারে আমি দৌড়াই ১০.৭৬ সেকেন্ডে, চ্যাম্পিয়ন মালদ্বীপের হাসানের টাইমিং ১০.৪৯ সেকেন্ডে। কাজেই খুব বেশি পার্থক্য নেই। দীর্ঘ মেয়াদে প্রশিক্ষণ পেলে ভালা করব এবং আমার আপাতত লক্ষ্য বিদেশে প্রশিক্ষণ নেওয়া।

প্রশ্ন :

কিন্তু বাংলাদেশের অ্যাথলেটরা তো বিদেশে তেমন প্রশিক্ষণ পান না। আপনি আশাবাদী হবেন কীভাবে? তা ছাড়া আপনার বর্তমান টাইমিং কতটা আশা পূরণ করার মতো?

আজ হাতঘড়িতে ১০০ মিটার স্প্রিন্টে আমার টাইমিং ১০.৫৫। খারাপ নয়। প্রশিক্ষণ পেলে আরও ভালো করা সম্ভব। করোনা না হলে হয়তো এত দিনে বিদেশে প্রশিক্ষণ পেতাম। শুধু বিদেশে প্রশিক্ষণ নয়, ঘরোয়া নিয়মিত খেলাও দরকার। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে এসএ গেমস, সেখান থেকে এসে ন্যাশনাল পাই। কিন্তু এরপর করোনায় সব বন্ধ হয়ে যায়। আমাদের আসলে অনেক বেশি খেলা দরকার।

প্রশ্ন :

এই যে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের ভাঙাচোরা টার্ফের দৌড়ালেন, কেমন লেগেছে?

এই টার্ফটা ভালো নয়। দৌড়ানো অনেক কঠিন। আশা করি, ভাঙাচোরা টার্ফটা বদল হবে। আমরা নতুন টার্ফ পাব।

প্রশ্ন :

আপনার প্রিয় খেলোয়াড় কে?

উসাইন বোল্ট। তাঁর দৌড় দেখতে সব সময়ই ভালো লাগত।